ঠিকানার জন্য বিকল্প ভাবনা পুরসভার

কোচবিহার পুরসভার চেয়ারম্যান ভূষণ সিংহ বলেন, ‘‘ওই ভবনটিকে কাজে লাগানোর চেষ্টা হচ্ছে। তবে  ভবনটিকে বৃদ্ধাশ্রম বা অন্য কোনও কিছু করা যেতে পারে। বোর্ড মিটিংয়ে আলোচনা করে ওই ব্যাপারে রাজ্য পুর দফতরের কাছে প্রস্তাব দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৭:৫০
Share:

ফাঁকা: এ ভাবেই পড়ে রয়েছে ভবন। নিজস্ব চিত্র

উদ্বোধনের এক বছর বাদেও ফাঁকা পড়ে ‘ঠিকানা’। প্রাসাদোপম বাড়িটি এতদিনেও শহরের গৃহহীন ভবঘুরেদের ঠিকানা হয়ে ওঠেনি। তাই এ বার ভবনটিকে ‘বৃদ্ধাশ্রম’ করে তোলার ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে কোচবিহার পুরসভা কর্তৃপক্ষ। তবে ওই ব্যাপারে পুরসভার বোর্ড মিটিংয়ে আলোচনা করে এগোতে চান তাঁরা। ওই আলোচনায় সবুজ সঙ্কেত মিললে রাজ্য পুর দফতরেও ওই পরিকল্পনার কথা জানানো হবে বলে খবর। পুরসভার আশা, সব ঠিক ভাবে এগোলে ও আইনি সমস্যা না থাকলে ওই অনুমতি পাওয়া যেতে পারে।

Advertisement

কোচবিহার পুরসভার চেয়ারম্যান ভূষণ সিংহ বলেন, ‘‘ওই ভবনটিকে কাজে লাগানোর চেষ্টা হচ্ছে। তবে ভবনটিকে বৃদ্ধাশ্রম বা অন্য কোনও কিছু করা যেতে পারে। বোর্ড মিটিংয়ে আলোচনা করে ওই ব্যাপারে রাজ্য পুর দফতরের কাছে প্রস্তাব দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।’’

পুরসভা সূত্রেই জানা গিয়েছে, ‘শেল্টার ফর আরবান’ প্রকল্পে প্রায় এক কোটি টাকা খরচ করে কোচবিহার শহরের বিবেকানন্দ স্ট্রিটে ওই ভবনটি তৈরি করা হয়। চারতলা ওই বাড়িতে গৃহহীন ভবঘুরেদের রাখার কথা ছিল। সেই মতো শহরের বাসস্ট্যান্ড, স্টেশন, মদনমোহন মন্দির ও লাগোয়া বিভিন্ন এলাকায় রাতে অভিযান চালানো হয়। তালিকা চাওয়া হয় পুরসভার বিভিন্ন কাউন্সিলরদের কাছেও। শুরুতে ২৪ জনের তালিকা করা হয়। শেষ পর্যন্ত অবশ্য কয়েকজন থাকতে রাজিও হন। কিন্তু অল্প দিনেই ‘ঠিকানা’ ছেড়ে বেরিয়ে আসেন তাঁরা। তাই বিশাল ওই বাড়ি ফাঁকাই পড়ে। অনেক প্রয়োজনীয় জিনিসও প্যাকেটবন্দি।

Advertisement

গত বছর ডিসেম্বরে ওই বাড়ির উদ্বোধন হলেও কেন এতদিনেও তা সেভাবে চালুই হয়নি? বিরোধীদের বক্তব্য, শহরের প্রাণকেন্দ্রে ভবনটি করা হলে ওই সমস্যা হত না। অনেকটা দূরে বলেই ভবঘুরেরা কেউ বিবেকানন্দ স্ট্রিট এলাকায় যেতে রাজি হচ্ছেন না। তাই কোটি টাকার প্রকল্পের এমন দশা। সিপিএমের জেলা সম্পাদক মণ্ডলির সদস্য তথা পুরসভার বিরোধী দলনেতা মহানন্দ সাহা বলেন, ‘‘ঠিকানার জমির ঠিকানা চূড়ান্ত করাই ঠিক হয়নি। শহরের প্রাণকেন্দ্রে বাড়িটি হলে সমস্যা হত না। তাই খোলা আকাশের নীচে থাকা মানুষেরাও ওই ভবনমুখী হচ্ছেন না। তবে ইচ্ছে করলেই একটি প্রকল্প অন্য কাজে লাগানো যায় না। এ ব্যাপারে বোর্ড মিটিংয়ে প্রস্তাব এলে আলোচনা হবে।’’ কোচবিহারের বাসিন্দা বিজেপির জেলা নেতা বিরাজ বসু বলেন, ‘‘পুরসভার ব্যর্থতাতেই যাঁদের জন্য ঠিকানা করা, সেটা এতদিনেও তাঁদের কোনও কাজে লাগল না। বিপুল টাকা খরচের আগে আরও ভাবা উচিত ছিল। ভবিষ্যতেও ওরা ভেবে কাজ করুন।’’

পুরসভা সূত্রেও খবর, দিনে শহরের বিভিন্ন এলাকায় ভিক্ষাবৃত্তি করেন ভবঘুরে ও গৃহহীনদের অনেকে। ঠিকানায় থাকতে গেলে তাঁদের অনেকে দৈনিক ২০ টাকা টোটো ভাড়া যাতায়াতের খরচের দাবি করছেন। পুরসভার চেয়ারম্যানের কথায়, ‘‘যাঁরা টাকা দাবি করেছিলেন, তাঁদের টোটো ভাড়া দেওয়া সম্ভব নয় বলা হয়েছে।’’ তাহলে কি ফাঁকা পড়ে নষ্ট হবে বাড়িটি? চেয়ারম্যানের জবাব, ‘‘সেটা চাই না বলেই তো বিকল্প ভাবনা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন