অভ্যর্থনা: হুড খোলা জিপে চেপে মৌসম চলেছেন তৃণমূল দফতরে। ছবি: তথাগত সেন শর্মা
শব্দবাজি নিষিদ্ধ নাকি? মঙ্গলবার মালদহ টাউন স্টেশনে বোঝা ঝায়নি। বাজির সঙ্গেই সেখানে পাল্লা দিয়ে বেজেছে ব্যান্ডও। মালার ভারে প্রায় ঢেকে গিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মৌসম বেনজির নুর। কংগ্রেস ছেড়ে অন্য ঘরে যাওয়ার পরে এই প্রথম মালদহে পা দিলেন গনিখানের ভাগ্নী।
তৃণমূলের লোকজন অবশ্য বলছেন ‘ঘর ওয়াপসি’! কেন? তাঁদের যুক্তি, গনিখান চৌধুরীর সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খুবই ভাল সম্পর্ক ছিল। গনিখান বঙ্গোপসাগরে ছুড়ে ফেলতে চেয়েছিলেন বামফ্রন্ট সরকারকে, আর মমতা তাদের ক্ষমতাচ্যুত করে সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন। তা হলে এটা ঘর ওয়াপসি ছাড়া কী!
কে আসেননি এ দিন মৌসমকে স্বাগত জানাতে! বেলা বারোটা থেকে ভিড় বাড়ছিল স্টেশনে। দেড়টা নাগাদ তিল ধারণের ঠাঁই নেই। ট্রেন আসতেই এগিয়ে গেলেন নেতানেত্রীরা।
তৃণমূলের জেলা সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন, দুলাল সরকার, সাবিনা ইয়াসমিন, নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারি, অম্লান ভাদুড়ী, গৌড়চন্দ্র মণ্ডলেরা তো ছিলেনই। হুড খোলা জিপে চেপে স্টেশন থেকে মোয়াজ্জেমের কার্যালয়ে পৌঁছন মৌসম। সেখানে তাঁকে স্বাগত জানাতে বসেছিলেন কোতোয়ালি পরিবারের আর এক সদস্য তথা তৃণমূল নেতা আবু নাসের খান চৌধুরী (লেবু)।
আসেননি শুধু কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী ও সাবিত্রী মিত্র। তবে মালদহ জেলা পরিষদের মেন্টর কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরী বলেন, ‘‘মৌসমকে জেতাতে দলের একজন সৈনিক হিসেবে আমিও লড়াই করব। নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে কর্মীরাও মৌসমের হয়ে লড়বেন।’’ তৃণমূলের জেলা কোর কমিটির সদস্য সাবিত্রী মিত্র এই ব্যাপারে কৃষ্ণেন্দুর সঙ্গে একমত। বলেন, ‘‘দলনেত্রীর নির্দেশে মৌসম দলের প্রার্থী হচ্ছেন এবং তাঁকে জেতাতে আমরা ঝাঁপিয়ে পড়ব।’’ মোয়াজ্জেম বলেন, “মৌসম ছিলেন কংগ্রেসের জেলা সভানেত্রী ছিলেন। তিনি চলে আসায় জেলায় কংগ্রেস বলে আর কিছু থাকল না।’’
কংগ্রেস-তৃণমূল সমঝোতায় বোর্ড
উত্তর মালদহ লোকসভা কেন্দ্র ১০টি পঞ্চায়েত বোর্ড
দক্ষিণ মালদহ লোকসভা কেন্দ্র
১০টি পঞ্চায়েত বোর্ড
(১৫টিতে কংগ্রেস প্রধান বা উপপ্রধান পেয়েছে। ৫টিতে কিছু পায়নি)
জেলা সভাপতি:
• ছিলেন মৌসম বেনজির নুর
(এখন ফাঁকা)
সাধারণ সম্পাদক:
• ইশা খান চৌধুরী (বিধায়ক)
• মোস্তাক আলম (বিধায়ক) মৌসম-বিরোধী
• অর্জুন হালদার (বিধায়ক) মৌসম-ঘনিষ্ঠ
• কালীসাধন রায়
কোতোয়ালি-ঘনিষ্ঠ
• হেমন্ত শর্মা
দল ছেড়েছেন
(নবান্নে মৌসমের সঙ্গে ছিলেন)
পঞ্চায়েত ভোটের পরেই মৌসম নূরের দলবদলের জল্পনা নিয়ে মালদহের রাজনীতিতে নানা প্রশ্ন ওঠে। কারণ একাধিক গ্রামপঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনে তৃণমূলকে সমর্থন করেছিল কংগ্রেস। অবশেষে সে সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে সোমবার নবান্নে গিয়ে তৃণমূলে যোগ দেন মৌসম।
এ দিন মৌসমকে ঘিরে উচ্ছ্বাস দেখা গেলেও তাঁর ঘনিষ্ঠ কংগ্রেস নেতা-কর্মী-সমর্থকদের স্টেশনে দেখা যায়নি। যা মৌসমের জন্য যথেষ্ট উদ্বেগের বলে মত রাজনীতিকদের। কংগ্রেস নেতা তথা বিধায়ক ইশা খান চৌধুরী বলেন, “মালদহের মানুষ গনিখানকে চেনেন। আর গনিখান মানেই কংগ্রেস। তাই কর্মী, সমর্থকেরা কংগ্রেস অর্থাৎ গনিখানের সঙ্গে আছেন।” তবে মৌসমের দাবি, কর্মী-সমর্থকেরাও অনেকে তৃণমূলে আসবেন। তিনি বলেন, ‘‘উন্নয়নের স্বার্থে সকলেই যোগ দেবেন তৃণমূলে। এমনকি, ইশা দাদা এবং ডালু মামাকেও আমি তৃণমূলে আসার জন্য অনুরোধ করছি।’’
ইশা খানের পাল্টা প্রতিক্রিয়া, ‘‘দলবদল করা মানে কংগ্রেস তথা গনিখানের সঙ্গে বেইমানি করা। তা আমরা কখনও করব না।’’