ভিন্ন সুর সার্কিট বেঞ্চ নিয়েও

উত্তরকন্যা সূত্রের খবর, ফালাকাটায়  সেতু উদ্বোধন করে শিলিগুড়িতে নিজের অফিসে এসেছিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। তড়িঘড়ি কয়েকটি ফাইল দেখে, হাতের কাজ সেরে জলপাইগুড়ির দিকে রওনা দেন তিনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি ও জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:৩৩
Share:

মঞ্চে: আন্দোলনকারীদের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। সঙ্গে সৌরভ চক্রবর্তীও। নিজস্ব চিত্র

উত্তরবঙ্গ উন্নয়নের পর্ষদের কাজের পরিধি নিয়ে মতান্তরের পর এ বার জলপাইগুড়ির সার্কিট বেঞ্চ। উত্তরের শাসক দলের দুই নেতা তথা মন্ত্রী গৌতম দেব এবং রবীন্দ্রনাথ ঘোষের মধ্যে সার্কিট বেঞ্চের আন্দোলন নিয়েও মতানৈক্য প্রকাশ্যে এল। সোমবার জলপাইগুড়িতে সার্কিট বেঞ্চের অস্থায়ী ভবনের সামনে ধরনা মঞ্চে গিয়েছিলেন পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব। মঙ্গলবার জলপাইগুড়িতে এলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। সোমবার গৌতম যা বলেছিলেন, এ দিন ধরনা মঞ্চে দাঁড়িয়ে সেটা খণ্ডন করলেন রবীন্দ্রনাথ। তিনি স্পষ্ট করে দিলেন, সরাসরি দিল্লি নয়, সার্কিট বেঞ্চ নিয়ে প্রথমে যাওয়া উচিত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। তিনি নির্দেশ দিলে তবেই দিল্লি।

Advertisement

উত্তরকন্যা সূত্রের খবর, ফালাকাটায় সেতু উদ্বোধন করে শিলিগুড়িতে নিজের অফিসে এসেছিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। তড়িঘড়ি কয়েকটি ফাইল দেখে, হাতের কাজ সেরে জলপাইগুড়ির দিকে রওনা দেন তিনি। এ দিন বিকেল ৪টে নাগাদ জলপাইগুড়ি পৌঁছন রবীন্দ্রনাথ। জলপাইগুড়িতে ধরনা ছ’দিন চলছে। শিলিগুড়ি, আলিপুরদুয়ার জেলা তৃণমূলের নেতারা এক এক দিন জলপাইগুড়িতে গিয়ে ধরনায় বসেছেন। কোচবিহারের কোনও প্রতিনিধিকে এত দিন অবধি দেখা যায়নি।

এখানেই প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি সোমবার গৌতম সার্কিট বেঞ্চের মঞ্চে গিয়েছিলেন বলেই মঙ্গলবার তড়িঘড়ি সেখানে আসার সিদ্ধান্ত নেন রবি?

Advertisement

রবির কাছ থেকে এ প্রশ্নের কোনও উত্তর মেলেনি। সভার পরে তিনি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথাই বলতে চাননি। তবে সভামঞ্চ থেকে শোনা গিয়েছে গৌতমের পাল্টা মতামত। সোমবার জলপাইগুড়িতে এসে গৌতম বলেছিলেন, ‘‘সার্কিট বেঞ্চের দাবিতে প্রয়োজন হলে দিল্লি গিয়ে আন্দোলন হবে। সংসদ ভবনের সামনে অবস্থান ধরনা হবে।’’ এর চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে রবি জানিয়ে দিয়েছেন, প্রথমেই দিল্লি নয়। সবার আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুমতি নিতে হবে। উত্তরবঙ্গের সব জনপ্রতিনিধিকে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে যাওয়ার নেতৃত্বের ব্যাটন যে তিনি নিজের কাছেই, রাখতে চান তা-ও বুঝিয়ে দিয়েছেন এ দিন।

উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী বলেন, “উত্তরবঙ্গের সব বিধায়ক, মন্ত্রী মিলে প্রথমে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে যাব। মমতার কাছে আর্জি জানিয়ে বলব, সার্কিট বেঞ্চের দাবিতে আমরা আন্দোলন করতে দিল্লি যেতে চাই। তিনি নির্দেশ দিলে দিল্লি গিয়ে আন্দোলন করব।”

এই নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করা হলে গৌতম অবশ্য মুখ খুলতে চাননি।

রবি-গৌতমের টক্কর উত্তরবঙ্গের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নতুন কিছু নয়। তবে ইদানীং তার ছাই ছাপা হয়ে ছিল বলে এর মধ্যেই টিপ্পনি কাটতে শুরু করেছেন কেউ কেউ। এ বারে সেই টক্করের প্রথম অঙ্ক অনুষ্ঠিত হয় সোমবার, উত্তরকন্যায় উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদের বৈঠকে। গৌতম সে দিন জানান, উত্তরবঙ্গ উন্নয়নের দফতরের বিভিন্ন কাজ যাতে আরও ভালভাবে হয়, তা পর্ষদ দেখবে। বছরের টাকা বছরে খরচ করার কথা বলা ছাড়াও নজরদারি এবং উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরে নানা প্রস্তাব দেওয়ার কথা বলেন। যদিও উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী তাঁর সতীর্থকে পর্যটন দফতরের কাজে মনোনিবেশ করার পরামর্শ দেন।

রবি বা গৌতম এ দিন প্রকাশ্যে মুখ খুলতে না চাইলেও তাঁদের ঘনিষ্ঠমহলে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। রবির ঘনিষ্ঠমহল সূত্রে জানা গিয়েছে, শাখা সচিবালয়ে নিজের উপস্থিতি জোরালো করতেই গৌতমের বৈঠকের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে উত্তরকন্যায় যান রবি। গৌতমের ঘনিষ্ঠমহল সূত্রে বলা হচ্ছে, সার্কিট বেঞ্চ নিয়ে এত দিন কোনও হেলদোলই দেখা যায়নি রবির। এ দিন নিজের অস্তিত্ব রক্ষা করতেই তিনি মঞ্চে এলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন