অভিযান: মশা তাড়াতে বাঁশবাগানে ধোঁয়া দেওয়া হচ্ছে চ্যাংরাবান্ধায়। ছবি: দীপেন রায়
তিন বছর আগে মৃত্যুর মিছিল শুরু হয়েছিল। শুধু জুলাই মাসেই জ্বরে ভুগে মৃত্যুর সংখ্যা ২৩ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। তার পরেই জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে রক্ত পরীক্ষার পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়। সতর্কতাও অবলম্বন করা হয়। সেই সঙ্গে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের (জেই) টিকাকরণ করা হয়। এত সবের পরেও এ বারে ফের জ্বর নিয়ে একের পর মৃত্যুর ঘটনা প্রকাশ্যে আসায় উদ্বেগ ছড়িয়েছে জেলা জুড়ে।
শুধু অগস্ট মাসেই কোচবিহার জেলায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছ’জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে একজন অসমের ধুবুরির বাসিন্দা। স্বাস্থ্য দফতরের তরফে দাবি করা হয়েছে, এদের মধ্যে দু’জনের দেহে জেই-র জীবাণু মিলেছে। বাকি তিন জন অ্যাকিউট এনসেফ্যালাইটিস সিনড্রোমে (এইএস) আক্রান্ত ছিলেন বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর। দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, নতুন করে আরও তিন জনের রক্তে জেই পজিটিভ পাওয়া গিয়েছে। এদের মধ্যে দু’জন তুফানগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি। তাঁরা অসমের বাসিন্দা। বাকি এক জন মাথাভাঙার ঘোকসাডাঙার বাসিন্দা। তাঁকে কোচবিহারের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়েছে।
এই অবস্থায় পরিস্থিতি সামলাতে জেলা প্রশাসন স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। ইতিমধ্যে একটি বৈঠকও সেরেছেন তাঁরা। জেলাশাসক কৌশিক সাহা বলেন, “পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হচ্ছে। পরিস্থিতি বুঝে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।” প্রশাসনের তরফ থেকে প্রতিদিন রিপোর্টের সঙ্গে স্বাস্থ্যকর্মীদের অনুমতি না নিয়ে ছুটিতে চলে না যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের কোচবিহার জেলা আধিকারিক সুমিত গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “রোগীদের দ্রুত পরীক্ষা থেকে চিকিৎসা শুরু সব ব্যাপারেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এই ব্যাপারে সমস্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।”
বর্ষা মানেই ডেঙ্গির হাতছানি। জাপানি এনসেফ্যালাইটিস এই সময় ২০১৪ সালে ভয়ঙ্কর আকার নিলেও পরে তা অনেকটাই আয়ত্তের মধ্যে চলে আসে। এ বারে জুলাই মাসে তেমন ভাবে বৃষ্টিপাত হয়নি। অগস্টে বৃষ্টি কিছুটা শুরু হতেই বাড়তে থাকে জ্বরের রোগীর সংখ্যা প্রতিদিন গড়ে অন্তত ১৫ জন জ্বরের রোগী ভর্তি হচ্ছেন জেলা হাসপাতালে। মহকুমা হাসপাতালেই একই অবস্থা। এই অবস্থায় উপসর্গ দেখেই রোগীর রক্ত পরীক্ষা করানো হচ্ছে স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা জানান। ডেঙ্গি এবং জেই পরীক্ষার সমস্ত বন্দোবস্ত জেলা হাসপাতালে রয়েছে বলে তাঁরা জানিয়েছেন। কোচবিহার জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, “জেই-র উপসর্গ দেখলেই সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড (সিএসএফ) পরীক্ষার ব্যাপারে জোর দেওয়া হচ্ছে। রিপোর্ট পাওয়ার আগেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসা শুরু করা হচ্ছে।”
কেন প্রতি বছর এই সময় এমন জ্বরের কবলে পড়ছেন মানুষ? স্বাস্থ্য দফতরের তরফে এই বিষয়ে সাবধানতা অলম্বনের উপরে জোর দেওয়া হয়েছে। ঘুমোনোর সময় মশারি ব্যবহার থেকে মশার হাত থেকে রেহাই পেতে নানা দাওয়াই নিয়ে তাঁরা বাসিন্দাদের কাছে যাচ্ছেন বলে দাবি করেছেন। এ ছাড়া ট্যাবলো ও মাইকে প্রচার করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তাঁরা।