Jalpaiguri

বালেশ্বর ফেরাল দোমোহানির স্মৃতি

শুক্রবার রাতে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে থাকার ছবি দেখেই ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসের সে ঝাঁকুনি যেন অবিকল টের পেয়েছেন দেবব্রত শর্মা।

Advertisement

 অনির্বাণ রায় 

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০২৩ ১০:২১
Share:

দোমোহানির রেল দুর্ঘটনা। ১৩ জানুয়ারি, ২০২২। ফাইল চিত্র

বছর দেড়েক আগে, অনেকটা এমনই দৃশ্য দেখে শিউরে উঠেছিল দোমোহানি। জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া ছোট্ট রেলশহর। সে সন্ধ্যায় ধরলা নদীর কাছে উল্টেপাল্টে পড়ে ছিল রেলের কামরা। ছিটকে পড়েছিল আলুর খেতে। কামরা থেকে মাটিতে মিশে যাচ্ছিল রক্তের ধারা। চার দিকে কান্না। আর্তনাদের শব্দ। ছড়িয়ে থাকা চটি, ব্যাগ, টিফিন কৌটো, খাবারের টুকরো। গত বছর ১৩ জানুয়ারি বিকানের এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হয়েছিল। যাঁরা ট্রেনের ভিতরে ছিলেন, তাঁদের কাছে সেই স্মৃতি এখনও টাটকা। যাঁরা দুর্ঘটনার কথা শুনে ছুটে এসেছিলেন, তাঁদের কাছে ১৭ মাস পেরনো ঘটনাই যেন ফিরিয়ে আনল বালেশ্বরের দৃশ্য।

Advertisement

শুক্রবার রাতে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে থাকার ছবি দেখেই ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসের সে ঝাঁকুনি যেন অবিকল টের পেয়েছেন দেবব্রত শর্মা। বছর কুড়ির দেবব্রত কলেজ-পড়ুয়া। বাড়ি কোচবিহারের কাঁকরিবাড়িতে। সে দিন শিলিগুড়ি থেকে ট্রেনে উঠেছিলেন কোচবিহার ফিরবেন বলে। দোমোহানি স্টেশন এবং তার পরে, রেলসেতু পার হতেই প্রথমে তীব্র শব্দ পান। তা মিলিয়ে যাওয়ার আগেই প্রবল ঝাঁকুনি।দেবব্রত বলছেন, ‘‘বুঝতে পেরেছিলাম, তিরগতিতে আমাদের কামরা পাশে সরে যাচ্ছে! তার পরে বুঝলাম, কামরা উল্টে যাচ্ছে! গায়ে এসে মালপত্র পড়তে লাগল! মানুষজন ছিটকে পড়তে লাগলেন! চোখে অন্ধকার দেখলাম! কত ক্ষণ চলল মনে নেই। পরে, আমাকে উদ্ধার করা হয়। মাথায় খুব চোট পেয়েছিলাম।” জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল দেবব্রতকে। টেলিফোনে দেবব্রত বললেন, “বালেশ্বরের দুর্ঘটনা আরও ভয়ঙ্কর। সেই ভয়ঙ্কর স্মৃতিই ফিরে এসেছে! ঘুমোতে পারিনি!’’

দোমোহানির দুর্ঘটনাস্থলের পাশেই বাড়ি বিষ্ণু রায়ের। মাঠ থেকে কাজ সেরে ফিরেছিলেন। কান-ফাটানো শব্দ শুনে ভেবেছিলেন, বাজ পড়ছে। তিনি বললেন, “সে কী দৃশ্য! হায় ঈশ্বর! খেলনা ট্রেনের মতো সব কামরা! ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দুমড়ে-মুচড়ে গিয়েছে! শিউরে উঠেছিলাম!’’

Advertisement

দোমোহানিতে বিকানের এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল ন’জনের। বালেশ্বরের ঘটনায় মৃত্যুর খবর আসা থামছে না। বিকানের এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনার পরে, প্রায় এক বছর দোমড়ানো কামরাগুলি রেললাইনের পাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল। মাসকয়েক আগে, রেল সে সব নিলামে বিক্রি করেছে। সরানো হয়েছে কামরা। তবে শনিবার দুপুরে গিয়ে দেখা গেল, লাইন থেকে খানিক দূরে ঝোপের পাশে পড়ে রয়েছেদু’জোড়া লোহার পাটাতন লাগানো রেলের চাকা।

ভয়ঙ্করের বাকি যেটুকু স্মৃতি, তা গেঁথে রয়েছে রেল-শহরদোমোহানির হৃদয়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন