প্রকাশ্যেই চলছে ব্যবহার। — নিজস্ব চিত্র
শহরকে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ মুক্ত রাখতে পুরসভা অভিযানে নামলেও তা কতটা আন্তরিক তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কেন না রবিবার শিলিগুড়ির বিধানমার্কেটে যে মাছ, মাংসের বাজারে অভিযান চালিয়েছে পুর কর্মীরা, তাঁরা চলে যাওয়ার পর ওই বাজারের ব্যবসায়ীদের কয়েক জন প্রকাশ্যেই প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ খদ্দেরদের দিয়েছেন অভিযোগ।
এমনকী তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন পুরসভা দুই একটি বাজারে ঘুরে অভিযান করছে। অথচ যারা প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ মজুত করে রেখেছে মহাবীরস্থান-সহ কয়েকটি এলাকার এমন কিছু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাই নিচ্ছে না। লোক দেখাতে কয়েকটি অভিযান হচ্ছে মাত্র। তা নিয়ে তাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
বস্তুত, শহর প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ মুক্ত রাখতে পুরসভার ভূমিকা নিয়ে সন্দিহান ব্যবসায়ীদের একটা অংশই। তাঁদের অভিযোগ, প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগের বড় কারবারিদের সঙ্গে পুরসভার আঁতাত রয়েছে। তাই ছোট দোকানে অভিযানের নামে ধরপাকড়, জরিমানা হচ্ছে। অথচ যেখান থেকে তা সরবরাহ হচ্ছে সেগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না পুরসভা। এমনকী এদিন পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেবও পুরসভা ভূমিকা নিয়ে একই প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, ‘‘পুরসভা সদিচ্ছা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে বাসিন্দাদেরও। প্লাস্টিক লবির সঙ্গে পুর কর্তৃপক্ষের কোনও সমঝোতা রয়েছে বলে মনে হচ্ছে। আমরা তা নিয়ে আন্দোলনে নামব।’’
শহরের সুনাম পুরসভা রক্ষা করতে না পারলে তাঁরা আর চুপ করে বসে থাকবে না বলে তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। কলকাতা পুরসভা কেন প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ বন্ধ করতে পারছে না, শিলিগুড়ির মেয়র এই প্রশ্ন তোলায় পর্যটন মন্ত্রী বলেন, ‘‘শিলিগুড়িতে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ বন্ধ করার সঙ্গে কলকাতার বিষয় জড়িত নয়। পাহাড় এবং লাগোয়া সমতল, বনাঞ্চল, সমুদ্র সৈকতে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ তা আইনেই বলা রয়েছে। শিলিগুড়ি সে কারণেই প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ মুক্ত রাখতে হবে।’’
পুরসভার সাফাই বিভাগের মেয়র পারিষদ মুকুল সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘আমরা সমস্ত ধরনের ব্যবস্থাই নেব। এ দিন বিধান মার্কেটে আমিও গিয়েছিলাম। আমরা থাকার সময় প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ বাজেয়াপ্ত হয়েছে। কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। ব্যাপক ভাবে অভিযান চলবে। প্রয়োজন দ্রুত সমস্ত কাউন্সিলরদের নিয়ে বৈঠক ডাকা হবে। কিছু ব্যবসায়ী কথা শুনছেন না। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।’’ তবে এ দিন অভিযানের সময় যে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে তাদের কোনও জরিমানা করা হয়নি। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন বিধানমার্কেট এলাকা থেকে অন্তত ৩৫ কেজি প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
এ দিন অভিযানের পর গোবিন্দ ঘোষ, ববিতা রায়দের মতো ক্রেতাদের অনেককেই প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগে মাছ, মাংস নিতে দেখা গিয়েছে। গোবিন্দবাবু বলেন, ‘‘মাংস বিক্রেতাই তাঁকে ওই ক্যারিব্যাগ দিয়েছেন।’’ যদিও মাংস বিক্রেতা মহম্মদ আসলাম জানান, তাঁর দোকানের এক দিকে ওই ক্যারিব্যাগ পড়ে ছিল। খদ্দের তা নিয়েছে। তিনি দেননি। আরও কয়েক জন ব্যবসায়ীকেও প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ দিতে দেখা যায়। মহম্মদ আসলাম-সহ ব্যবসায়ীদের কয়েক জন প্রশ্ন তোলেন, যে সব দোকান থেকে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ সরবরাহ হচ্ছে সেগুলিতে কেন অভিযান হচ্ছে না?
পুরসভার এই ধরনের অভিযান নিয়ে পরিবেশ বিভাগের প্রাক্তন মেয়র পারিষদ তথা বর্তমানে ৩ নম্বর বরো চেয়ারম্যান সুজয় ঘটক বলেছেন, ‘‘আমাদের সময়ও প্লাস্টিক লবি বিভিন্ন পরামর্শ দিত। লোক দেখানোর জন্য অভিযান চালাতে বলত। তাদের কথা শুনলে উপঢৌকন দেওয়ার কথা বলত। পুরসভা যে ভাবে অভিযান চালাচ্ছে তা দেখে মনে হচ্ছে প্লাস্টিক লবির পরামর্শ মেনেই অভিযান হচ্ছে। কেন না পুর কর্মীরা ক্রেতাদের জরিমানা করছেন না। ব্যবসায়ীদেরও ছাড় দিচ্ছেন। এমন হলে তো কেউই কথা শুনবেন না।’’ সুজয়বাবুর দাবি, বরোগুলিতে পরিবেশ বিভাগের কর্মী নেই। প্লাস্টিক বন্ধ করতে বরোগুলি থেকেও অভিযান করা দরকার। তাঁরা কর্মী চেয়েও পাচ্ছেন না।