আগলে: বৃষ্টির পথে। কোচবিহারে। শনিবার। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব
ফণীর প্রভাবে বৃষ্টিতে ক্ষতির আশঙ্কা দুই জেলার চাষে। কোচবিহারে ধানের সঙ্গে তামাক চাষেও ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। আলিপুরদুয়ারেও ধান-সহ ভুট্টা, পাট ও আনাজ চাষ নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে।
কোচবিহারে ব্যবসায়ীদের সূত্রেই জানা গিয়েছে, ফণী নিয়ে উদ্বেগের জেরে তিনদিন আগে থেকে তামাক রফতানি প্রায় শিকেয় উঠেছিল। শুক্রবার বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় ফণীর দাপটে ওড়িশার বিস্তীর্ণ এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ওই দিন থেকে সেখানে তামাক রফতানি প্রায় পুরোপুরিভাবে বন্ধ রয়েছে। অথচ এখন তামাক রফতানির ভরা মরসুম চলছে। ওড়িশা কোচবিহার জেলার উৎপাদিত তামাকের অন্যতম বড় ক্রেতাও। ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, যা পরিস্থিতি তাতে আরও অন্তত দেড় সপ্তাহ না পেরোলে ওই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা কম। ওড়িশার উদ্দেশে রওনা হওয়া বেশ কিছু ট্রাক মাঝরাস্তায় আটকে রয়েছে বলে ব্যবসায়ীদের দাবি। তাই নতুন করে ট্রাকে তামাক পাঠানোর ঝুঁকি নিচ্ছেন না কেউ।
প্রাথমিক হিসেবের পর ব্যবসায়ীদের একাংশের অনুমান, গোটা জেলায় তামাক রফতানিতে কয়েক কোটি টাকার ব্যবসা মার খেতে পারে। তার বেশিরভাগ প্রভাব পড়বে দিনহাটা মহকুমায়। দিনহাটা থেকে নিয়মিত ওড়িশায় তামাক বেশি যায়। দিনহাটা তামাক ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সুশীল মাহেশ্বরী বলেন, “ফণীর জেরে ওড়িশায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তাই সেখানে তামাক রফতানি স্বাভাবিক হতে কয়েকদিন লাগবে। ব্যবসা তো মার খাবেই।” দিনহাটার এক তামাক ব্যবসায়ী জানান, তামাক রফতানিতে ট্রাক লোডিং–আনলোডিংয়ের মতো পরোক্ষ কাজও পান শ্রমিকেরা। ট্রাক ভাড়ার মাধ্যমে পরিবহণ ব্যবসাও জড়িয়ে আছে। সব মিলিয়েই বড় ক্ষতি হতে পারে বলে উদ্বেগ ব্যবসায়ীদের।
কেবল তামাকই নয়, বোরো ধান চাষে ক্ষতির আশঙ্কায় উদ্বেগ বাড়ছে কোচবিহারে। কৃষকদের অনেকেই জানাচ্ছেন, টানা কয়েকদিন জল দাঁড়িয়ে থাকলে সমস্যা বাড়বে। কোচবিহারের মুখ্য কৃষি আধিকারিক বুদ্ধদেব ধর বলেন, “সোমবারের মধ্যে জল নেমে গেলে তেমন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। নজর রাখা হচ্ছে। এডিও’দের কাছে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে।” শুক্রবার থেকেই বৃষ্টির জেরে কোচবিহার ১ ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকার অপেক্ষাকৃত নীচু জমির বোরো খেতে জল দাঁড়িয়ে যায়। শনিবারেও নতুন করে জেলার বিভিন্ন মহকুমার আরও বেশ কিছু এলাকার বোরো খেতে জল জমে গিয়েছে। কাটামারির আরমিন রহমান বলেন, “দু’বিঘেয় বোরো ধান চাষ করেছি। রাতভর বৃষ্টি চলায় বেশিরভাগ খেত জলে ডুবে গিয়েছে। টানা বৃষ্টি হলে ওই জল নামবে না। তাতে ক্ষতির আশঙ্কা কিন্তু বেড়ে যাবে।”
ফণীর পরোক্ষ প্রভাবে গত কয়েকদিন থেকে জেলায় টানা বৃষ্টি চলতে থাকায় চিন্তায় আলিপুরদুয়ারের বোরো ধান ও পাট চাষিরাও। কৃষি দফতর সূত্রের খবর, ব্যয়ের তুলনায় আয় কম হওয়ায় এমনিতেই পাট চাষ কমে যাচ্ছে আলিপুরদুয়ারে৷ এই মুহূর্তে জেলায় মাত্র ছ’হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ হচ্ছে৷ কিন্তু গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি চলতে থাকলে পাটখেতে ঘাস ও আগাছা জন্মে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষি দফতরের অনেকেই। সেক্ষেত্রে পাটের বৃদ্ধি কমে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা তাদের৷ ফলে স্বাভাবিকভাবেই চিন্তিত জেলার পাটচাষিরা৷ তবে জেলার মুখ্য কৃষি আধিকারিক হরিশ রায় জানান, খুব দ্রুত আবহাওয়া বদলে গেলে এই ক্ষতি রোখা সম্ভব৷
কৃষি দফতর সূত্রের খবর, এ বছর আলিপুরদুয়ার জেলায় প্রায় আট হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে৷ যার বেশির ভাগই এখনও পাকেনি৷ কিন্তু যে সব ধানের চারা পাকতে শুরু করেছে, এই বৃষ্টিতে সেগুলিতে ক্ষতির সম্ভাবনাও দেখছেন কৃষি দফতরের আধিকারিকেরা। হরিশবাবু বলেন, “যে সব বোরো চারায় ফুল ফোটেনি কিংবা দানা ধরে গিয়েছে, সেগুলিতে ক্ষতির সম্ভবনা নেই৷ কিন্তু যেগুলি পাকতে যাচ্ছে, সেগুলিতে দানা কম ধরার সম্ভাবনাই বেশি৷” সেক্ষেত্রে আলিপুরদুয়ার জেলায় বোরো ধানের ফলনে খানিকটা হলেও মার খাওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষি দফতরের অনেকেই৷