বেতন অনিয়মিত, আয় বাড়াতে চায় দেবোত্তর ট্রাস্ট

আয় বাড়াতে উদ্যোগী হল কোচবিহার দেবোত্তর ট্রাস্ট বোর্ড। ইতিমধ্যে কী ভাবে আয় বাড়ানো যেতে পারে তা নিয়ে রূপরেখা তৈরির তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৬ ০২:৪১
Share:

কোচবিহারে মদনমোহন দেব। —নিজস্ব চিত্র।

আয় বাড়াতে উদ্যোগী হল কোচবিহার দেবোত্তর ট্রাস্ট বোর্ড। ইতিমধ্যে কী ভাবে আয় বাড়ানো যেতে পারে তা নিয়ে রূপরেখা তৈরির তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই।

Advertisement

বোর্ডের সভাপতি তথা কোচবিহারের জেলাশাসক ওই রূপরেখা তৈরির জন্য সদর মহকুমা শাসককে দায়িত্ব দিয়েছেন। বোর্ড সূত্রের খবর, প্রাথমিকভাবে ট্রাষ্ট বোর্ডের কর্মীদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন মহকুমা শাসক। যিনি ওই ট্রাস্ট বোর্ডের অন্যতম সদস্যও। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ভোটের ফল ঘোষণার পর আনুষ্ঠানিক ভাবে বৈঠক করে পরিকল্পনার রূপরেখা চূড়ান্ত করা হবে। কোচবিহারের জেলাশাসক তথা দেবোত্তর ট্রাস্ট বোর্ডের সভাপতি পি উল্গানাথন বলেন, “বোর্ডের আয় বাড়াতে পদক্ষেপ করা হয়েছে। কোচবিহারের সদর মহকুমা শাসককে ওই ব্যাপারে প্রকল্প তৈরি করতে বলা হয়েছে। ওই প্রকল্প পেলে দেখা হবে।” কোচবিহারের সদর মহকুমা শাসক অরুন্ধতী দে বলেন, “ওই ব্যাপারে কি কাজ করা যেতে পারে সে সব নিয়ে ইতিমধ্যে প্রাথমিক চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে।”

দেবোত্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, কর্মীদের একাংশ আয় বাড়াতে বোর্ডের আওতাধীন পরিত্যক্ত জমি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের ব্যাপারে জোর দিয়েছেন। কোচবিহার শহরের গুঞ্জবাড়ি ও জেনকিন্স স্কুল লাগোয়া এলাকায় বোর্ডের মালিকানাধীন জমিতে ওই প্রকল্প তৈরি করা হলে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে বলে তাদের ধারণা।

Advertisement

বোর্ডের কয়েকজন কর্মী জানিয়েছেন, গুঞ্জবাড়ি ও জেনকিন্স স্কুল লাগোয়া জমিতে পরিকল্পনা করে স্টল করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে নির্দিষ্ট বছরের জন্য লিজে দেওয়া হলে একলপ্তে ভাল টাকা বোর্ডের হাতে আসবে। ব্যাঙ্কে ওই টাকা রাখা হলে ফি মাসে সুদ মিলবে। আবার মূল টাকাও ঠিক থাকবে। এ ছাড়াও অতিথি নিবাস বা অনুষ্ঠান ভবন করা যেতে পারে। সরকারি বরাদ্দ নিয়ে সমস্যা হলে পিপিপি মডেলে ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সমস্যা হবে না। গুঞ্জবাড়ি, জেনকিন্স স্কুল লাগোয়া এলাকা শহরের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র বলে চাহিদা থাকবে। তাছাড়া জেনকিন্স স্কুল লাগোয়া এলাকায় বহুতল ভবন করে একটি অংশে জেলা হাসপাতালে আসা রোগীর পরিজনদের কম খরচে থাকার ব্যবস্থাও করা যেতে পারে। বোর্ডের আওতাধীন কিছু স্টলের ভাড়াও দীর্ঘদিন বাড়ানো হয়নি। সেসব নিয়েও চিন্তাভাবনা করা যেতে পারে। ইতিমধ্যে এসব প্রস্তাব বোর্ড কর্তাদের জানানোর ব্যাপারে মনস্থির করেছেন তারা। আরও কী প্রকল্প নেওয়া যেতে পারে সেসব বিশদে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আনুষ্ঠানিক বৈঠক হলে তালিকা দেওয়া হবে।

বোর্ড সূত্রেই জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যে আয় বাড়াতে কিছু কাজ হয়েছে। বৈরাগি দিঘি, ডাঙ্গোরাই দিঘি একবছরের সময়সীমার চুক্তিতে লিজ দেওয়া হয়েছে। মদনমোহন মন্দির লাগোয়া চত্বরে তৈরি করা হয়েছে পার্কিং জোন। মোটর সাইকেল, সাইকেল তো বটেই শহরের যানজট এড়াতে অনেকে ছোটগাড়িও সেখানে রাখছেন। বেনারসের অতিথি নিবাস থেকেও বিকল্প আর্থিক আয় হচ্ছে। ওই আয় বাড়িয়ে বোর্ডকে স্বনির্ভর করে গড়ে তুলতেই নতুন প্রকল্পের পরিকল্পনা হচ্ছে। তাতে বাণেশ্বর, সিদ্ধেশ্বরী, গোসানিমারি, তুফানগঞ্জ সহ জেলা ও জেলার বাইরে ছড়িয়ে থাকা অন্তত ২০টি মন্দির লাগোয়া এলাকার কোথাও রাত্রিবাসের ব্যবস্থা থেকে অন্য কী প্রকল্প নেওয়া সম্ভব সেসব কিছুও খতিয়ে দেখার কাজ শুরু হয়েছে।

আয় বাড়ানোর ব্যাপারে এমন তৎপরতা কেন? দেবোত্তর সূত্রের খবর, বোর্ডের আওতায় স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে দেড় শতাধিক কর্মী রয়েছেন। তাদের বেতন দিতে ফি মাসে গড়ে ১৭ লক্ষ টাকা খরচ হয়। এছাড়াও নিত্যপুজো সহ আনুষঙ্গিক খরচ রয়েছে। রাজ্য পর্যটন দফতরের বরাদ্দেই ওই কাজ চলত। গত ডিসেম্বর থেকে ওই বরাদ্দ একাধিকবার অনিয়মিত হয়ে পড়ে। মার্চ মাসে গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারির বেতন একসঙ্গে মেটাতে হয়। চলতি মাসেও বরাদ্দ দেরিতে আসায় কর্মীরা মে’র দ্বিতীয় সপ্তাহ পড়লেও এপ্রিলের বেতন পাননি। বোর্ড সূত্রে অবশ্য বলা হয়েছে, ইতিমধ্যে ৩৮ লক্ষ টাকা বরাদ্দ মিলেছে। ফলে মে মাস পর্যন্ত বেতনের সমস্যা হবেনা। কোচবিহারের সদর মহকুমা শাসক বলেন, “আজ-কালের মধ্যে কর্মীরা বেতন পেয়ে যাবেন। ওই ব্যাপারে প্রক্রিয়া শুরুও হয়েছে।” বোর্ডের কয়েকজন কর্মী জানান, সামগ্রিক পরিস্থিতির জেরে আয় বাড়াতে এবার বাড়তি জোর দেওয়া হচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement