রসিকবিল ছে়ড়ে ভুটান, পর্যটক টানছে ঘড়িয়াল

পাহাড়ের কোলে ভুটানের ফুন্টশিলিং শহর। সেখানে সাজানো গোছানো একটি পার্ক। জলাশয় থেকে রোদ পোহানোর বালির চড়া, আয়োজন রয়েছে সব কিছুরই।

Advertisement

অরিন্দম সাহা

ফুন্টশিলিং শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৬ ০৪:০৪
Share:

ফুন্টশিলিংয়ের ঘড়িয়াল পার্ক। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।

পাহাড়ের কোলে ভুটানের ফুন্টশিলিং শহর। সেখানে সাজানো গোছানো একটি পার্ক। জলাশয় থেকে রোদ পোহানোর বালির চড়া, আয়োজন রয়েছে সব কিছুরই। এই পার্কের ছানাপোনা থেকে বুড়ো-বুড়ি সমেত অসংখ্য উভচর বাসিন্দারাই ছুটির মরসুমে পর্যটকদের মূল আকর্ষণ। ফুন্টশিলিংয়ের এই ঘড়িয়াল পার্কই এখন পাখির চোখ উৎসাহী পর্যটকদের।

Advertisement

উত্তরবঙ্গের কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার-সহ নানা জেলা থেকে উৎসাহী পর্যটকরা ভিড় করছেন পার্কটিতে। কেউ সফর সারছেন একদিনেই, কেই আবার খুঁজছেন রাত্রিবাসের জায়গা। স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ীদের সংগঠন সূত্রে জানা গিয়েছে, দোল, হোলি, গুড ফ্রাইডে নিয়ে টানা ছুটি ছিল ২৩-২৫ মার্চ, সঙ্গে বাড়তি পাওনা ছিল শনিবার ও রবিবার। ছুটির এই আবহে ডুয়ার্সে ছিল বাড়তি পর্যটকদের ভিড়। তাঁদের অনেকেই ঘড়িয়ানের টানে ভিড় জমিয়েছিলেন ফুন্টশিলিংয়ে। ইস্টার্ন হিমালয়ান ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুর অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী সভাপতি সম্রাট স্যানাল বলেন, “অল্প সময়ের মধ্যে বিনা পাসপোর্ট-ভিসায় বিদেশ ভ্রমণের পাশাপাশি ঘড়িয়াল পার্কের মত ভিন্ন স্বাদের টানেই পর্যটকদের ওই আকর্ষণ।’’ উত্তরবঙ্গেও পর্যটকদের জন্য জঙ্গল সাফারির পাশাপাশি প্রজাপতি উদ্যান, ঘড়িয়াল পার্কের মত বিকল্প পরিকাঠামোর সংখ্যা আরও বাড়ানো হলে ভাল হয় বলে জানান তিনি।

জানা গিয়েছে, ১৯৭৬ সালে ঘড়িয়াল সংরক্ষণের ভাবনা থেকে ওই পার্কটি তৈরি করা হয়। এক বিঘার বেশি জমির ওপর ভুটান সরকারের কৃষি, বন ও উদ্যান মন্ত্রকের যৌথ উদ্যোগে পার্কটি তৈরি হয়। জয়গাঁ থেকে সহজেই ওই ঘড়িয়াল পার্ক যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। ফি মাসেই সেখানে পর্যটকেরা ভিড় করেন বলে জানাচ্ছেন স্থানীয়রা। ওই পার্কের এক কর্মী জানান, ভারতীয় পর্যটকদের জন্য মাথাপিছু ২০ টাকা প্রবেশ মূল্য নেওয়া হয়। কোচবিহারের গাড়ি চালক আশু দত্ত বলেন, ‘‘এই ছুটিতে ফুন্টশিলিংয়ের ভাড়াও হয়েছে।’’ আলিপুরদুয়ারের সীমান্ত শহর জঁয়গা পেরোলেই ভুটানের সীমানা শুরু। সেখান থেকে সরাসরি কয়েক কিমি গেলেই পড়ে এই ঘড়িয়াল পার্ক। পার্কের কোথাও জলাশয়ে কোথাও তারজালির ঘেরাটোপের ভেতর বালির ওপর দেখা যায় একাধিক ঘড়িয়াল। পার্কের মধ্যেই পৃথক ঘেরাটোপে রাখা হয়েছে শাবক ঘড়িয়ালদের। এখানে বেড়াতে আসা কোচবিহারের কয়েকজন বাসিন্দা জানান, রসিকবিলে ঘড়িয়াল পার্ক থাকলেও সেখানে বড়জোর ছ’টি ঘড়িয়াল রয়েছে। দিনের বেলায় বেশিরভাগ সময় সেগুলি জলের নীচে থাকায় পর্যটকরা দেখার সুযোগ পাননা বলে জানান তাঁরা। খোলটায় এখনও ঘড়িয়াল পার্ক চালুই হয়নি। সেদিক থেকে ফুন্টশিলিংয়ে ঘড়িয়াল দেখার সুযোগ নিশ্চিত বলে জানান তাঁরা।

Advertisement

কিন্তু ভোট বাজারের গরম হাওয়ায় ছাড় পায়নি এ হেন নির্বিবাদী ঘড়িয়ালও। রসিকবিলের পরিকাঠামোকে হাতিয়ার করে রাজ্যের প্রাক্তন ও বর্তমান বনমন্ত্রীর চাপানউতোর ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে এসে পড়েছে। রাজ্যের প্রাক্তন বনমন্ত্রী তথা সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য অনন্ত রায় বলেন, “আমরাই রসিকবিলে ঘড়িয়াল উদ্যান করেছিলাম। খোলটায় ঘড়িয়াল রাখার বন্দোবস্ত করতে পুকুর তৈরি-সহ পরিকাঠামোও করা হয়।’’ তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে ওই কাজ এগোয়নি, রসিকবিলও ধুঁকছে বলে অভিযোগ তাঁর। অন্যদিকে রাজ্যের বিদায়ী বনমন্ত্রী তথা তৃণমূলের কোচবিহার জেলা কোর কমিটির সদস্য বিনয়কৃষ্ণ বর্মন বলেন, “বাম আমলে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে কিংবা পরিকল্পনা করে এসব কোন কাজ হয়নি। যার জেরেই সমস্যা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন