সাজ: নানা দেশের পতাকায় সেজেছে পাহাড়। নিজস্ব চিত্র
দার্জিলিঙের যেখানেই থাকুন না কেন বিশ্বকাপের কোনও ম্যাচে গোল হলে ঠিক বুঝবেন। হাসতে হাসতে একথাই বলছিলেন ম্যালের এক দোকানদার। ঘটনাও অনেকটা সেরকমই। ব্রাজিল-মেক্সিকোর ম্যাচে নেমারের শট জালে জড়ানো মাত্র ম্যালের চারদিক জুড়ে এমন ‘গোওওল’ রব উঠল, যেন রাশিয়া নয় ম্যাচ হচ্ছে লেবংয়ের মাঠেই। শুধু খেলা দেখা নয়, সেজেও উঠেছে দার্জিলিং। শহরের দোকানপাট থেকে হোটেলের ছাদ কিংবা বাড়ির কার্নিশ, সর্বত্র রংবেরংয়ের পতাকার বাহারে এ যেন এক অন্য পাহাড়।
স্থানীয়রা বলছেন, ফুটবল দার্জিলিঙের রক্তে। পাহাড়ে অনেক গাড়িতেই দেখা যায় চালকদের পছন্দের বিদেশি ক্লাবের পতাকা, লোগো-স্টিকার রাখা থাকে। আর বিশ্বকাপ হলে শুধু লাতিন আমেরিকার দেশ নয়, দার্জিলিং ছেয়ে যায় ইউরোপের নানা দেশের পতাকায়। এ বার ইংল্যান্ড, ফ্রান্সের পাশাপাশি পাহাড়ে নজরে পড়ছে বেলজিয়ামের পতাকাও। দার্জিলিং সদরের বেকারি মালিক শরিফ আনসারি বেলজিয়মের কট্টর সমর্থক। জানালেন পরিবারের আত্মীয়-স্বজনদের অনেকে বেলজিয়মে রয়েছেন। শরিফ বললেন, ‘‘গোড়ায় তত গুরুত্ব ছিল না। এখন সবাই সমঝে চলছে।’’ তবে জার্মানি, আর্জেন্টিনা, পর্তুগাল, স্পেন ছিটকে যাওয়ায় এখন পাল্লা ভারি ব্রাজিলের দিকেই। দার্জিলিং কলেজের ছাত্র আশিস সিংহ বলেন, ‘‘ফুটবল মানেই ব্রাজিল। নেমারের গোল পাওনা।’’
গত বছরের এসময় প্রতিদিনই দার্জিলিঙের কোথাও জ্বলছিল আগুন, পড়ছিল বোমা। মিছিলে মিছিলে উত্তপ্ত তখনকার শহরের সঙ্গে এখনকার কোনও মিলই নেই। এমনিতেও অনেকদিন ধরেই দার্জিলিং শান্ত-স্বাভাবিক। ফুটবল বিশ্বকাপ এসে যেন ছিঁটেফোঁটা রাজনৈতিক রেষারেষিও ঢেকে দিয়েছে। মোর্চার রবিন গুরুং, জিএনএলএফ-র রমেশ ছেত্রী দু’জনেই ব্রাজিল সমর্থক। এখন একই রেস্তরাঁয় বসে জায়ান্ট স্ক্রিনে খেলা দেখছেন। বৃষ্টির পাহাড়ে এখন পর্যটকের ভিড় কম। কিন্তু মিলেমিশে থাকা শান্ত দার্জিলিঙের চেনা ছবি মন ভাল করে দিচ্ছে যে ক’জন রয়েছেন, তাঁদের সকলেরই।