ডুয়ার্সের নদীতে বাঁধ তৈরি করতে গিয়ে বির্তকের মুখে পড়েছে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর। কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে এলাকার তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরাই গত শনিবার থেকে বাঁধের কাজ আটকে দিয়েছিল বলে অভিযোগ। প্রশাসন সূত্রে অবশ্য জানা গিয়েছে, আজ সোমবার থেকে ফের কাজ শুরু হবে। ঘটনাটি ডুয়ার্সের বানারহাটের খয়েরকাটা গ্রামে। ডায়না নদীতে প্রায় আড়াই কিলোমিটার বাঁধ তৈরিতে ২ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর। বরাদ্দ করে নিজেরাই টেন্ডার করে কাজ শুরু করে। গত এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি থেকে কাজ শুরু হয়। যদিও, তারজালি তৈরি করে বোল্ডার ফেলার প্রাথমিক কাজ শুরু হতেই এলাকারই তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা কম ওজনের বোল্ডার ফেলা হচ্ছে বলে প্রতিবাদ করে কাজ বন্ধ করে দেন। যদিও, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর থেকে জানানো হয়েছে, সরকারি নিয়ম মেনেই বোল্ডার ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কাজের বিস্তারিত খোঁজ নেওয়া হবে বলেও দফতরের তরফে দাবি করা হয়েছে।
এতদিন নদী বা বাঁধের কোনও কাজে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর অর্থ বরাদ্দ করলেও, নির্মাণ বা সংস্কার কাজ করত সেচ দফতর। করলা অ্যকশন প্ল্যান সহ জলপাইগুড়ি জেলাতেই এমন একাধিক প্রকল্প রয়েছে। সূত্রের খবর, চলতি বছর থেকে ছোট বা মাঝারি বাঁধের কাজ, যেখানে কারিগরি প্রযুক্তির বেশি প্রয়োজন নেই সেই প্রকল্পগুলি উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর নিজেই করবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। সেই মতো ডায়না নদীতেও বাঁধ তৈরির কাজ শুরু করে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর। এ বিষয়ে সেচ দফতরকে কিছু জানানোও হয়নি বলে অভিযোগ। বাঁধ তৈরির কাজ শুরু হয়ে গেলেও, সেচ দফতর কর্তারা কিছুই জানেন না বলে অভিযোগ। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের কথায়, ‘‘গ্রামীণ এলাকা পরিকাঠামো উন্নয়নের টাকায় কাজ হচ্ছে। সেচ দফতরকে জানানো হয়েছে কিনা খোঁজ নেব। কাজের বিষয়ে যে অভিযোগ উঠেছে তাও খতিয়ে দেখা হবে।’’ সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ও বিষয়টি খোঁজ নেবেন বলে জানিয়েছেন।
গত শনিবার থেকেই বাঁধের কাজ বন্ধ করে দেন বাসিন্দাদের একাংশ। স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের নেতৃত্বেই বিক্ষোভ দেখিয়ে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। বোল্ডার বা পাথরের যে মাপ এবং ওজন নির্দিষ্ট করে দেওয়া আছে তা মানা হচ্ছে না বলেই অভিযোগ করেন স্থানীয় তৃণমূল নেতারা। এ ছাড়া স্থানীয় বাসিন্দাদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে শ্রমিক হিসাবে কাজে নেওয়ারও দাবিও ওঠে। অভিযোগ, ১০ থেকে ২৫ কেজি ওজনের পাথর দিয়ে বাঁধ তৈরির নিয়ম থাকলেও, তা মানা হচ্ছিল না বলে অভিযোগ। তৃণমূলের আংরাভাষা ১নম্বর অঞ্চল সভাপতি পৃথ্বীরাজ ছেত্রীর অভিযোগ, ‘‘বাঁধের কাজ নিয়ম মেনে না হলে, পরবর্তীতে ক্ষতির আশঙ্কা থাকতে পারে। বোল্ডার শক্তিশালী না হলে বাঁধও মজবুত হবে না। সে কারণেই কাজে আপত্তি জানানো হয়েছে।’’ যদিও, ঠিকাদারি সংস্থার তরফে বাদশা রায় দাবি করে বলেন, ‘‘কাজ নিয়ম মেনেই হচ্ছে। বাসিন্দাদের সে কথা বোঝানোও হয়েছে। সকলের সম্মতিতেই ফের সোমবার থেকে কাজ শুরু করা হবে।’’
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের মুখ্য বাস্তুকার চন্দন কুমার দাস বলেন, ‘সরকারি নির্মাণ সংস্থার মারফত কাজটি করানো হচ্ছে। সেচ দফতরকে ছাড়াও বাঁধের কাজ করা যেতে পারে।’’ যদিও, দফতরের বাস্তুকারদের একাংশের দাবি, বাঁধ নির্মাণের কাজে দফতরের অনভিজ্ঞতা এবং সেচদফতরকে না জড়িয়ে কাজ করতে গিয়েই বিপাকে পড়তে হয়েছে। সেচ দফতর অবশ্য দাবি করেছে, এলাকায় বাঁধ নির্মাণের প্রয়োজন ছিল। তবে সমীক্ষা বা কোনও মতামতই দফতরের থেকে নেওয়া হয়নি। নাগরাকাটা ব্লকের আংরাভাষা ১নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিএমের প্রধান বিষ্ণু খেড়িয়া বলেন, ‘‘বাঁধ নির্মাণের কাজের বিষয়ে আমাদের জানা নেই।’’
সরকারি কাজ বন্ধে তৃণমূল নেতাদের নাম জড়িয়ে যাওয়ায় দলের অন্দরেও বির্তক চলছে। তবে, কাজ বন্ধের বিষয়ে দলের কোনও অনুমোদন নেই বলে জানিয়েছেন জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন থাকলে তা প্রশাসনিক স্তরে জানাতে হবে। সরকারি কাজ বন্ধ করা অনুচিত হয়েছে।’’