সঞ্জয় ধর
পুজোর সময় বাড়ি আসবেন না বলেছিলেন। তাতে তাঁর পরিবারের সঙ্গে সঙ্গে মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল প্রতিবেশীদের। কোচবিহারের দিনহাটার বড়োশাকদল গ্রামের সঞ্জয় ধরকে (৩২) ভালবাসতেন গোটা গ্রামই।
বুধবার যখন সেই সঞ্জয়েরই মৃত্যু সংবাদ আসে, গোটা গ্রামই শোকস্তব্ধ হয়ে পড়ে। মঙ্গলবার জম্মুর পিট্টল আউটপোস্টে পাকিস্তান রেঞ্জার্সের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন বিএসএফের ১৯২ ব্যাটেলিয়নের কনস্টেবল সঞ্জয়। বিএসএফ সূত্রে জানা গিয়েছে, কোনও প্ররোচনা ছাড়াই পাকিস্তান রেঞ্জার্স সে দিন হামলা করে।
বড়োশাকদলের মানুষ জানাচ্ছেন, সঞ্জয় নিজেই পড়শিদের খোঁজখবর করতেন। কার বাড়িতে কী সমস্যা তা জানতেন। সাধ্য মতো সাহায্যের চেষ্টাও করতেন। মোটরবাইক নিয়ে ঘুরে ঘুরে খবর নিতেন, যাঁর শরীর খারাপ তিনি এখন কেমন রয়েছেন। যাঁর জমিতে চাষের সমস্যা তিনি কোনও সমাধান পেয়েছেন কি না। যখন বাড়িতে থাকতেন, তখন দেড় বছরের মেয়ে জয়িতাকে কাছ ছাড়া করতেন না। বৃহস্পতিবার বিকেলে যখন সঞ্জয়ের দেহ পৌঁছয় গ্রামে, তাঁর বাড়ির উঠোনে ভেঙে পড়ে সারা গ্রাম। জয়িতা বারবার জিজ্ঞাসা করছিল, এত লোক কেন এসেছে? উত্তর ছিল না কারও কাছে।
সবার মুখে একটাই কথা, এত ভাল ছেলেকে কেন অকালে চলে যেতে হল! পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ছয় ফুট উচ্চতার সঞ্জয় ছোট বেলা থেকেই শক্তপোক্ত চেহারার। কম বয়স থেকেই বিএসএফের চাকরির প্রতি ঝোঁক ছিল। ২০০০ সালে তিনি বিএসএফের চাকরি পান। তারপরে ১৪ বছরের চাকরি জীবনে অসম, পশ্চিমবঙ্গ, মণিপুর, ত্রিপুরা, রাজস্থান থেকে শুরু করে বহু সীমান্তে ঘুরেছেন। বছরে অন্তত দু’বার বাড়ি ফিরতেন লম্বা ছুটি নিয়ে। জুন মাসের প্রথমেই ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসেন। তারপরেই রাজস্থান থেকে তাঁর বদলি হয়েছে জম্মু সীমান্তে। ১৪ জুন তিনি রওনা হন জম্মু। তাঁর মা যোগমায়াদেবী বলেন, “রোজ ফোন করত। বাড়ির টান ছিল খুব।” মঙ্গলবার সকালেও ফোন করেন স্ত্রী মৌসুমীদেবীকে। এ দিন কোনওমতে তিনি বললেন, “এক মুহূর্তে সব কিছু ছারখার হয়ে গেল।”
বাবার অপেক্ষায়...। নিহত বিএসএফ জওয়ানের
দেড় বছরের মেয়ে জয়িতা। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।
সঞ্জয়ের কাকা অনিলবাবু জানান, বুধবার বিকাল ৩টের সময় দিনহাটা ২ নম্বর বিডিও অফিস মারফত খবর পৌঁছয় তাঁদের বাড়িতে। রাতে চৌধুরীহাট বিএসএফ ক্যাম্পের থেকে অফিসাররা গিয়েও দেখা করেন সঞ্জয়বাবুর পরিবারের সঙ্গে। এদিন বাগডোগরা বিমানবন্দর হয়ে তাঁর দেহ নিয়ে যাওয়া হয় বড়োশাকদলে। অনিলবাবু জানান, ছোট ভাই, মা, দুই বোন, স্ত্রী ও কন্যাসন্তানকে নিয়ে সঞ্জয়ের সংসার তাঁর আয়ের উপরেই চলত। তিনি বলেন, “সঞ্জয়ের মৃত্যুতে গোটা পরিবার পথে বসে গেল।”
পুজোয় না এসে ১৬ ডিসেম্বর মেয়ের দ্বিতীয় জন্মদিনে গ্রামে আসবেন বলেছিলেন সঞ্জয়। মৌসুমী বলেন, “মেয়ে ছিল তাঁর চোখের মণি। তিনি চলে গেলেন। এখন সেই মেয়েকে আমি মনের মতো করে বড় করব কী করে?”