খেলার মাঠে রাস্তা তৈরি নিয়ে নাগরিক কনভেনশন ডাকার দাবি উঠেছে ধূপগুড়িতে। শহরের প্রাক্তন খেলোয়াড় এবং ক্রীড়াপ্রেমীদের অধিকাংশই দাবি করেছেন, নাগরিকদের মতামত নিয়েই ধূপগুড়ির একমাত্র খেলার মাঠ নিয়ে পুর কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ করা উচিত ছিল।
চার দিকে পাঁচিল দিয়ে ঘেরা খেলার মাঠের এক পাশে সম্প্রতি রাস্তা তৈরি করতে শুরু করেছে ধূপগুড়ি পুরসভা। রাস্তা তৈরির জন্য পাঁচিলের এক পাশের অংশ ভাঙতেও হবে। পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, মাঠের এক পাশে নর্দমার ওপরে কংক্রিটের পাটাতন পেতে পাশে রাস্তা তৈরি হবে। প্রায় সাড়ে ৭ ফুট চওড়া রাস্তা তৈরি হওয়ার কথা। এর ফলে নর্দমার পাশে মাঠের অন্তত সাড়ে ৪ ফুট রাস্তার ‘দখলে’ চলে যাবে। রাস্তার পাশে বেড়া তৈরি করে মাঠটি ঘিরে দেওয়ার কথা পুরসভা জানালেও, ক্রীড়াপ্রেমীদের দাবি, এর ফলে এক দিকে যেমন মাঠের আয়তন কমে যাবে, তেমনিই ওই দিকে স্টেডিয়াম বা গ্যালারি তৈরির সম্ভাবনাও নষ্ট হয়ে যাবে।
পুর কর্তৃপক্ষের দাবি, রাস্তা তৈরি হলে মাঠের ক্ষতি হবে না। রাস্তা তৈরি হলে মাঠের এক দিকে থাকা মাস্টার কোয়ার্টার পাড়া-সহ লাগোয়া এলাকার বাসিন্দাদের বাজার-স্কুলে যাওয়ার সোজা পথ খুলে যাবে। যদিও, বিরোধী সিপিএমের দাবি, চার বছর ধরে ধূপগুড়িতে তৃণমূলের পুরবোর্ড থাকলেও, রাস্তার কথা পুর কর্তৃপক্ষ ভাবেননি। সম্প্রতি মাস্টার কোয়ার্টার পাড়ায় তৃণমূল নেতা গুড্ডু সিংহ বাড়ি তৈরি করার পরেই রাস্তার কাজ শুরু করেছে পুরবোর্ড। তৃণমূল নেতার পরিবারের সদস্যদের কথা ভেবেই পুরসভা খেলার মাঠের জায়গা নিয়ে রাস্তা তৈরি করছে বলে সিপিএমের অভিযোগ। বিতর্কের মুখে পড়ে পুর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, আপাতত মাঠের ধারের নর্দমার উপরে কংক্রিটের পাটাতন তৈরি হবে। পরে এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে আলোচনা করে পদক্ষেপ করা হবে। যদিও, শহরের ক্রীড়াপ্রেমীদের দাবি, নাগরিক কনভেনশন করেই সিদ্ধান্ত নিক পুরসভা।
ধূপগুড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান শৈলেন রায় এ দিন বলেন, ‘‘অনর্থক বির্তক তৈরি হচ্ছে। প্রয়োজনে আমরা বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে নেব। নাগরিক কনভেনশন ডাকার কোনও প্রস্তাব এখনও আমাদের কাছে আসেনি। তবে বোর্ড মিটিঙে এ বিষয়ে আলোচনা করব।’’ তৃণমূল নেতা গুড্ডু সিংহ অবশ্য দাবি করেছেন, রাজনৈতিক কারণেই যাবতীয় অভিযোগ করা হয়েছে। রাস্তা তৈরিতে তাঁর কোনও ব্যক্তিগত সুবিধে হওয়ার প্রশ্ন নেই বলে তিনি দাবি করেছেন।
এক সময়ে ধূপগুড়ি হাইস্কুলের মাঠ বলে পরিচিত ফুটবল মাঠ বাঁচাতে আন্দোলন শুরু হয় শহরে। ক্রীড়াপ্রেমীদের দাবি মেনে সে সময় পুরসভা মাঠটিকে পাঁচিল দিয়ে ঘিরে দেয়, রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব তুলে নেয় পুরসভা। শহরের একমাত্র ফুটবল মাঠে স্টেডিয়াম এবং গ্যালারি তৈরির প্রস্তাবও রয়েছে। বাম বোর্ডের আমলেই মাঠটিকে ঘিরে দেওয়া হয়। বর্তমানে পুরসভার বিরোধী আসনে বামেরা। মাঠের এক দিকের পাঁচিলের অংশ ভেঙে রাস্তা তৈরির বিরোধিতা করেছেন তাঁরা। শহর জুড়ে পোস্টারও লাগাতে শুরু করেছে সিপিএমের যুব সংগঠন।
পুরসভার বিরোধী দলনেতা বাদল সরকার অভিযোগ করে বলেন, ‘‘পুরসভার তরফে বাসিন্দাদের দাবির কথা বলে যুক্তি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বাসিন্দাদের কোনও লিখিত স্মারকলিপি পুর কর্তৃপক্ষ দেখাতে পারবেন কিনা সন্দেহ রয়েছে। বাসিন্দাদের দাবি যদি মানতেই হয়, তবে পুর কর্তৃপক্ষ শহরের সর্বস্তরের বাসিন্দাদের ডেকে কনভেনশন করে মতামত নিক। কারণ শহরের একমাত্র খেলার মাঠের উপর সকলের অধিকার রয়েছে।’’
খেলার মাঠ কী অবস্থায় রয়েছে তা খতিয়ে দেখতে পরিদর্শনের কথা জানিয়েছে জলপাইগুড়ি জেলা ক্রীড়া সংস্থা। এ বছর জেলা ফুটবল লিগের জোন ভিত্তিক খেলা ধূপগুড়িতে হওয়ার কথা রয়েছে। ফুটবল মাঠেই জোনের খেলা হওয়ার কথা। মাঠ ছোট হয়ে গেলে সেই খেলাও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে বলে ক্রীড়া সংস্থার সূত্রে জানা গিয়েছে। সে কারণেই ক্রীড়াপ্রেমীদের দাবি সকলের মতামত নিয়ে পুরসভা পদক্ষেপ করুক।