অরূপ দে(বাঁ দিকে), অশোক মজুমদার(ডান দিকে)। — নিজস্ব চিত্র
স্কুলের পরিচালন কমিটির সভায় প্রধান শিক্ষককে গালাগাল ও নিগ্রহের অভিযোগ উঠল তৃণমূলের দুই নেতার বিরুদ্ধে।
বুধবার ধূপগুড়ি উচ্চতর মাধ্যমিক স্কুলের পরিচালন সমিতির সভায় পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান তথা স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি অরূপ দে ও পরিচালন কমিটির সদস্য নিলয় রায় তাঁকে নিগ্রহ করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন ওই প্রধান শিক্ষক অশোক মজুমদার। ধূপগুড়ি থানায় লিখিত অভিযোগও জানিয়েছেন তিনি। পাল্টা প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধেও থানায় অভিযোগ জানান অরূপবাবুরা। প্রধান শিক্ষককে হেনস্থা করার খবর ছড়িয়ে পড়তেই ধূপগুড়িতে চাঞ্চল্য ছড়ায়। শুরু হয় চাপানউতর। তবে বৃহস্পতিবার রাখি উৎসবের জন্য সব স্কুলই বন্ধ ছিল।
অরূপবাবু বলেন, “সভার জন্য নির্দিষ্ট সময়ের অনেক পরে প্রধান শিক্ষক আসেন। স্কুলের অ্যাকাউন্টে পুরনো বই, কাগজপত্র ও পুরনো জিনিস বিক্রি করার হিসাব চাইতে গেলে প্রধান শিক্ষক বেজায় চটে উঠেন। পরিচালন কমিটির সদস্য নিলয় রায়ের উপর চড়াও হয়ে ধাক্কাধাক্কি শুরু করেন। আমি ওঁদের থামানোর চেষ্টা করি। ”
প্রধান শিক্ষক অশোক মজুমদার অবশ্য অভিযোগ মানতে নারাজ। তিনি বলেন, “স্কুলের বেশ কিছু জরুরি ব্যাপারে আমি আগে কয়েকবার সভা ডাকার কথা বললে ভাইস চেয়ারম্যান পাত্তা দেননি। এ দিন সভা শুরু হওয়ার পর নানা কথা নিয়ে সদস্য নিলয় রায় উত্তেজিত হয়ে আমাকে গালিগালাজ শুরু করে। আমি নিলয়বাবুকে শান্ত হয়ে কথা বলার জন্য বলতে গেলে অরূপবাবু আমাকে মারতে আসেন। অপমানিত হয়ে সভা থেকে বের হয়ে যেতে চাইলে সবাই মিলে আমাকে আঘাত করে। চ্যাংদোলা করে তুলে ধাক্কা দিয়ে চেয়ারে বসিয়ে দেয়।’’ হিসেবে গড়মিলের অভিযোগও অস্বীকার করেন তিনি। ধূপগুড়ি থানার আই সি সঞ্জয় দত্ত জানান, ‘‘দুটি অভিযোগই খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করা হবে।’’
সভায় উপস্থিত পরিচালন কমিটির শিক্ষক প্রতিনিধি সদস্য মদন হার বলেন, “ পরিচালন কমিটির সদস্য ও সভাপতি হিসাব চাইতে গেলেই প্রধান শিক্ষক ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। তখন একটু উত্তেজনা তৈরি হয়। তবে মারধর হয়নি।”
প্রধান শিক্ষক অশোকবাবু শিক্ষক সংগঠন এবিটিএর সদস্য। সে জন্যই তৃণমূল পরিচালিত কমিটির সদস্যদের একাংশ এমন আচরণ করেছেন কি না তা নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। তবে প্রধান শিক্ষক অশোকবাবু বলেন, ‘‘আমি এবিটিএয়ের সদস্য হলেও প্রধান শিক্ষক হিসাবে স্কুলে কে কোন সংগঠনে আছে তা দেখি না।”
এবিটিএর জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক প্রসেনজিৎ রায় ঘটনার নিন্দা করেছেন। এবিটিএয়ের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার জলপাইগুড়ির জেলা শাসককে স্মারকলিপি দিয়ে অভিযুক্ত অরূপ দে ও নিলয় রায়ের শাস্তির দাবি জানানো হয়। প্রসেনজিৎবাবু বলেন, “এই আমলে শিক্ষকের উপর হামলার ঘটনা নতুন কিছু নয়। জেলার পুলিশ সুপারকে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। অভিযুক্তদের শাস্তি না হলে জেলা জুড়ে আন্দোলন শুরু হবে।”
এই ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার শহরের স্কুলগুলিতে ছাত্র ধর্মঘট ও প্রতিবাদ দিবসের ডাক দিয়েছে এসএফআই ও ডিওয়াইএফআই।