যুগ্ম শ্রম আধিকারিককে স্মারকলিপি। — নিজস্ব চিত্র
‘অ্যালকেমিস্ট গ্রুপের’ পাহাড়ের তিনটি বাগানে অচলাবস্থার জেরে মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলল চা বাগান সংগ্রাম সমিতি। সোমবার সমিতির পক্ষ থেকে ওই গ্রুপের তিনটি বাগানের কর্মীরা শিলিগুড়ি এসে শ্রম দফতরের যুগ্ম কমিশনার (উত্তরবঙ্গ) সমীরকুমার বসুর সঙ্গে দেখা করে ওই দাবি তোলেন। শ্রম দফতরের তরফে যুগ্ম কমিশনার সব খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
শ্রম দফতর সূত্রের খবর, পাহাড়ের ধোতরে, পেশক এবং ক্যালেজভ্যালি চা বাগানে গত বছরের পুজোর আগে থেকেই ধীরে ধীরে অচলাবস্থা শুরু হয়। প্রথমে পুজোর বোনাস মালিকপক্ষ দেওয়ালির সময় দেন। তার পরে বাগানে কাজ চললেও শ্রমিকদের মজুরি, রেশন, পিএফ এবং গ্র্যাচুইটি অনিয়মিত হতে থাকে। এপ্রিল অবধি কিছু কিছু মজুরি মেটানো হলেও গত দুই মাস ধরে তা আর দেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু মালিকপক্ষ বাগানগুলিতে লকআউট বা সাসপেনশন অব ওয়ার্কের নোটিশও দেননি। এতে কাজ করে মজুরি-সহ সুযোগ সুবিধা না পেয়ে শ্রমিকেরা অনেকেই রাস্তার কাজ, ১০০ দিনের কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন।
বাগানের মালিকপক্ষের ভূমিকায় সন্তুষ্ট নয় শ্রম দফতরও। যুগ্ম কমিশনার সমীরবাবু বলেন, ‘‘আমরা মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে আইনি পথে যাচ্ছি। রাজ্য সরকারকে বিষয়টি জানানো হচ্ছে। শ্রমিকেরা কাজ করেও মজুরি-সহ সুয়োগ সুবিধা পাচ্ছেন না। মালিকপক্ষের প্রতিনিধি বৈঠকে আসছেন। টাকা মেটানো হবে বলছেন। কিন্তু তা করছেন না। এ ভাবে তো বেশি দিন চলতে পারে না।’’ শ্রম দফতরের তরফে ইতিমধ্যে পেমেন্ট ও ওয়েজেস অ্যাক্টে শোকজ করা হয়েছে। গ্র্যাচুইটি না দেওয়ার জন্য এবার আদালতে মামলার পথে এগোনো হচ্ছে। যদিও অ্যালকেমিস্ট গ্রুপের এমডি পবন বর্মার মোবাইল বন্ধ থাকায় তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
শ্রম দফতর সূত্রের খবর, তিনটি বাগানের আটটি ডিভিশন মিলিয়ে বাগানে স্থায়ী শ্রমিকের সংখ্যা ২৫৪৪ জন। অস্থায়ী শ্রমিক আছেন আরও অন্তত ৩ হাজার। সব মিলিয়ে প্রায় ১৫ হাজার শ্রমিক পরিবারের সদস্যরা বাগানের অচলবস্থার জেরে সমস্যায় পড়েছেন। শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি ৩৩ লক্ষ টাকা, কর্মীদের বকেয়া ৩৯ লক্ষ টাকা, গ্র্যাচুইটি ৫০ লক্ষ টাকা এবং পিএফ-সহ অন্যান্য বকেয়া ৫০ লক্ষ টাকা। গত ৩১ মে কর্তৃপক্ষের বকেয়া মেটানোর দিনক্ষণ থাকলেও তা করা হয়নি বলে অভিযোগ।
ইতিমধ্যে তিনটি বাগানের সিপিএম, কংগ্রেস, সিপিআরএম, জিএনএলএফ, তৃণমূল, মোর্চা-র সমস্ত সংগঠনের সদস্যরা মিলে জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটিও গড়েছে। চা বাগান সংগ্রাম সমিতির সঙ্গেও তাঁরা জড়িত। সংগঠনের জয়েন্ট কো-অর্ডিনেটর শমীক চক্রবর্তী, অভিজিৎ রায়রা জানান, ‘‘বাগানে শ্রমিক পরিবারগুলি চরম দুর্দশার মধ্যে দিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। বহু শ্রমিককে বাইরে কাজে যেতে হচ্ছে। আমরা যুগ্ম কমিশনারকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’’ এ দিন শ্রম দফতরে আসা শ্রমিকদের মধ্যে মণি নারায়ণ প্রধান, আনন্দ রাইস, পূরণ তামাঙ্গ, দীনেশ রাইরা জানান, বাগান বন্ধ নেই। পাতা তোলা হচ্ছে। চা হচ্ছে। তা বাইরে চলে যাচ্ছে। কিন্তু মজুরি নেই। তাই সরকারি ভাবে বন্ধ বাগান ভাতাও মিলছে না। রাস্তার কাজ, ১০০ দিনের কাজ, দোকানে কাজ করতে হচ্ছে। এ ভাবে কতদিন চলবে তাঁরা জানেন না। তাই সকলে মিলে মঞ্চ গড়ে আন্দোলনে নেমেছি। শ্রমিকদের পাশ এদিন দাঁড়ান উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক অজিত রায়। তিনি সংগ্রাম সমিতির পরামর্শদাতাও। অজিতবাবু বলেন, ‘‘শ্রমিকদের কথা বিভিন্ন মহলে পৌঁছতে আমরা ওঁদের পাশে এসেছি। শ্রমিক পরিবারগুলিতে স্কুল ছুটের সংখ্যাও বাড়ছে। যা বিশেষ চিন্তার।’’