জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ জমি অধিগ্রহণের জন্য ক্ষতিপূরণে টাকা দিয়েছিল একটি স্কুলকে। সেই টাকা আত্মসাতের অভিযোগে করণদিঘি ব্লক তৃণমূল সভাপতি তথা ওই স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি হাফিজুল ইকবালকে (ভোলা) দল থেকে বহিষ্কারের কথা ঘোষণা করলেন উত্তর দিনাজপুর জেলা তৃণমূল সভাপতি অমল আচার্য। তাঁকে পদ থেকে অপসারণের জন্য দলের তরফে রাজ্য সরকারের কাছে সুপারিশ করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন অমলবাবু। রবিবার সকালে রায়গঞ্জে জেলা তৃণমূল কার্যালয়ে একটি বৈঠক হয়। তারপর অমলবাবু দাবি করেন, প্রশাসনিক ও দলীয় তদন্তে তিতপুকুর হাইস্কুলের প্রধানশিক্ষক আব্দুল সামাদ ও পরিচালন সমিতির সভাপতি হাফিজুলবাবুর বিরুদ্ধে ১২ লক্ষেরও বেশি সরকারি টাকা আত্মসাতের অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়াও শুরু করেছে প্রশাসন।
হাফিজুলবাবু তাঁকে দল থেকে বহিষ্কারের বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে না চাইলেও তাঁর বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ তোলা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন। তাঁর দাবি, ‘‘স্কুলের পড়ুয়াদের খেলাধূলার জন্য একটি মাঠ কেনার জন্য জমির মালিককে অগ্রিম হিসেবে ওই টাকা দেওয়া হয়েছিল। ওই প্রক্রিয়ায় পদ্ধতিগত কিছু ভুল হয়ে থাকতে পারে। আমরা কেউই টাকা আত্মসাত করিনি। প্রশাসনের তদন্তের উপর আমাদের আস্থা রয়েছে।’’ প্রধানশিক্ষক আব্দুলবাবুও দাবি করেছেন, ‘‘জেলা শিক্ষা দফতরের কর্তাদের সব বলেছি।’’
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ স্কুল লাগোয়া ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের জন্য পাঁচ শতক জমি অধিগ্রহণ করেন। সেই জমির ক্ষতিপূরণ বাবদ স্কুল কর্তৃপক্ষকে ওই বছরের ৩০ মার্চ ১২ লক্ষ ২০ হাজার ৩৩৫ টাকা দেওয়া হয়। গত ১৪ জুন জেলাশাসক ও জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের কাছে সেই টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেন রসিলাল সিংহ নামে এক অভিভাবক। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক নারায়ণ সরকারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি কমিটি তদন্তে জানতে পারে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জমির ক্ষতিপূরণের টাকা নেওয়ার জন্য প্রধানশিক্ষক আব্দুলবাবু ও পরিচালন সমিতির সভাপতি হাফিজুলবাবু ২০১৫ সালের ২৬ মার্চ নিজেদের নামে একটি যৌথ অ্যাকাউন্ট খোলেন। ওই অ্যাকাউন্টে ৩০ মার্চ জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পাওয়া ১২ লক্ষ ২০ হাজার ৩৩৫ টাকার চেক জমা করেন তাঁরা। এরপর ২০১৫ সালের ২৯ এপ্রিল থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত আব্দুলবাবু ও হাফিজুলবাবু চেকের মাধ্যমে ১৩ দফায় সব টাকা তুলে নেন। সেই টাকায় কী উন্নয়নমূলক কাজ করা হয়েছে, তার তথ্যপ্রমাণ সহ কোনও ব্যাখ্যা দিতে পারেননি অভিযুক্তরা।
জেলাশাসক রণধীর কুমার বলেন, ‘‘অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন।’’