সব ছাত্রকে গুরুত্ব দিয়ে সাফল্য পায় জেনকিন্স

মাধ্যমিকের পর উচ্চ মাধ্যমিকেও নজরকাড়া সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখল কোচবিহারের জেনকিন্স স্কুল। এ বছর উচ্চমাধ্যমিকে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের মেধা তালিকা রাজ্যে দ্বিতীয় স্থান পেয়েছেন ওই স্কুলের ছাত্র নভোনীল দেব (৪৯২)। এমনকি পাশের হারও পুরো একশো শতাংশ। স্কুলের মোট ১৭৫ জন পরীক্ষার্থীর সকলেই পাশ করেছেন। নব্বই শতাংশের বেশি নম্বর পেয়েছেন ১৪ জন। আশি শতাংশের বেশি নম্বর পেয়েছেন ৫৪ জন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৬ ০২:৫৩
Share:

নভোনীলকে সঙ্গে নিয়ে তাঁর জেনকিন্স স্কুলের বন্ধুরা। সোমবার কোচবিহারে হিমাংশুরঞ্জন দেবের তোলা ছবি।

মাধ্যমিকের পর উচ্চ মাধ্যমিকেও নজরকাড়া সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখল কোচবিহারের জেনকিন্স স্কুল।

Advertisement

এ বছর উচ্চমাধ্যমিকে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের মেধা তালিকা রাজ্যে দ্বিতীয় স্থান পেয়েছেন ওই স্কুলের ছাত্র নভোনীল দেব (৪৯২)। এমনকি পাশের হারও পুরো একশো শতাংশ। স্কুলের মোট ১৭৫ জন পরীক্ষার্থীর সকলেই পাশ করেছেন। নব্বই শতাংশের বেশি নম্বর পেয়েছেন ১৪ জন। আশি শতাংশের বেশি নম্বর পেয়েছেন ৫৪ জন। সব মিলিয়ে প্রথম বিভাগ প্রাপকের সংখ্যা ১৫৩ জন। এ বার মাধ্যমিকে ওই স্কুলের ছাত্র সৌরদীপ দাস ও মেহেদ উজ জামান রাজ্যে নবম ও দশম স্থান পেয়েছে। মোট ১২০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে সকলেই উত্তীর্ণ হয়। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের মেধা তালিকায় জোড়া সাফল্যের রেশ কাটতে না কাটতেই এদিন উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফলের সাফল্যে স্বাভাবিক ভাবেই বাড়তি উচ্ছ্বাসে মেতেছেন ওই স্কুলের শিক্ষক-অভিভাবক মহল। ছাত্রদের মধ্যেও এমন ধারাবাহিক সাফল্যে খুশির হাওয়া বইছে।

স্কুল সূত্রেই জানা গিয়েছে, এ বছর উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র নভোনীল দেবের পাশাপাশি নজরকাড়া নম্বর পেয়েছেন শুভজিৎ পাল (৪৭৫) ও ঋদ্ধিমান সাহা (৪৭৪)। কলা বিভাগে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছেন শিবসাগর দাস (৪৬৩)। বাণিজ্য বিভাগের পরীক্ষার্থীদের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছেন সায়ন সাহা (৪২৬)।

Advertisement

ধারাবাহিক ওই সাফল্যের রসায়ন কী ? এ নিয়েও তাই শুরু হয়েছে জল্পনা। জেনকিন্স স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দেবব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “স্কুলের শিক্ষক ও অভিভাবকদের সম্মিলিত চেষ্টাতেই এমন ধারাবাহিক সাফল্য মিলেছে। একই বছরে মেধা তালিকায় রাজ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় স্কুলের ছাত্রদের স্থান করে নেওয়া সত্যিই বাড়তি আনন্দের।” উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের কোচবিহার জেলা উপদেষ্টা মন্ডলীর যুগ্ম আহ্বায়ক পার্থপ্রতিম রায় বলেন, “শতবর্ষ প্রাচীন ওই স্কুল রাজ্যের শিক্ষা মানচিত্রে পরিচিত নাম। রাজ্য স্তরের মেধা তালিকায় সেখানকার পড়ুয়াদের স্থান পাওয়া নতুন ব্যাপার নয়। গত বছর মাধ্যমিকেও ওই স্কুলের পাঁচ জন পড়ুয়া পর্ষদের মেধা তালিকায় স্থান পেয়েছে। তবে সাম্প্রতিক কালের মধ্যে এ বছর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে একই বছরে মেধা তালিকায় স্কুলের পড়ুয়াদের স্থান পাওয়া সাফল্যেকে আরও উজ্জ্বলতর করেছে।”

