এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠান ঘিরেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। সোমবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
শাসক দলের বিধায়কদের সরকারিভাবে সংবর্ধনা দিয়ে বিতর্কে জড়ালেন তৃণমূল পরিচালিত উত্তর দিনাজপুর জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে, ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সরকারি অনুষ্ঠানে দলবাজি করার অভিযোগ তুলে সরব হয়েছে কংগ্রেস ও বামফ্রন্ট।
সোমবার রায়গঞ্জের কর্ণজোড়ায় জেলা পরিষদের সভাকক্ষে গোয়ালপোখরের তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের পর্যটন দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রী গোলাম রব্বানি, চোপড়ার তৃণমূল বিধায়ক হামিদুর রহমান ও করণদিঘির তৃণমূল বিধায়ক মনোদেব সিংহকে ফুল, মিষ্টি ও নানা উপহারসামগ্রী দিয়ে সংবর্ধনা জানানো হয়। সরকারি উদ্যোগে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন হওয়ায় সেখানে হাজির ছিলেন জেলাশাসক তথা জেলা পরিষদের নির্বাহী আধিকারিক রণধীর কুমার, পুলিশ সুপার অমিতকুমার ভরত রাঠৌর, অতিরিক্ত জেলাশাসক তথা জেলা পরিষদের অতিরিক্ত নির্বাহী আধিকারিক বিনয় শিকদার, জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জগন্নাথ সরকার সহ প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিরা। ছিলেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি আলেমা নুরিও।
ওই ঘটনার কথা জানাজানি হতেই কংগ্রেস ও বামেদের তরফে তৃণমূল পরিচালিত জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সরকারি অনুষ্ঠানে দলবাজি করার অভিযোগ তোলা হয়। বিরোধীদের অভিযোগ, সরকারি উদ্যোগে জেলার নব নির্বাচিত বিধায়কদের সংবর্ধনা দেওয়ার নামে জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ শুধু তৃণমূল বিধায়কদেরই আমন্ত্রণ জানিয়ে সংবর্ধনা জানিয়েছেন। জোটের বিধায়কদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
জেলাশাসক রণধীর কুমার অবশ্য অভিযোগ শুনলেও বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘কেনও বাকি বিধায়কদের ডাকা হল না, সেই বিষয়ে যাঁরা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন তাঁদের জিজ্ঞেস করুন।’’
জেলা পরিষদের সভাধিপতি আলেমা নুরি ও সহকারী সভাধিপতি পূর্ণেন্দু দে’র দাবি, গত পাঁচ বছরে একাধিক সরকারি অনুষ্ঠানে উন্নয়নের স্বার্থে বিরোধী দলের বিধায়কদের আমন্ত্রণ জানানো হলেও তাঁরা কেউই হাজির হননি। তাঁদের কথায়, ‘‘অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা বিরোধী দলের বিধায়কদের আমন্ত্রণ জানাইনি। তাছাড়া জেলা পরিষদ তৃণমূল পরিচালিত হওয়ায় তাঁরা কেউই আসতেন না। এখানে দলবাজির কোনও ব্যাপার নেই।’’
জেলায় মোট ন’জন বিধায়ক রয়েছেন। এ দিন জেলা পরিষদের তরফে সরকারিভাবে সংবর্ধনা নেওয়ার জন্য এক প্রতিমন্ত্রী সহ তৃণমূলের ওই চার বিধায়ক আমন্ত্রণ পেলেও জোটের বাকি পাঁচ বিধায়ককে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি বলে অভিযোগ। তাঁরা হলেন, রায়গঞ্জ, কালিয়াগঞ্জ ও ইসলামপুরের তিন কংগ্রেস বিধায়ক মোহিত সেনগুপ্ত, প্রমথনাথ রায়, কানাইয়ালাল অগ্রবাল, হেমতাবাদের সিপিএম বিধায়ক দেবেন্দ্রনাথ রায় ও চাকুলিয়ার ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক আলি ইমরান রমজ।
জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক পবিত্র চন্দের দাবি, জেলা পরিষদ জেলার ন’টি বিধানসভা এলাকায় উন্নয়নের কাজ করে। জেলা পরিষদ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে তৈরি একটি সরকারি সংস্থা। সরকারিভাবে সেই সংস্থার কোনও রঙ নেই। তিনি বলেন, ‘‘জেলা পরিষদের তরফে সরকারিভাবে জেলার নবনির্বাচিত বিধায়কদের সংবর্ধনা দেওয়ার নামে শুধু তৃণমূল বিধায়কদের সংবর্ধনা দেওয়া হল। জোটের বিধায়কদের আমন্ত্রণই জানানো হল না। পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তাদের মদতে জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ সরকারি অনুষ্ঠানে দলবাজি করলেন।’’
সিপিএমের জেলা সম্পাদক তথা জেলা বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান অপূর্ব পালের দাবি, দল ও প্রশাসন মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে। এ দিন জেলা পরিষদের তরফে সরকারিভাবে সংবর্ধনার অনুষ্ঠানে জোটের বিধায়কদের আমন্ত্রণ না জানানোর ঘটনায় আরেকবার তা স্পষ্ট হল। তিনি বলেন, ‘‘এখন তো মনে হচ্ছে জেলার যে সমস্ত বিধানসভা এলাকায় জোটপ্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন, সেইসব এলাকায় জেলা পরিষদ কোনও উন্নয়ন করবে না।’’