ধীমানকে ধরার দাবি, আন্দোলনে বামেরা

উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জ থানার বাঘন এলাকায় নির্যাতিতা নাবালিকার অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনার পাঁচদিন পেরিয়েছে। তাকে হুমকি ও আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত প্রতিবেশি যুবককে পুলিশ এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি। শুধু তাই নয়, ধীমান সরকার নামে অভিযুক্ত ওই যুবক কোথায় রয়েছে, সেই হদিসও এখনও পর্যন্ত পায়নি পুলিশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৫ ০২:৩৩
Share:

রায়গঞ্জে ডিওয়াইএফ-এর মিছিল। —নিজস্ব চিত্র।

উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জ থানার বাঘন এলাকায় নির্যাতিতা নাবালিকার অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনার পাঁচদিন পেরিয়েছে। তাকে হুমকি ও আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত প্রতিবেশি যুবককে পুলিশ এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি। শুধু তাই নয়, ধীমান সরকার নামে অভিযুক্ত ওই যুবক কোথায় রয়েছে, সেই হদিসও এখনও পর্যন্ত পায়নি পুলিশ।

Advertisement

এই পরিস্থিতিতে পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে অভিযুক্তকে গ্রেফতার ও অভিযুক্ত বাদে আর কেউ ওই নাবালিকাকে হুমকি ও আত্মহত্যায় প্ররোচনা দিয়েছিল কি না, সেই বিষয়ে তদন্তের দাবিতে আন্দোলনে নামল সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফ ও মহিলা সংগঠন গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি। বুধবার বিকালে ডিওয়াইএফের সমর্থকেরা কালিয়াগঞ্জের মহেন্দ্রগঞ্জ বাজার থেকে বয়রা কালীবাড়ি পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল করেন। এরপর আন্দোলনকারীরা কালিয়াগঞ্জ থানায় গিয়ে কিছুক্ষণ বিক্ষোভ দেখানোর পর আইসির কাছে স্মারকলিপি জমা দেন। পুলিশের আশ্বাসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। অন্যদিকে, একই দাবিতে এ দিন সন্ধ্যায় গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির সদস্যারা রায়গঞ্জের সুপারমার্কেট ও শিলিগুড়িমোড় এলাকায় দুটি পথসভা করে পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে অবিলম্বে অভিযুক্তকে গ্রেফতারের দাবি তোলেন। অবিলম্বে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা না হলে দুটি সংগঠনের তরফে জেলাজুড়ে আন্দোলনে নামার হুমকিও দেওয়া হয়েছে।

ডিওয়াইএফের জেলা সম্পাদক সুরজিত কর্মকার অভিযোগ করে বলেন, ‘‘পুলিশ এতটাই নিষ্ক্রিয় যে, নির্যাতিতা ওই নাবালিকার মৃত্যুর পাঁচদিন পেরিয়ে গেলেও তাকে হুমকি ও আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত যুবককে গ্রেফতার করা তো দূরের কথা তার হদিসই পাচ্ছে না পুলিশ। অবিলম্বে অভিযুক্তকে গ্রেফতার ও ওই নাবালিকাকে আরও কেউ হুমকি বা আত্মহত্যায় প্ররোচনা দিয়েছিল কি না পুলিশের কাছে সেই বিষয়টিও তদন্তের দাবি জানিয়েছি।’’

Advertisement

গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির রায়গঞ্জ লোকাল কমিটির সম্পাদিকা সাবিত্রী দাসের আশঙ্কা, ‘‘নির্যাতিতা নাবালিকাকে ধর্ষণ, হুমকি ও আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত ওই যুবক পার পেয়ে গেলে ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা আরও বাড়বে।’’ তিনি বলেন, ওই ঘটনার পর মৃতার পরিবারের লোকজন সন্দেহ করে পুলিশকে জানিয়েছিলেন, অভিযুক্ত ওই যুবক বালুরঘাটে থাকতে পারে। কিন্তু পুলিশের কোনও দল এখনও পর্যন্ত অভিযুক্তের খোঁজে কোথাও গিয়ে তল্লাশি চালায়নি। তাঁর দাবি, অবিলম্বে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা না হলে ডিওয়াইএফ ও সমিতির সদস্যারা অনির্দিষ্টকালের জন্য কালিয়াগঞ্জ থানা ঘেরাও করবে। জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ ওয়াকার রেজার দাবি, ‘‘অভিযুক্ত যুবক কোথায় পালিয়ে রয়েছে, তা এখনও পর্যন্ত জানা সম্ভব হয়নি। পুলিশ প্রাথমিক কোনও সূত্র না পাওয়ায় অভিযুক্তের খোঁজে আপাতত বাইরে কোথাও যায়নি। আমরা অভিযুক্তকে ধরার জন্য সবরকম চেষ্টা চালাচ্ছি।’’

২০১৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর রাতে ধীমান ওই নাবালিকাকে খুনের হুমকি দিয়ে ধর্ষণ করে পালিয়ে যায় বলে অভিযোগ। পরদিন নির্যাতিতার অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে। এরপর আদালতের নির্দেশে প্রায় তিনমাস সে জেল হেফাজতে ছিল। সম্প্রতি, রায়গঞ্জের ফাস্টট্র্যাক ২ আদালতে ওই মামলার শুনানি শুরু হয়। ধর্ষণের মামলাটি মেটানোর শর্তে প্রায় দুমাস আগে অভিযুক্ত ধীমানের বাবা বিশ্বনাথ সরকার নির্যাতিতা ও তার দাদার নামে তাদের বাড়িটি লিখে দিয়ে অন্যত্র চলে যান। শর্ত হয়, ওই নাবালিকা আদালতে এমন কোনও সাক্ষ্য দেবে না, যাতে অভিযুক্ত ধীমানের শাস্তি হয়। কিন্তু গত শনিবার ওই নাবালিকা আদালতে সত্যি কথা জানালে ধীমান ও তার সঙ্গীরা ওই নাবালিকাকে আদালত চত্বরে হুমকি দেয়। এরপর ওই নাবালিকা ভয়ে ও অনুশোচনায় বাড়ি ফিরে গলায় ওড়নার ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে বলে অভিযোগ। ওই ঘটনার পর মৃতার দাদা কালিয়াগঞ্জ থানায় ধীমানের বিরুদ্ধে হুমকি ও আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ দায়ের করেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন