বন্যায় স্কুল বন্ধ ছিল, এখন ক্লাস সন্ধ্যাতেও

টানা প্রায় ১৫ থেকে ১৬ দিন এই পরিস্থিতি চলায় লেখাপড়ায় অনেকটাই পিছিয়ে পড়ে ওই কচিকাঁচারা। আর সেই ছেদ পড়া পঠন-পাঠন ফিরিয়ে আনতে স্কুল তো চালু রয়েছেই, পাশাপাশি ওই কচিকাঁচাদের জড় করে সন্ধ্যা থেকে বিশেষ ভাবে উদ্যোগী হয়ে পড়ানোর কাজ শুরু করেছেন শিক্ষকরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মালদহ শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০১:০৪
Share:

প্রতীকী ছবি।

টাঙনের জলে ডুবে গিয়েছিল স্কুল। পঠন-পাঠন বন্ধ হয়ে যায়। নদীর সেই জল ঢুকে পড়ে এলাকার ঘরবাড়িতেও। এ জন্য দেবাশিস হালদার, নিলাদ্রী সরকার, ইন্দ্রজিত হালদার, মোহিনী হালদারদের মতো কচিকাঁচারা পরিবারের সঙ্গে কেউ অশ্রয় নেয় ত্রাণ শিবিরে, কেউ মার্কেট কমপ্লেক্সের ছাদে বা কেউ অন্যের বাড়িতে। আর সেসব ত্রাণ শিবির বা ছাদে একাধিক পরিবারের সঙ্গে গাদাগাদি করে থাকতে গিয়ে সেখানেও তাঁদের লেখাপড়া লাটে ওঠে। টানা প্রায় ১৫ থেকে ১৬ দিন এই পরিস্থিতি চলায় লেখাপড়ায় অনেকটাই পিছিয়ে পড়ে ওই কচিকাঁচারা। আর সেই ছেদ পড়া পঠন-পাঠন ফিরিয়ে আনতে স্কুল তো চালু রয়েছেই, পাশাপাশি ওই কচিকাঁচাদের জড় করে সন্ধ্যা থেকে বিশেষ ভাবে উদ্যোগী হয়ে পড়ানোর কাজ শুরু করেছেন শিক্ষকরা। এ ঘটনা বুলবুলচণ্ডী পঞ্চায়েতের ডুবাপাড়া প্রাইমারি স্কুলের।

Advertisement

শুধু এই স্কুলের শিক্ষকরাই নন, হবিবপুর সার্কেলের শিশুডাঙা, ভুয়াডাঙা, পার্বতীডাঙা প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকরাও একই ভাবে সংশ্লিষ্ট স্কুলের পড়ুয়াদের এই সান্ধ্যকালীন পড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছেন।

টাঙন নদীর পাড়েই হবিবপুর সার্কেলের ডুবাপাড়া প্রাইমারি স্কুল। পড়ুয়ার সংখ্যা ৪৫ জন। ওই স্কুলে ডুবাপাড়া, ডুবাপাড়া কলোনি, রামকান্তপুর ও জগন্নাথপুরের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করে। গত ১৬ অগস্ট টাঙনের জল ঢুকে পড়ে এই স্কুলে। কোমর সমান জল দাঁড়িয়ে যাওয়ায় স্কুলে পঠন-পাঠন বন্ধ করা হয়। সেই জল ঢুকে পড়ে ওই চারটি গ্রামেও। ফলে ওই গ্রামগুলির পড়ুয়া সহ পরিবারের লোকজনরা আশ্রয় নেয় স্থানীয় বুলবুলচণ্ডী গিরিজাসুন্দরী হাইস্কুল, বুলবুলচণ্ডী আর এন রায় গার্লস স্কুল, অরুণা মার্কেট কমপ্লেক্সের ছাদ প্রভৃতি ত্রাণ শিবিরে। সেখানেও পড়াশোনা থমকে যায়। যেমন, দ্বিতীয় শ্রেণির পড়ুয়া দেবাশিস হালদার, প্রথম শ্রেণির পড়ুয়া শ্রাবন্তী হালদারদের অভিভাবকরা বলেন, ‘‘বন্যার জন্য আমরা গিরিজাসুন্দরী স্কুলে আশ্রয় নিয়েছিলাম। সেখানে টানা ১৫-১৬ দিন ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ ছিল।’’ ডুবাপাড়া স্কুলের শিক্ষক অলোক মৃধা বলেন, ‘‘টানা ১৫ থেকে ১৬ দিন স্কুল বন্ধ থাকায় ছাত্রছাত্রীরা লেখাপড়ায় অনেকটাই পিছিয়ে পড়ে। সেই অবস্থা পূরণ করতে স্কুলের শিক্ষকরা মিলে সমস্ত পড়ুয়াদের স্কুলের পাশাপাশি সন্ধ্যাতেও পড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছি।’’ পাঁচশো মিটারের মধ্যে থাকা পড়ুয়াদের জড়ো করে এলাকারই কোনও এক পড়ুয়ার বাড়িতে পড়ানো হচ্ছে। অলোকবাবুর পাশাপাশি স্কুলের শিক্ষক দীনেশ সরকার, তনুজা সাহা, আশুতোষ সরকার, মলয় শীলরাও সন্ধ্যায় গ্রামে গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের পালা করে পড়াচ্ছেন। হবিবপুর সার্কেলের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক নয়ন দাস এই ঘটনায় খুশি। মালদহ জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান আশিস কুণ্ডু বলেন, এই উদ্যোগ কুর্নিসযোগ্য। অন্য এলাকার স্কুলগুলিও এমন এগিয়ে এলে ভালো হবে।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন