রয়্যাল ইন্টারন্যাশনালের ব্যবসা বাড়াতে কোন কোন প্রভাবশালী মদত দিয়েছিলেন তা নিয়ে খোঁজখবর শুরু করেছে সিবিআই। শুক্রবার কোচবিহারের একাধিক জায়গায় তল্লাশি চালায় সিবিআইয়ের ৫০ জনের একটি দল। এদিন রাতেই তাঁদের অধিকংশ জন কলকাতা ফিরলেও কয়েকজন শহর ছাড়েন শনিবার। সিবিআই সূত্রের খবর, আগামী সপ্তাহে ফের তারা কোচবিহারে ফিরবেন। সে সময় রয়্যাল কর্ত্রী অর্চনা সরকার এবং তাঁর বোন নীলিমা দেকে হেফাজতে নেবেন তাঁরা।
সিবিআই সূত্রের খবর, রয়্যালের ব্যবসায় আর কোন কোন মাথা ছিল? কোন কোন রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে তাঁদের ঘনিষ্ঠতা ছিল তা জানতেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। যে বিপুল পরিমাণ অর্থ (প্রায় ৫০০ কোটি টাকা) তাঁরা বাজার থেকে তুলেছেন তা কোথায় রাখা হয়েছে? ওই টাকা কোন কোন নেতার পকেটে গিয়েছে তা নিয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করবেন সিবিআই অফিসাররা।
পুলিশি তদন্তে এখন পর্যন্ত যা তথ্য উঠে এসেছে, তাতে রয়্যালের নামে কোচবিহারে প্রায় ২৫০ বিঘা জমি, বেশ কিছু বাড়ি এবং গাড়ি রয়েছে। তাতে সব মিলিয়ে ৩০ কোটি টাকার মতো হদিশ পাওয়া গিয়েছে। বাকি টাকা কার কার নামে কোথায় রাখা হয়েছে তা নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। অর্চনা দেবী এবং তাঁর বোন নীলিমা দেবী বর্তমানে দশ দিনের পুলিশি হেফাজতে রয়েছেন। সেখানে তদন্তকারী অফিসাররা তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করছেন।
পুলিশ সূত্রের খবর, প্রভাবশালী কয়েকজনের নামও তাঁরা পুলিশের কাছে জানিয়েছে। পুলিশ অবশ্য বিষয়টি নিয়ে কিছু বলতে রাজি নয়। কোচবিহারের পুলিশ সুপার রাজেশ যাদব বলেন, “ওই ঘটনার তদন্ত হচ্ছে। একটি মামলায় ওই দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। আমরা যা তথ্য পাব তা আদালতে জানানো হবে।” বিরোধী দলের অনেকেরই অভিযোগ রয়েছে, রয়্যাল ইন্টারন্যাশনালের ব্যবসায় মদত জুগিয়েছেন শাসকদলের একাধিক নেতা। পুলিশ-প্রশাসনের দুই আধিকারিকও রয়্যাল কর্ত্রীদের গা ঢাকা দিতে সহযোগিতা করেছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন বিরোধীরা । সেই অভিযোগ কতটা সত্য তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
২০১০ সালে কোচবিহারের চান্দামারির বাসিন্দা মৃত্যুঞ্জয় সরকার ওই সংস্থা গড়ে তোলেন। অভিযোগ, দেড় বছরে দ্বিগুণ টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার আশ্বাসে তিন বছরের মধ্যে কয়েকশো কোটি টাকার ব্যবসা ফাঁদে রয়্যাল। কোচবিহারের বাইরে উত্তরবঙ্গ এবং নিম্ন অসমেও পা রাখে তারা।
সংস্থার দাবি, ২০১৩ সালে মৃত্যুঞ্জয়বাবুর মৃত্যু হয়। এর পরেই সংস্থার চিফ ম্যানেজিং ডিরেক্টর হন অর্চনা সরকার। তাঁর বোন নীলিমা দেবীকে নিয়ে তিনি ব্যবসা শুরু করেন। ফরওয়ার্ড ব্লকের কোচবিহার জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহ বলেন, “সিবিআই তদন্ত শুরু করেছে। এবার সব প্রকাশ্যে আসবে। যে বিপুল পরিমাণ টাকা বাজার থেকে তুলেছে ওই সংস্থা তা কোথায় গেল? কার পকেটে গেল তা জানতে চায় সাধারণ মানুষ।” বিজেপির কোচবিহার জেলা সাধারণ সম্পাদক নিখিল রঞ্জন দে বলেন, “সাধারণ মানুষের টাকা হাতিয়ে অনেকে সাধু সেজে বসে রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সিবিআই ওই টাকার হদিস করুক। তা হলেই সব সামনে চলে আসবে।” সিবিআই তদন্তে মূল অভিযুক্তরা কেউই ছাড় পাবেন না বলে মনে করছে শাসক দলও। তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সহ সভাপতি আব্দুল জলিল আহমেদ বলেন, “বাম আমলে ওই সংস্থা গড়ে ওঠে। সেই সময় থেকে অনেক বাম নেতা-কর্মী তাঁর সঙ্গে যুক্ত ছিল বলে আমরাও অভিযোগ পেয়েছি। সিবিআই তদন্তে সব উঠে আসবে বলে মনে করছি।’’