ছবি: সংগৃহীত
মহাপ্রভু চৈতন্যদেবের ভক্তি আন্দোলনের অন্যতম তীর্থভূমি মালদহের গৌড়ের রামকেলিতে রয়েছে মদনমোহন মন্দির, রূপ-সনাতন মিলন মন্দির ও বৈষ্ণব চর্চা কেন্দ্র সহ একাধিক মন্দির। রয়েছে অষ্ট কুণ্ড সহ চৈতন্যদেবের পায়ের চিহ্ন সম্বলিত মন্দির, তাঁর পূর্ণাবয়ব মূর্তিও। আর এ সব মন্দির-কুণ্ডকে ঘিরে রয়েছে বারদুয়ারি মসজিদ, চামকাটি মসজিদ সহ অসংখ্য মুসলিম স্থাপত্য। যেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য সহাবস্থান।
রামকেলির রূপ-সনাতন মিলন মন্দির ও বৈষ্ণবচর্চা কেন্দ্র চাইছে, সম্প্রীতির এহেন মিলনক্ষেত্রে এসে মুখ্যমন্ত্রী সম্প্রীতির বার্তা দিন। এ জন্য মন্দির কমিটির তরফে নবান্নে চিঠি পাঠিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণও জানানো হয়েছে। চৈতন্যদেবের পদার্পণ উপলক্ষ্যে ১৫ জুন থেকে গৌড়ে যে রামকেলি মেলা শুরু হতে চলেছে সে সময়ই মুখ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
এক সময় বাংলার রাজধানী ছিল গৌড়। কথিত রয়েছে, তৎকালীন গৌড়ের বাদশা হুসেন শাহর আমলে মন্ত্রিসভায় ছিলেন মহাবৈষ্ণব বলে পরিচিত রূপ ও সনাতন গোস্বামী. তাঁরাই ১৫০৯ খ্রিস্টাব্দে রামকেলিতে মদনমোহন মন্দির প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। তাঁরা বৃন্দাবনের আদলে রামকেলিতে আটটি কুণ্ড বা পুকুরও খনন করেন এবং তাঁরা রামকেলিকে কার্যত বৃন্দাবনের রূপ দিতে চেয়েছিলেন।
মহাপ্রভূ ও রূপ-সনাতনকে ঘিরেই রামকেলিতে উৎসব বা মেলা হয়ে আসছে। আর এই মেলার শুরুর দিনে মুখ্যমন্ত্রীকে আসার আমন্ত্রণ জানালো রামকেলির রূপ-সনাতন মিলন মন্দির ও বৈষ্ণব শাস্ত্র চর্চা কেন্দ্র।
এই চর্চা কেন্দ্রের সভাপতি জয়ন্ত কুণ্ডু বলেন, রামকেলি মেলার সময় বা সারাবছর যে সমস্ত পর্যটক বা সাধারণ মানুষরা এখানে ঘুরতে আসেন তাঁরা মন্দির ঘুরে দেখার পাশাপাশি মুসলিম স্থাপত্যগুলিও ঘুরে দেখেন। রামকেলি মেলা মূলত বৈষ্ণবধর্মকে ঘিরে আবর্তিত হলেও এখানে সব ধর্মের মানুষই ভিড় জমান। তিনি বলেন, ‘‘এখানে ধর্মের কোনও ভেদাভেদ নেই। তাই আমরা চাইছি সম্প্রীতির এমন মিলনক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী আসুন এবং সম্প্রীতির বার্তা দিন।’’ চর্চা কেন্দ্রের সম্পাদক উজ্জ্বল সাহা বলেন, ‘‘সম্প্রীতির একটি মিলনমেলা রামকেলিতে চললেও কোনও মুখ্যমন্ত্রী এখানে আসেননি। বর্তমান প্রেক্ষিতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা জরুরি হয়ে পড়েছে। সে কারণেই আমরা তাঁকে আহ্বান করেছি যেন তিনি এসে এখান থেকে সম্প্রীতির বার্তা দেন।’’ রামকেলি নিয়ে গবেষণা করা বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ তুষারকান্তি ঘোষ বলেন, ‘‘যুগ যুগ ধরেই মহাপ্রভূর পদধূলিত রামকেলি সম্প্রীতির অনন্য ভূমি।’’