ইসলামপুরের দাড়িভিট স্কুল।—নিজস্ব চিত্র।
দাড়িভিট-কাণ্ডের পরে রাজ্য শিক্ষা দফতর তৎকালীন উত্তর দিনাজপুরের মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিদর্শক রবীন্দ্রনাথ মণ্ডলকে সাময়িক বরখাস্ত করেছিল। পরে অবশ্য শিক্ষা দফতর তাঁর বরখাস্ত প্রত্যাহার করে তাঁকে কলকাতার বিকাশভবনে ওই দফতরের সহকারী ডিরেক্টরের পদে নিযুক্ত করে। দাড়িভিট-কাণ্ডের পাঁচ মাস পরে রবীন্দ্রনাথবাবুকে ফের জেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিদর্শক পদে নিয়োগ করার দাবিতে আন্দোলনে নামলেন জেলার প্রধানশিক্ষকদের একাংশ। ২৭ ফেব্রুয়ারি জেলার প্রধানশিক্ষকদের সংগঠন হেডমাস্টার ফোরামের সম্পাদক অজয়কুমার রায়ের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল বিকাশভবনে যায়। শিক্ষা দফতরের কমিশনারের মাধ্যমে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে লিখিত ভাবে তাঁরা রবীন্দ্রনাথকে পদে ফেরানোর অনুরোধ করেন।
ফোরামের সম্পাদক তথা রায়গঞ্জের মালঞ্চা হাইস্কুলের প্রধানশিক্ষক অজয়কুমার রায়ের দাবি, জেলার বিভিন্ন হাইস্কুলের ৫৫ জন প্রধানশিক্ষকের সই সংবলিত ওই লিখিত আবেদনে সুষ্ঠু শিক্ষা ব্যবস্থার স্বার্থে রবীন্দ্রনাথকে জেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিদর্শকের পদে ফেরাতে অনুরোধ করা হয়েছে।
গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর ইসলামপুরের দাড়িভিট উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগকে কেন্দ্র করে পড়ুয়াদের আন্দোলন চলাকালীন গুলিবিদ্ধ হয়ে রাজেশ সরকার ও তাপস বর্মণ নামে দুই ছাত্রের মৃত্যু হয়। পুলিশের গুলিতে ওই দুই ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে সিবিআই তদন্ত ও দোষী পুলিশকর্মীদের শাস্তির দাবিতে এরপর থেকে রাজেশ ও তাপসের পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি অভিভাবকদের একাংশ স্কুলের গেটে ধর্নায় বসেন। স্কুলে শিক্ষকদের শূন্যপদ সৃষ্টি ও শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম এবং কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে পরের দিন রবীন্দ্রনাথকে সাময়িক বরখাস্ত করে রাজ্য শিক্ষা দফতর। অন্য দিকে, অভিভাবকদের আন্দোলনের জেরে দীর্ঘ দিন স্কুল বন্ধ থাকে। এই পরিস্থিতিতে ১১ জানুয়ারি শিক্ষা দফতর রবীন্দ্রনাথের উপর থেকে বরখাস্ত প্রত্যাহার করে তাঁকে বিকাশভবনে ওই দফতরের সহকারী ডিরেক্টরের পদে নিযুক্ত করে।
ফোরামের যুগ্ম সম্পাদক তথা রায়গঞ্জের হাতিয়া হাইস্কুলের প্রধানশিক্ষক গৌতম সিংহের দাবি, ‘‘শিক্ষা দফতর তাঁকে বিনাদোষে প্রথমে বরখাস্ত ও পরে জেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিদর্শকের পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে।’’ গৌতমের জানান, দীর্ঘ দিন ধরে জেলার বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষকদের শূন্যপদ সৃষ্টি ও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম চলেছে। রবীন্দ্রনাথ দায়িত্ব নেওয়ার পর সেই অনিয়ম বন্ধ করার চেষ্টা শুরু করেছিলেন। পাশাপাশি, রবীন্দ্রনাথ জেলাজুড়ে পড়ুয়াদের কন্যাশ্রী, শিক্ষাশ্রী, সবুজসাথী, বৃত্তি সহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প খুব সহজেই কার্যকরী করেছেন। একাধিক হোয়্যাটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে জেলার সমস্ত হাইস্কুলের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতেন। শিক্ষামন্ত্রীকে এই বিষয়গুলি লিখিত ভাবে জানিয়ে রবীন্দ্রনাথবাবুকে ফের জেলা মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিদর্শকের পদে ফেরানোর অনুরোধ করা হয়েছে।
এই বিষয়ে রবীন্দ্রনাথবাবু অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি।