আদর: দুর্ঘটনায় জখম রেণু রায়ের শিশু সন্তানকে সামলাচ্ছেন আনোয়ারা বিবি। —নিজস্ব চিত্র।
মা অসুস্থ। কিন্তু হাসপাতালেই মায়ের কোল পেয়েছে বছর খানেকের দুগ্ধপোষ্য গোলু।
একটি গাড়ি করে শিলং থেকে সপরিবার বিহারের সীতামঢ়ীর দিকে যাচ্ছিলেন রেণু রায়। বৃহস্পতিবার সকালে ময়নাগুড়ির উল্লারডাবারিতে একটি ট্রাকের সঙ্গে তাঁদের গাড়ির ধাক্কা লাগে।
গুরুতর আহত হন রেণু। তাঁকে জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। গোলুর চোট লাগেনি। কিন্তু সে এত ছোট যে, তাকেও মায়ের সঙ্গেই নিয়ে যেতে হয়েছিল হাসপাতালে। আর সেখানে মাকে স্বাভাবিক অবস্থায় না পেয়ে সে কাঁদতে শুরু করে দেয়। তখনই তাকে সামলাতে এগিয়ে আসেন পাশের শয্যার আনোয়ারা বিবি। তিনি কোলে তুলে নেওয়ার পরে শান্ত হয় গোলু।
তারপর থেকে আনোয়ারার কোলেই রয়েছে সীতামঢ়ীর রায় পরিবারের শিশুপুত্র। আনোয়ারা বিবি তাঁকে দুধ খাওয়াচ্ছেন সময় মতো। কোলে রেখে গান গেয়ে ঘুম পাড়িয়েছেন। পরম মমতায় বলছেন, ‘‘আমাকে ও চিনে গিয়েছে। এখন আমার কোলেই নিশ্চিন্ত বোধ করছে।’’
রেণুর সুস্থ হতে কয়েক দিন লাগবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। আনোয়ারা বয়সে রেণুর চেয়ে ছোট। নিজের এক ছেলে এক মেয়ে। বাড়ি ধূপগুড়িতে। পেটে ব্যথার জন্য ভর্তি হয়েছেন হাসপাতালে। তাঁর কথায়, ‘‘গোলুও যেন আমারই ছেলে হয়ে গিয়েছে এখন। যত দিন দিদি সুস্থ না হয়, ও আমার কাছেই থাকবে।’’
রেণুর স্বামী ও ভাশুর উমেশ ও রূপেশ রায় শিলঙে পাইপ মেরামতির কাজ করেন। রেণু ও তাঁর জা-ও সেখানেই থাকেন। বুধবার বিকেলে ছেলেমেয়েদের নিয়ে একটি গাড়ি চেপে তাঁরা বিহারের বাড়ির দিকে রওনা হন। উল্লারডাবরিতে ধাক্কায় জখম হন রেণু, তাঁর জা সহ ১২ জন। সকলকেই জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়৷ হাসপাতাল সূত্রের খবর, জখমদের মধ্যে সব থেকে বেশি চোট পেয়েছেন রেণু ও তাঁর জা।
দুর্ঘটনার পর মায়ের কোল ছাড়া হতেই কান্না জুড়ে দেয় গোলগাল মিষ্টি দেখতে গোলু। কেউ বুঝতে পারছিলেন না, কী করবেন। সেই সময়ই এগিয়ে আসেন আনোয়ারা। আনোয়ারার বোনও গোলুকে কোলে তুলে নিয়েছেন। উমেশবাবুর কথায়, ‘‘দেখে মনেই হচ্ছে না, গোলু আগে কখনও আনোয়ারাকে দেখেনি। আনোয়ারার এই ঋণ আমরা কোনওদিন শোধ করতে পারব না।’’