স্কুল সূত্রেই জানা গিয়েছে, ফি বছর গড়ে চারটি অভিভাবক বৈঠক করা হয়। সেখানে কোন ছাত্রের কী সমস্যা সে সব তুলে ধরেন বিষয় ভিত্তিক শিক্ষকরা। কোনও ছাত্রের মনসংযোগের সমস্যা দেখা গেলে সে সব নিয়ে স্কুলের তরফে মনোবিদের পরামর্শ নেওয়া হয়। মনোবিদের পরামর্শ মেনে ছাত্রের কাউন্সেলিং করিয়ে কাজও হয়েছে। এ ছাড়াও পড়ুয়াদের খাতা ক্লাসে নিয়ম করে দেখে আলাদা করে ভুল শুধরে দিতে পরামর্শ দেওয়া হয়। একটু ‘পিছিয়ে’ থাকাদের ক্ষেত্রে বাড়তি নজর রাখা হয়। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের কথায়, ‘‘পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে অভিভাবক সভায় বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে আলোচনা করি। কোন ছাত্রের ব্যাপারে কী ভাবে যত্ন নিতে হবে, সে সব বুঝিয়ে বলা হয়। অভিভাবকরাও সেই অনুযায়ী সহযোগিতা করেন। শিক্ষক-অভিভাবকদের সম্মিলিত ওই চেষ্টাতে ধারাবাহিক সাফল্য আসছে।

তবে সমস্যাও কিছু রয়েছে। স্কুল সূত্রের খবর, মোট ৪৪টি শিক্ষক পদ অনুমোদিত থাকলেও আছেন ৩৬ জন। রসায়ন, অঙ্ক ও জীববিদ্যার ২টি করে শিক্ষক পদ খালি পড়ে রয়েছে। প্রায় দুই বছর ধরে খালি স্থায়ী প্রধানশিক্ষক পদ। গ্রন্থাগারিক না থাকায় লাইব্রেরি পুরোপুরি চালানোয় সমস্যা হচ্ছে। শিক্ষকদের দিয়ে কোনও রকমে কাজ চালান হচ্ছে। টিন শেডের কয়েকটি ক্লাসঘরেও সংস্কার দরকার।

সমস্যা সত্ত্বেও কোচবিহার সুনীতি অ্যাকাডেমিরও একশো শতাংশ ছাত্রী সফল হয়েছেন। সরকারি ওই স্কুলের ৩৪ জন শিক্ষিকার পদ অনুমোদিত হলেও আছেন ২১ জন। অঙ্কের শিক্ষিকা মাত্র একজন। তিনি ছুটি নিলে বা অসুস্থ হলে প্রাক্তন ছাত্রীদের সাহায্য নিয়ে ক্লাস চালাতে হয়। ভূগোল, বাংলা, আর্ট, মিউজিকের মতো বিভিন্ন বিষয়েও একটি করে পদ খালি থাকায় সমস্যা হচ্ছে। তারপরেও ওই স্কুলের ১৪৬ জন পরীক্ষার্থীর সবাই পাশ করেছেন। প্রথম বিভাগ পেয়েছেন ১৪৬ জন। ৯০ শতাংশের বেশি নম্বর ৯ জনের। ৮০ শতাংশের বেশি পেয়েছেন ৬৯ জন। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস বলেন, “সব শিক্ষিকাই ভীষণ পরিশ্রমী। অভিভাবকেরাও সহযোগিতা করেন। সবার চেষ্টাতে এমন সাফল্য।”

ওই দুটি নামী স্কুলের পাশাপাশি কোচবিহারের বিবেকানন্দ বিদ্যাপীঠ, চ্যাংরাবান্ধার চৌরঙ্গী হাইস্কুলের মতো একাধিক স্কুলে একশো শতাংশ পাশের হারের নেপথ্যেও এমন রসায়ন রয়েছে বলে শিক্ষানুরাগী মহলের অনেকেই মনে করছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন