অভাবে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা, অভিযোগ

প্রতিবন্ধী ছেলের চিকিত্সা করাতে গিয়ে সামান্য ভিটেমাটি সহ সর্বস্ব খুইয়ে ছিলেন আগেই। তার পর গ্রাম ছেড়ে শহরে এসে প্রথমে ঝালমুড়ি বিক্রি করে ও পরে অস্থায়ী চায়ের দোকান করে কোনওরকমে সংসার চালাতেন। কিন্তু এভাবেও চলেনি বেশিদিন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

চাঁচল শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৫ ০২:১২
Share:

প্রতিবন্ধী ছেলের চিকিত্সা করাতে গিয়ে সামান্য ভিটেমাটি সহ সর্বস্ব খুইয়ে ছিলেন আগেই। তার পর গ্রাম ছেড়ে শহরে এসে প্রথমে ঝালমুড়ি বিক্রি করে ও পরে অস্থায়ী চায়ের দোকান করে কোনওরকমে সংসার চালাতেন। কিন্তু এভাবেও চলেনি বেশিদিন। ছেলের চিকিত্সার অর্থ যোগাতে না পারার হতাশা ও পাশাপাশি অভাবের তাড়নায় ওই ব্যক্তি বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। মালদহের চাঁচলের রায়পাড়ায় বৃহস্পতিবার রাতে ঘটনাটি ঘটে।

Advertisement

পুলিশ জানায়, মৃতের নাম ষষ্ঠী কুন্ডু (৪২)। এদিন রাতে বাড়ির পাশের একটি পুকুরের ধারে বিষক্রিয়ায় অসুস্থ ষষ্ঠীকে দেখতে পেয়ে প্রতিবেশীরা তাকে চাঁচল হাসপাতালে ভর্তি করান। রাতেই তার মৃত্যু হয়। বাড়ির কাছেই একটি অস্থায়ী চায়ের দোকান করে সংসার চালাতেন ষষ্ঠী। কিন্তু সামান্য রোজগারে ছেলের চিকিত্সার খরচ যোগাড় দূরের কথা, সংসারও চলত না। বিভিন্ন সময় নানা আবেদন নিয়ে একাধিকবার পঞ্চায়েতের দ্বারস্থ হলেও তাঁকে কোনও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।

চাঁচল-১ ব্লকের বিডিও সুব্রত বর্মন বলেন, ‘‘ওই ব্যক্তি আমার কাছে কখনও আবেদন করেননি। তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হতো। অভাবে যে ওই ব্যক্তি আত্মহত্যা করেছেন এমন অভিযোগও কেউ জানায়নি। তবে মৃতের পরিবারের তরফে আবেদন জানানো হলে প্রশাসনের তরফে যতটা সম্ভব সাহায্য করার চেষ্টা হবে।’’

Advertisement

ওই ঘটনায় পুলিশ একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করেছে। চাঁচলের এসডিপিও রানা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পরিবারের তরফে এখনও কোনও অভিযোগ জানানো হয়নি। তবু ষষ্ঠীবাবু কেন আত্মহত্যা করলেন সেই বিষয়ে থানাকে সব খতিয়ে দেখতে বলব।’’

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, চাঁচলের জগন্নাথপুরে বাড়ি ও সামান্য জমিজায়গা ছিল ষষ্ঠীর। তার দুই ছেলেমেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে প্রিয়া দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী। বছর তেরোর একমাত্র ছেলে ভোলা প্রতিবন্ধী। চোখে ভাল না দেখতে পায়না সে। হাঁটতেও পারে না। তার চিকিৎসায় সব খুইয়ে বছর দশেক আগে চাঁচলে এসে রাস্তার পাশে ঝালমুড়ি বেঁচতে শুরু করেন ষষ্ঠীবাবু। ছেলের চিকিৎসার জন্য বেশ কয়েকবার স্থানীয় একটি ক্লাবের উদ্যোগে চাঁদা তুলে ষষ্ঠীবাবুকে সাহায্য করা হয়েছে।

অভাবেই তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে তাঁর পরিবারের অভিযোগ। একই অভিযোগ তুলেছেন চাঁচল গ্রাম পঞ্চায়েতের বিজেপি সদস্য দেবনাথ পান্ডেও। তিনি বলেন, ‘‘বুথের সদস্য হিসাবে ও মাঝেমধ্যেই আমার কাছে অভাব অভিযোগ জানিয়ে সাহায্য চাইত। বিপিএল তালিকায় ওঁর নাম তোলা সহ খাস জমির পাট্টা দেওয়ার জন্য আমি পঞ্চায়েতে বারবার যোগাযোগ করেছি। কিন্তু ক্ষমতাসীন কংগ্রেস কোনও গুরুত্বই দেয়নি। অভাব সহ্য করতে না পেরেই ও আত্মহত্যা করেছে।’’ এদিকে ষষ্ঠীবাবু আত্মঘাতী হওয়ায় বিপাকে পড়েছে পরিবারটি। স্ত্রী মন্দিরাদেবী বলেন, ‘‘দোকানের রোজগারে খাওয়াই জুটত না। পঞ্চায়েতে আবেদন করলেও সাহায্য মেলেনি।’’ মেয়ে প্রিয়া জানায়, ‘‘আমার পড়া, ভাইয়ের চিকিত্সা নিয়ে বাবা সবসময় চিন্তা করত। এখন আমাদের কি হবে জানি না!’’

চাঁচল গ্রাম পঞ্চায়েতের কংগ্রেসি প্রধান নরেশ দাস বলেন, ‘‘বিপিএল তালিকায় নাম না থাকলে পঞ্চায়েত তো কাউকে সাহায্য করতে পারে না। জমি না থাকলে ঘর তৈরির টাকাও বরাদ্দ করা যায় না। বিষয়টি জানার পর বিপিএল তালিকায় যাতে ওর নাম ওঠে, খাস জমির পাট্টা পায় সেই উদ্যোগ চলছিল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন