টানা বৃষ্টিতে ব্যাহত জীবন, পুজোর মুখে শঙ্কা বাজারে

আকাশের মুখ দেখে বোঝার উপায় নেই আশ্বিন না আষাঢ়। শুক্রবার রাত থেকে উত্তরবঙ্গে বিক্ষিপ্ত ভাবে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। আকাশ ছিল কালো মেঘে ঢাকা। শনি এবং রবিবার দু’দিন উত্তরবঙ্গের সর্বত্রই কয়েক দফায় বৃষ্টি হয়েছে। টানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত জনজীবন। তবে টানা বৃষ্টি আতঙ্কে রেখেছে পুজো উদ্যোক্তাদের। মাথায় হাত পড়েছে ব্যবসায়ীদের।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:৫৩
Share:

বালুরঘাটে দুর্যোগ।

আকাশের মুখ দেখে বোঝার উপায় নেই আশ্বিন না আষাঢ়। শুক্রবার রাত থেকে উত্তরবঙ্গে বিক্ষিপ্ত ভাবে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। আকাশ ছিল কালো মেঘে ঢাকা। শনি এবং রবিবার দু’দিন উত্তরবঙ্গের সর্বত্রই কয়েক দফায় বৃষ্টি হয়েছে।

Advertisement

টানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত জনজীবন। তবে টানা বৃষ্টি আতঙ্কে রেখেছে পুজো উদ্যোক্তাদের। মাথায় হাত পড়েছে ব্যবসায়ীদের। পুজোর আর সপ্তাহখানেক দেরি। রবিবার ছুটির দিন হওয়া স্বত্ত্বেও শিলিগুড়ি থেকে কোচবিহার বৃষ্টিতে বাজার ছিল ফাঁকা। উদ্বেগে মৎশিল্পীরাও। বৃষ্টি চলতে থাকলে মহালয়ার সকালে দেবীর চক্ষুদান নির্বিঘ্নে করা যাবে তো সেই প্রশ্নই মৃৎশিল্পীদের।

কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের জলপাইগুড়ি আঞ্চলিক শাখা সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় বক্সায় ১৫৫ মিলিমিটার, কুমারগ্রামে ১৩২ মিলিমিটার, ময়নাগুড়িতে ১০২ মিলিমিটার, হাসিমারায় ৯৯ মিলিমিটার, মূর্তিতে ৯৬ মিলিমিটার, জলপাইগুড়িতে ৯৩ মিলিমিটার, কোচবিহারে ৪২ মিলিমিটার এবং মাথাভাঙায় ৫২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।

Advertisement

রাতভর বৃষ্টিতে ধূপগুড়ির জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। টানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়ায় মণ্ডপ তৈরির কাজ বন্ধ হয়ে যায় অনেক এলাকাতেই। এ দিন সকাল থেকে ধূপগুড়ি-ফালাকাটা রোডের উপর দিয়ে অনেকটা নদীর মতো জলের স্রোত বয়ে গিয়েছে বলে বাসিন্দারা জানিয়েছেন।

ধূপগুড়ি ডাকবাংলো এলাকা বাজার চত্বর সহ পুরসভার ২, ৩, ১২, ১৪, ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় জল জমে যায়। গাদং, শালবাড়ি-২, মাগুরমারি-১, ঝারআলতা-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের কিছু এলাকাও জলমগ্ন হয়ে পড়ে। একই ছবি ছিল ময়নাগুড়িতেও। জল বন্দি হয়ে পরে কামারপাড়া, হাসপাতাল পাড়া, গোবিন্দনগর, দেবনাথ পাড়া, সুভাষনগর, সাহাপাড়ার বিস্তীর্ণ এলাকা। জরদা, ধরলা সহ বিভিন্ন ছোট নদীর জলস্তর বেড়েছে।

এ দিকে, বৃষ্টিতে হাট জলমগ্ন হয়ে পড়ায় পথ অবরোধ করে হ্যামিল্টনগঞ্জের ব্যবসায়ী এবং বাসিন্দাদের একাংশ। এ দিন সকাল সাড়ে নটা থেকে এগারোটা পর্যন্ত প্রায় দেড় ঘন্টা অবরোধ করে বিক্ষোভ চলে। পরে পুলিশের আশ্বাসে অবরোধ ওঠে। হ্যামিল্টনগঞ্জ হাট ব্যবসায়ীর সম্পাদক ভৈরব গুপ্তা অভিযোগ করে বলেন, “পুজোর আগে ভাল বিক্রির আশায় ছিলেন সকলে। যদিও হাট জলমগ্ন হয়ে পড়ায় তা হয়নি। দীর্ঘদিন দাবি জানিয়েও সংস্কার কাজ না হওয়াতেই এই বিপত্তি।”

উত্তরবঙ্গ বন্যা নিয়ন্ত্রণ কমিশনের মুখ্য বাস্তুকার গৌতম দত্ত বলেন, “বড় নদীগুলির জলস্তর স্বাভাবিক আছে। তবে আগামী ২৪ ঘণ্টায় ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে।”

বৃষ্টিতে পুজো উদ্যোগ ব্যহত হয়েছে উত্তর দিনাজপুরেও। দুপুর একটা থেকে রায়গঞ্জ, কালিয়াগঞ্জ, ইটাহার, হেমতাবাদ, চাকুলিয়া, করণদিঘি, গোয়ালপোখর, ইসলামপুর ও চোপড়া এলাকায় টানা বৃষ্টি শুরু হয়। সন্ধ্যা পর্যন্ত বৃষ্টি চলছে। টানা বৃষ্টির জেরে রায়গঞ্জের অশোকপল্লি, শক্তিনগর, রবীন্দ্রপল্লি, বিধাননগর, বীরনগর, মিলনপাড়া, উকিলপাড়া, দেবীনগর সহ শহরের বিভিন্ন পাড়ায় জল জমে যায়। বৃষ্টির জন্য শহরের অনেক পুজোমণ্ডপ তৈরির কাজ থমকে যায়। দিনভর বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয় কোচবিহারের জনজীবনও।

কোচবিহারের একটি পুজো কমিটির কর্মকর্তা রাকেশ চৌধুরী বলেন, “তুমুল বৃষ্টিতে রবিবার প্যান্ডেলের কাজ বন্ধ রাখতে হয়। বৃষ্টি আরও দু’একদিন থাকলে কাজ শেষ করা যাবে কিনা তা নিয়েই চিন্তায় রয়েছি।”

এ দিন বাজারের বেশিরভাগ দোকানেই ক্রেতাদের তেমন ভিড় ছিল না। জামাকাপড় থেকে জুতো, প্রসাধনী সামগ্রী দোকান ছিল প্রায় সুনসান। জেলা বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক উত্তম কণ্ডুু বলেন, “সব মিলিয়ে এক দিনে অন্তত ৫০ লাখ টাকার ব্যবসা ক্ষতি হয়েছে।” শহরের সুনীতি রোড, কেশব রোড, বিশ্বসিংহ রোড, বাদুর বাগান, স্টেশন রোডের মত এলাকায় টানা বৃষ্টিতে জল জমে যায়।

জলপাইগুড়ি-শিলিগুড়িতেও পুজোর মুখে বৃষ্টিতে পুজো উদ্যোক্তাদের মুখ ভার। টানা বৃষ্টিতে তাপমাত্রাও কমে যায় অনেকটাই। জলপাইগুড়িতে সন্ধ্যাতেও ফাঁকা দেখা গিয়েছে দিনবাজার, কদমতলা, ডিবিসি রোডের মতো বাণিজ্যিক এলাকায় যদিও রবিবার দুপুরের পর থেকে শিলিগুড়িতে বৃষ্টি না হওয়ায় পুজোর বাজার তুলনামুলক ভাবে জমে ওঠে। শ্রেঠ শ্রীলাল মার্কেট, বিধান মার্কেট, হিলকার্ট রোডে ভিড় দেখা গিয়েছে বাসিন্দাদের।

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন