অর্ধাহারে দিন কাটে বৃদ্ধ মৌলবির

আজ ৯০ বছরেও সোজা হয়ে হাঁটেন মৌলবি সলিমুদ্দিন। শনিবার সকালে কেশরাইলের বাড়ি থেকে বালুরঘাটের মসজিদে এসে ইদের নমাজ পড়েন।

Advertisement

অনুপকুমার মোহান্ত

বালুরঘাট শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০১৮ ০২:১৪
Share:

অপেক্ষায়: এখনও কোনও ভাতাই পাননি বৃদ্ধ। -নিজস্ব চিত্র

বছর দশেক আগেও প্রায় ৩০ কিলোমিটার পথ সাইকেল চালিয়ে প্রতি শুক্রবার আসতেন তিনি। তার পরে বালুরঘাট সংশোধনাগারের বন্দিদের নমাজ পড়াতেন। ফের ৩০ কিলোমিটার পথে সাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফিরতেন মৌলবি মহম্মদ সলিমুদ্দিন মণ্ডল। দক্ষিণ দিনাজপুরের কুমারগঞ্জ থানার কেশরাইল এলাকার বাসিন্দা সলিমুদ্দিন। তাঁর আশা ছিল, একদিন জেল কর্তৃপক্ষ ওই কাজের জন্য তাঁকে ভদ্রস্থ ভাতা দেবেন। বহুবার তৎকালীন কারামন্ত্রী, বালুরঘাটের বাসিন্দা বিশ্বনাথ চৌধুরীর দ্বারস্থ হয়েছিলেন তিনি। তাঁর কথায়, আশ্বাস ছাড়া কিছু মেলেনি। বিপিএল কার্ড থাকলেও পাননি রেশন। বার্ধক্য ভাতা, মৌলবি ভাতা, আবাস যোজনায় ঘর— কিছুই মেলেনি।

Advertisement

আজ ৯০ বছরেও সোজা হয়ে হাঁটেন মৌলবি সলিমুদ্দিন। শনিবার সকালে কেশরাইলের বাড়ি থেকে বালুরঘাটের মসজিদে এসে ইদের নমাজ পড়েন। তাঁর কথায়, ‘‘প্রচণ্ড গরমের জন্যে সাইকেল চালিয়ে আসতে পারিনি। বাস ধরেই এসেছি। ১৯৮০ সাল থেকে ২০০৭ সাল— টানা সাতাশ বছর বালুরঘাট জেলে মাসে চার বার বন্দিদের নমাজ পড়াতাম। বাসভাড়া বাবদ প্রাপ্য ৬০ টাকায় পাঁচ কেজি চালের বন্দোবস্ত হয়ে যেত। ঐ সময় মৌলবির কাজ করেই কোনও মতে চলত সংসার।’’

তিন ছেলে ভিন রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করেন। ভাঙা কুঁড়েঘরে স্ত্রী আমেনা বিবিকে নিয়ে অর্ধাহারে দিন কাটছে তাঁর। এখনও নিয়ম করে প্রতি শুক্রবার স্থানীয় মসজিদে নমাজ পড়েন, ইদের দিন হাজির হন বিশেষ নমাজ অনুষ্ঠানে। দুঃখের কথা বলতে গিয়ে মোটা কাচের আড়ালে চোখ দুটি তাঁর ছলছল করে ওঠে। বৃদ্ধ বলেন, ‘‘বহুবার ব্লক অফিস থেকে নেতাদের কাছে আবেদন করেও মেলেনি বার্ধক্য ভাতা। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ঘরও পাইনি। বিপিএল কার্ড হাতে নিয়ে ব্লক অফিসে গিয়ে শুনি, তালিকায় নাম নেই। রেশনে সস্তার চাল-গমও মেলে না।’’

Advertisement

বৃদ্ধের স্ত্রী আমিনা বিবি জানান, তাঁদের পাশে কেউ নেই। খুশির ইদে অভাব ঘুচে যাক, এ দিন এই প্রার্থনাই জানান তাঁরা। প্রাক্তন কারামন্ত্রী বিশ্বনাথ চৌধুরী বলেন, ‘‘অতীতে ঠিক কী কারণে সলিমুদ্দিনের ভাতা বৃদ্ধি হয়নি, মনে করতে পারছি না।’’ কুমারগঞ্জের বিডিও দেবদত্ত চক্রবর্তী অবশ্য তাঁদের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘সলিমুদ্দিনের পরিবারকে কী ভাবে সাহায্য করা যায় দেখছি।’’ কুমারগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক তোরাফ হোসেন মণ্ডল বলেন, ‘‘সলিমুদ্দিন সাহেবকে চিনি। উনি দেখা করুন। বার্ধক্য ভাতা দেওয়া যায় কিনা, চেষ্টা করবো।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন