প্রতীকী ছবি
‘কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং’য়ে খামতির ফাঁক গলেই শিলিগুড়ি শহরে করোনা সংক্রমণের বাড়বাড়ন্ত হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ এবং জেলা স্বাস্থ্য দফতরের একাংশ। শিলিগুড়ি মহকুমায় সরকারি কোয়রান্টিন সেন্টার কার্যত নেই। সেগুলো উপসর্গহীন করোনা রোগীদের রাখতে ‘সেফহাউজ’-এ পরিবর্তিত হয়েছে। ফলে সংক্রমিতদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের, বিশেষ করে যাদের উপসর্গ রয়েছে তাঁদের আলাদা করে রাখার ব্যবস্থা করা সম্ভব হচ্ছে না অনেক ক্ষেত্রেই। প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়তে থাকায় তাঁদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার কাজ, তাঁদের লালারস পরীক্ষার কাজ হচ্ছে না বলে অভিযোগ। এর ফলেই শিলিগুড়িতে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে বলে আশঙ্কা।
কনট্যাক্ট ট্রেসিং কী? কেউ আক্রান্ত হলে তাঁর সংস্পর্শে কে কে এসেছেন, তাঁরা কোথায় থাকেন, কোথাও গিয়েছেন কি না সেসব খুঁজে নথিবদ্ধ করা। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের তরফে জানানো হয়েছে,
শিলিগুড়ি পুরসভার উপরেই ‘কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং’-এর দায়িত্ব। পুরসভার সাত-আট জনের একটি দল রয়েছে। একজন এপিডেমিওলজিস্ট, দুই চিকিৎসক, ভেইকেল সুপারিনটেন্ডেন্ট, দুই তিন জন ‘ডেটা এন্ট্রি অপারেটর’ রয়েছেন। আক্রান্তের প্রাথমিক রিপোর্ট পেলে তাঁরা ফোন করে আক্রান্তের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের তথ্য সংগ্রহ করছেন। ওই কাজে ওয়ার্ডে স্বাস্থ্যকর্মীদেরও লাগানো হচ্ছে। উপসর্গযুক্ত ব্যক্তিদের লালারস পরীক্ষা করানোর ব্যবস্থা হচ্ছে বলে দাবি। অভিযোগ, কিছু ক্ষেত্রে পুরসভা সংস্পর্শে আসা উপসর্গ যুক্ত ব্যক্তিদের লালারস পরীক্ষা করালেও, অনেক ক্ষেত্রেই তা হচ্ছে না বা অনেক অনুরোধের পর দেরিতে হচ্ছে। উপসর্গ নেই এমন ব্যক্তিদের নজরদারিতে রাখা হচ্ছে বলে পুর কর্তৃপক্ষ এবং জেলা স্বাস্থ্য দফতর দাবি করলেও অভিযোগ, সে সব ক্ষেত্রে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।
শহরে আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়েছে। মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৩৫ জনের। অথচ আক্রান্তের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের কোয়রান্টিনে নেওয়া হচ্ছে না। হোম কোয়রান্টিনে থাকার নির্দেশ দিয়েই দায় সারছে পুরসভা, স্বাস্থ্য দফতর। উত্তরবঙ্গে করোনা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা আধিকারিক সুশান্ত রায় বলেন, ‘‘কেন কোয়রান্টিন সেন্টার থাকবে না বুঝছে পারছি না। বিষয়টি খোঁজ নেব। কন্ট্যাক্ট ট্রেসিংয়ের কাজ চলছে।’’ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রলয় আচার্যের কথায়, ‘‘কোয়রান্টিন সেন্টার সেফ হাউজ হয়েছে। নতুন কোয়রান্টিন সেন্টারের কথা হচ্ছে।’’
পুর প্রশাসক বোর্ডের সদস্য শঙ্কর ঘোষের দাবি, পরিকাঠামো না থাকা সত্ত্বেও পুরসভাকে দিয়ে কন্ট্যাক্ট ট্রেসিংয়ের কাজ করানো হচ্ছে।
চিকিৎসক শেখর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘লকডাউন করে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। তবে কনট্র্যাক্ট ট্রেসিং ও আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের কোয়রান্টিনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে না পারলে লকডাউনের পর সংক্রমণ ফের ছড়িয়ে পড়বে।’’