কেউ মাথায় গামছা বেঁধে উপড়ে ফেলছেন সিগন্যাল পোস্ট। কেউ বা কালো জামার হাত গুটিয়ে লম্বা বাঁশ নিয়ে ভেঙে চলেছেন স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা একের পর এক বাতানুকূল কামরার কাচ। আবার ১ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে টায়ার এনে লাইনে ফেলে জ্বালিয়ে দিচ্ছেন। অন্তত ১০টি সিসিটিভি ক্যামেরার পরিষ্কার ভেসে উঠছে মুখগুলি। আবার আরেক দলকে দেখা গেল ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মের শেষে থাকা অওধ অসম এক্সপ্রেসের ইঞ্জিনে ভাঙচুর করার পরে ক্রমাগত মূল স্টেশনের দিকে ঢিল ছুড়ে যাচ্ছে। সবাইকে স্পষ্ট দেখা গেলেও তাদের নাম-ধাম কেউ জানেন না।
লোকমুখে রেলের অফিসার, কর্মীরা শোনেন, কারও বাড়ি পটনা, কারও আড়ারিয়া, কিসানগঞ্জ, কারও ভাগলপুর বা ছাপড়া কারও বা লখনউ, আবার কারও কোকরাঝাড়়ে। তাই রবিবার ট্রেনের দাবিতে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির পরে রেলের তরফে এনজেপি রেল পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হয়। সেখানে কিন্তু আলাদা করে কারও নাম, পরিচয় দেওয়া যায়নি।
রেল পুলিশ সূত্রের খবর, সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর, অবরোধ, আগুন ধরানো, সরকারি কর্মীকে কাজে বাধার মতো একাধিক জামিন অযোগ্য ধারা প্রয়োগ করা হলেও কোনও অভিযুক্তকেই ধরা যাবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে জিআরপি ও আরপিএফের মধ্যেই। এনজেপি’র স্টেশন ডিরেক্টর পার্থসারথী শীল বলেন, ‘‘এরা সবাই বাইরের রাজ্যের। তাই আলাদা করে তো পরিচয় দিয়ে অভিযোগ করা সম্ভব নয়।’’
রেল সূত্রের খবর, সোমবার রেলের তরফে পার্থবাবুকেই মাথায় রেখে চার সদস্যের একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠিত হয়েছে। আগামী দু’দিনের মধ্যে কমিটির রিপোর্ট ডিআরএমের কাছে জমা পড়বে। ইতিমধ্যে রেলের তরফে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দেড় কোটি টাকা বলে জানানো হয়েছে।
উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের অফিসারেরা জানান, শনিবার রাত থেকে যে পরিমাণ ছাত্র স্টেশনে জড়ো হওয়া শুরু করেছিল, সেই তুলনায় আরপিএফ বা জিআরপি কম ছিল। পরে পরিস্থিতি বুঝে জিআরপি-র আইসি স্বপন সরকার ময়দানে নেমে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করেন। তবে ভোরে কোচবিহার থেকে আরও কয়েক হাজার ছাত্র স্টেশনে এসে ঢুকে পড়ায় পরিস্থিতি বদলায়। ভাঙচুর, তাণ্ডব শুরু হয়ে যায়। এ দিন দুপুর থেকে এনজেপি স্টেশনে আরপিএফের কমান্ডো বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। তারা বিভিন্ন এলাকায় টহলও দেন।