রায়গঞ্জে উদ্ধার ব্যবসায়ীর দেহ

কুলিক পক্ষিনিবাস সংলগ্ন পূর্ত দফতরের অতিথি নিবাসের পাশের ফাঁকা জায়গা থেকে মঙ্গলবার রাত ১১টা নাগাদ রায়গঞ্জের এক ব্যবসায়ীর রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার করল পুলিশ। এ দিন বাসিন্দারা দেহটি পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেন। পুলিশ জানিয়েছে, নিহতের নাম ছোটন সরকার (২৮)। বাড়ি রায়গঞ্জের সুভাষগঞ্জ বাবুপাড়া এলাকায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৬ ০৪:৪৫
Share:

মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পরে শোকে ভেঙে পড়েছে পরিবার। নিজস্ব চিত্র।

কুলিক পক্ষিনিবাস সংলগ্ন পূর্ত দফতরের অতিথি নিবাসের পাশের ফাঁকা জায়গা থেকে মঙ্গলবার রাত ১১টা নাগাদ রায়গঞ্জের এক ব্যবসায়ীর রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার করল পুলিশ। এ দিন বাসিন্দারা দেহটি পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেন। পুলিশ জানিয়েছে, নিহতের নাম ছোটন সরকার (২৮)। বাড়ি রায়গঞ্জের সুভাষগঞ্জ বাবুপাড়া এলাকায়। বাড়ি থেকে প্রায় ২০০ মিটার দূরে সুভাষগঞ্জ গুমটি এলাকায় তাঁর পোশাকের দোকান রয়েছে। ছোটনবাবুর কপালে গুলির আঘাত রয়েছে। মৃতদেহের পাশ থেকে একটি মোবাইল, ২০ টাকা সহ একটি মানিব্যাগ ও একটি পাইপগান উদ্ধার করেছে পুলিশ। মোবাইল ও মানিব্যাগটি ছোটনবাবুর বলে প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে পুলিশ। তবে পাইপগানটি কার ও সেটির গুলিতেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে কী না, সেই বিষয়ে পুলিশ স্পষ্ট নয়।

Advertisement

প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশের সন্দেহ, টাকা পয়সা লেনদেন নিয়ে কোনও গোলমালের জেরে দুষ্কৃতীরা ছোটনবাবুকে গুলি করে খুন করে থাকতে পারে। তবে দুষ্কৃতীরা তাঁকে খুন করে থাকলে কেন তারা আগ্নেয়াস্ত্রটি ফেলে পালাল, সেই বিষয়টিও ভাবাচ্ছে পুলিশকে। তাই এটি আত্মহত্যার ঘটনা কি না তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। পুলিশ নিহতের মোবাইলের কললিস্ট খতিয়ে দেখে তদন্ত শুরু করেছে।

উত্তর দিনাজপুরের পুলিশ সুপার অমিতকুমার ভরত রাঠৌর বলেন, মৃতদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে! ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে না আসা পর্যন্ত ওই ব্যবসায়ীকে খুন করা হয়েছে, নাকি তিনি আত্মহত্যা করেছেন তা স্পষ্টভাবে বলা সম্ভব নয়! তবে প্রাথমিক তদন্তে খুনের সম্ভাবনা মাথায় রেখে তদন্ত শুরু করা হয়েছে!

Advertisement

পুলিশ সূত্রের খবর, ছোটনবাবুদের যৌথ পরিবার। তাঁর বাবা কয়েকবছর আগে মারা গিয়েছেন। মা রত্নাদেবী গৃহবধূ। বাড়িতে ছোটনবাবুর স্ত্রী মৌসুমীদেবী ও এক বছরের একটি কন্যাসন্তান রয়েছে। একই বাড়িতে তাঁর দাদা কাপড়ের ব্যবসায়ী সমীরবাবু ও বৌদি বর্ণালীদেবী থাকেন।

মঙ্গলবার রাত সওয়া ৮টা নাগাদ ছোটনবাবু তাঁর দাদা সমীরবাবুকে দোকানে পোশাক বিক্রির বকেয়া টাকা আনার কথা বলে দোকান থেকে একটি টোটোতে চেপে সোহারই মোড়ের দিকে রওনা হন। এরপরেই তিনি নিখোঁজ হয়ে যান। রাতে পুলিশের তাঁদেরকে ছোটনবাবুর মৃতদেহ উদ্ধারের খবর দেয়। সমীরবাবুর সন্দেহ, তাঁর ভাইকে দুষ্কৃতীরা খুন করে থাকতে পারে। তিনি বলেন, ‘‘কে বা কারা কী কারণে ভাইকে খুন করল, তা বলতে পারব না। পুলিশের কাছে লিখিতভাবে সব জানানো হয়েছে! ভাই খুন হয়ে থাকলে পুলিশ তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিক।’’

প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশের দাবি, প্রায় এক বছর ধরে ছোটনবাবুর ব্যবসা ভাল চলছিল না। পরিচিত বহু ক্রেতার কাছে পোশাক বিক্রির হাজার হাজার টাকা তিনি পেতেন। ব্যবসাকে ঘুরে দাঁড় করানোর জন্য বছরখানেক আগে তিনি স্থানীয় একটি ব্যাঙ্ক ও কয়েকজন ব্যক্তির কাছ থেকে সুদে প্রায় চার লক্ষ টাকা ঋণও নিয়েছিলেন। এদিন পুলিশ তাঁর দোকানের আয়, ব্যয় ও পোশাক বিক্রির নথি সংগ্রহ করেছে। তাই টাকাপয়সা লেনদেন দিয়ে দুষ্কৃতীরা ছোটনবাবুকে খুন করে থাকতে পারে বলে তদন্তকারী পুলিশ অফিসারদের একাংশের সন্দেহ। তবে দুষ্কৃতীরা তাঁকে খুন করে থাকলে তারা আগ্নেয়াস্ত্রটি কেনও ফেলে পালাল ও ওইদিন তিনি বকেয়া টাকা আনার নাম করে কেন পক্ষিনিবাস সংলগ্ন নির্জন জায়গায় গিয়েছিলেন সেই বিষয়ে পুলিশ অন্ধকারে।

ছোটনবাবুর প্রতিবেশীদের দাবি, এলাকায় ভাল ছেলে বলে ছোটনবাবু পরিচিত ছিলেন। কারও সঙ্গে কোনও দিন তাঁকে গোলমালে জড়াতে দেখা যায়নি। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বেশিরভাগ সময়ে তিনি দোকানেই থাকতেন। তবে বছরখানেক ধরে তাঁর ব্যবসা মন্দা চলার কারণে তিনি মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। পুলিশ সূত্রের খবর, ছোটনবাবুর বিরুদ্ধে অতীতে পুলিশের কাছে কোনও অভিযোগও নেই। এই পরিস্থিতিতে তাঁর গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকার ব্যবসায়ীদের একাংশের মধ্যে।

রায়গঞ্জ মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অতনুবন্ধু লাহিড়ী বলেন, ‘‘পুলিশ যতদিন না ছোটনবাবুর অস্বাভাবিক মৃত্যু রহস্যের কিনারা করতে পারছে, ততদিন ব্যবসায়ীদের আতঙ্ক কাটবে না। সংগঠনের তরফে পুলিশের কাছে দ্রুত দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন