কুয়াশার আড়ালে চলছে গরু পাচার

সন্ধে হলেই শুরু হয়ে যায় সীমান্ত জুড়ে তৎপরতা। আগে থেকেই নির্দিষ্ট থাকা গোপন ডেরায় বেঁধে রাখা হয় সারি সারি গরু। রাত বাড়তেই এক একটি ‘পয়েন্টে’র দায়িত্ব নেন একেকজন। রাস্তা থেকে সীমান্ত পর্যন্ত উঁকিঝুঁকি দিতে থাকে ‘লাইনম্যান’।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৭ ০৭:১০
Share:

সন্ধে হলেই শুরু হয়ে যায় সীমান্ত জুড়ে তৎপরতা। আগে থেকেই নির্দিষ্ট থাকা গোপন ডেরায় বেঁধে রাখা হয় সারি সারি গরু। রাত বাড়তেই এক একটি ‘পয়েন্টে’র দায়িত্ব নেন একেকজন। রাস্তা থেকে সীমান্ত পর্যন্ত উঁকিঝুঁকি দিতে থাকে ‘লাইনম্যান’। কুয়াশার চাদর ছড়িয়ে পড়তেই বেজে ওঠে বাঁশি। গরু পাচার শুরু হয় বাংলাদেশে।

Advertisement

শীত পড়তে না পড়তেই গত এক সপ্তাহ ধরে কোচবিহারের বাংলাদেশ সীমান্তে ফের গরু পাচারকারীদের দৌরাত্ম্য বেড়ে গিয়েছে কয়েকশো গুণ। সে কথা অস্বীকার করছেন না বিএসএফ কর্তারাও। তাঁদের দাবি, প্রতিদিন একাধিক সীমান্ত থেকে দশ থেকে বারোটি গরু উদ্ধার করা হচ্ছে। সাহেবগঞ্জ ও দীঘলটারি সীমান্ত থেকে বেশ কিছু গরু আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। বিএসএফের কোচবিহার রেঞ্জের ডিআইজি সিএল বেলওয়া বলেন, “কুয়াশা পড়তে শুরু করতেই এক থেকে দুটি জায়গায় চোরাকারবারীরা একটু সক্রিয় উঠেছে। তবে বিএসএফ জওয়ানরা তা রুখে দিচ্ছে। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু গরু আটক করা হয়েছে।”

কোচবিহারে সঙ্গে বাংলাদেশের প্রায় ৫৩০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। এর একটি অংশ নদীপথ ও কিছু এলাকায় এখনও কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হয়নি। সেই এলাকাগুলি চোরাকারবারীদের কাছে ‘সেফ জোন’। দিনহাটার গীতালদহ, সিতাই থেকে নাজিরহাটের দিঘলটারি এবং মেখলিগঞ্জের চ্যাংরাবান্ধার বেশ কিছু এলাকা ওই জোনের মধ্যে পড়েছে। দিঘলটারি সীমান্তের এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘রাত হলেই যেন যুদ্ধ শুরু হয় আমাদের এলাকায়। একদিকে সীমান্তরক্ষী বাহিনী, আরেকদিকে চোরাকারবারীরা। আমরাও ভয়ে ভয়ে থাকি।”

Advertisement

ওই এলাকায় প্রায় তিন কিলোমিটার কাঁটাতার নেই। সেই এলাকা দিয়ে গরু পাচারের চেষ্টা হয়। বিএসএফের এক কর্মীও জানান, প্রতিদিন রাতেই চোরাকারবারীদের সঙ্গে টক্কর হচ্ছে তাঁদের। গীতালদহের নদীপথ এলাকা দিয়েই পাচারের অভিযোগ রয়েছে। ওই এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, “বিকেল থেকেই সীমান্ত লাগোয়া এলাকায় গরু নিয়ে হাজির হয় চোরাকারবারীরা। সুযোগ পেলেই শুরু হয় পাচার। ভয়ে এলাকার বাসিন্দারা কেউ প্রতিবাদ করতে পারে না।”

বিএসএফ সূত্রের খবর, মাঝে বেশ কিছুদিন গরু পাচার অনেকটাই কমে গিয়েছিল। কিন্তু শীত পড়তেই ওই পাচার আবার শুরু হয়েছে পুরোদমে। অভিযোগ, স্থানীয় গরু তো বটেই উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা ও পঞ্জাব থেকে আনা গরু পাচার করা হয় এই পথেই। একটি দশ হাজার টাকার গরু বাংলাদেশে পঞ্চাশ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। সেখানে লাইনম্যান গরু প্রতি দুই হাজার টাকা, আর সরাসরি পাচারের যুক্ত থাকা ব্যক্তিরা গরু প্রতি তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা নেয়।

পুলিশের তরফেও গরু পাচারে নজরদারি রয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। পাচারের উদ্দেশ্যেই গরু নিয়ে যাওয়ার কোনও অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেয় তারা। কোচবিহার জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “পরিস্থিতির দিকে আমরাও নজর রাখছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন