সেবকে ভাঙা শুরু হল অবৈধ নির্মাণ। — বিশ্বরূপ বসাক
তিস্তা নদীর চরের বিস্তীর্ণ এলাকা দখল করে চলছিল রিসর্টের কাজ। চারদিকে সবুজ জঙ্গল, মাথা উঁচু করে থাকা পাহাড়। ঘেরা বিরাট পাঁচিল। মাঝে কেয়ারটেকারের ঘর। বিশাল লোহার গেট। জাতীয় সড়ক থেকে রিসর্টে পৌঁছানোর কংক্রিটের রাস্তা। স্থানীয় লোকেরা জানতেন, অনুমতি নিয়েই একাধিক কটেজ থেকে রেঁস্তোরা, শিশুদের খেলার মাঠ— সবই নাকি তৈরি হচ্ছে!
শিলিগুড়ি শহর থেকে ২৩ কিলোমিটারের মধ্যে সেবকে এমন মনোরম পরিবেশে রিসর্টের অনুমতিও, কাগজপত্রও রয়েছে বলে মালিকপক্ষের তরফে জানানো হয়েছিল। ধীরে ধীরে প্রশ্ন উঠে নদীর চরে রিসর্ট! পুলিশ-প্রশাসন-সহ নানা মহলের একাংশের যোগসাজশের অভিযোগও ওঠে। খবর পৌঁছায় কলকাতা অবধিও। শেষে নড়েচড়ে বসে দার্জিলিং জেলা পুলিশ-প্রশাসন।
বুধবার সকালে সেবক বাজার এলাকার রীতিমত ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। দুটি বুলডোজারের সাহায্যে নির্মাণ কাজ একে একে ভেঙে গুড়িয়ে দিয়ে দখল নেওয়া হয় জমির। গোলমালের আশঙ্কায় জেলা পুলিশের কালিম্পঙের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অম্লান ঘোষ এবং ওসি সেবক দীপঙ্কর বিশ্বাস র্যাফ আর কমব্যাট ফোর্স নিয়ে এলাকায় ছিলেন শেষ অবধি। স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি করেন, ওই এলাকা খেলার মাঠ হিসাবে এখন ব্যবহার হবে। শিশু-কিশোরেরা ফুটবল, ক্রিকেট খেলবে।
দার্জিলিঙের জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব বলেন, ‘‘সরকারি জমি বেআইনিভাবে দখল করে নির্মাণ কাজ হচ্ছিল। পুরো জমি ডিআই ফান্ডের (ডিস্ট্রিক্ট ইমপ্রুভমেন্ট ফান্ড) আওতায় রয়েছে। কাউকে দেওয়া হয়নি। তাই সব নির্মাণ কাজ ভেঙে দেওয়া হয়েছে।’’ জেলাশাসক জানান, শুধুমাত্র লিজের জন্য আবেদন করে এক ব্যক্তি ওই জমি দখল করেছিলেন। দার্জিলিঙের পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি বলেন, ‘‘আইন শৃঙ্খলার কথা ভেবে পুলিশ বড় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল। আপাতত কোনও মামলা দায়ের হয়নি। সমস্ত কিছুই রিপোর্ট আকারে রাখা হয়েছে।’’
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, মহম্মহ তসলিম নামের কলকাতার পার্ক সার্কাস এলাকার এক প্রোমোটার প্রায় ১.১২ একর জমির দখল নেন বলে অভিযোগ। কোটি টাকা মূল্যের জমিটি তার লোকজন বছর খানেক আগে এসে ধীরে ধীরে তা বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘেরেন। সম্প্রতি দেওয়াল দিয়ে আরও নির্মাণ কাজ শুরু হয়। মাঝে ঘর করে কলকাতার নিউ মার্কেট এলাকার বাসিন্দা মহম্মদ লাডলাকে কেয়ারটেকার বসানো হয়। কিন্তু যেভাবে নদীর দিকে ফুট পাঁচেক দেওয়াল দেওয়া হয়েছিল, তাতে নদীর স্বাভাবিক গতিপথে বাঁধা হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। প্রশাসনিক তদন্তে, বেআইনি দখলদারি ছাড়াও বিপর্যয়ের বিষয়টি রয়েছে। তা ছাড়া স্থানীয় কিছু লোকজন মালিক পক্ষের সঙ্গে থাকায় আইন শৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কার কথাও রিপোর্টে ছিল। কিছু লোকজন সকালে দলবেঁধে এসে খোঁজও করেন।
নথি ঠিকঠাক ছিল না তা স্বীকার করে নিয়েছেন মহম্মদ তসলিমের আত্মীয় মহম্মদ রাজেন। তিনি শিলিগুড়িতে থেকে জমিটির কাজকর্ম দেখভাল করছিলেন। মহম্মদ রাজেন বলেন, ‘‘দার্জিলিঙে জমির লিজের জন্য আবেদন করা হয়। লিজও মিলবে বলে আশ্বাস পেয়েছিলাম। সেই কারণে ভূমি রাজস্ব দফতরে চিঠি দিয়ে সামান্য কিছু নির্মান করা হয়েছিল।’’
সেবকের ক্লাব শ্রদ্ধাঞ্জলী যুবক সঙ্ঘের সম্পাদক রবীন ছেত্রী, স্থানীয় মোর্চা নেতা রাজু লামা খবর পেয়ে এলাকায় আসেন। তাঁরা বলেন, প্রশাসন ঠিক কাজই করেছে। ছেলেমেয়েরা এখন এখানে খেলবে।