রেলে জুড়ুক ভারত-বাংলাদেশ, দাবি উঠল দিনহাটায়

দেশভাগের আগে রেলের আলিপুরদুয়ার বামনহাট সেকশনটি বাংলাদেশের ভুরুঙ্গামারি, পাটেশ্বরী ও সোনারহাট হয়ে অসমের ধুবড়ি পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দিনহাটা শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৮ ০১:৪৯
Share:

মাঝখানে: ধরলা নদীর এই সেতুতে চলত রেল। নিজস্ব চিত্র

ধরলা নদীর উপর ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে একটি সেতু। সেতুর উত্তরে ভারতের গীতলদহ স্টেশন। দক্ষিণে ভারতীয় ভূখণ্ড পেরিয়ে সীমান্ত। আর সীমান্তের ওপারে বাংলাদেশের মোগলহাট স্টেশন। দুই স্টেশনের দূরত্ব মাত্র তিন-চার কিলোমিটার। প্রায় সীমান্ত পর্যন্ত ভারতীয় ভূখণ্ডে রেল লাইন রয়েছে। তা অবশ্য পরিত্যক্ত। সেতু পেরিয়ে পুরনো গীতলদহ স্টেশন এখন সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর ডেরা। দাবি উঠেছে, দুই দেশের সেই পুরনো রেল লাইন আবার জুড়ে দেওয়া হোক।

Advertisement

তাতে তৈরি হতে পারে যোগাযোগের নতুন সম্ভাবনা। আশা, বাড়বে ব্যবসা-বাণিজ্য। বাড়বে দু’দেশের মানুষের সম্প্রীতি। রেল যোগাযোগের ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া কোচবিহারে, দিনহাটা থেকে বাংলাদেশ হয়ে কলকাতা পর্যন্ত পরিত্যক্ত রেললাইন ফের চালু করার দাবি উঠেছে। সেই সঙ্গে জোরদার হচ্ছে দিনহাটা বামনহাট থেকে বাংলাদেশ হয়ে অসমের ধুবড়ি পর্যন্ত আরও এক পরিত্যক্ত রেলপথ চালু করার দাবিও। বিভিন্ন রেল-দাবি সমিতির পাশাপাশি ব্যবসায়ী সংগঠনগুলির কথায়, দুই দেশের চুক্তির মধ্যে দিয়ে এই দুই জায়গার সঙ্গে কোচবিহারের যোগাযোগ চালু হলে আর্থিক উন্নয়ন ঘটবে কোচবিহারের। তাই বাংলাদেশের কয়েকটি রেল স্টেশনকে করিডর হিসাবে ব্যবহার করার ব্যাপারে দু’দেশের সমঝোতা হলে খুলে যাবে এক নতুন দিগন্ত। বর্তমানে কোচবিহার থেকে কলকাতা যেতে সময় লাগে ১৮ থেকে ২০ ঘণ্টা। দুই দেশের মাঝে গীতালদহ ও লালমণিহাটের মাত্র তিন কিলোমিটার রেলপথ জুড়লেই কোচবিহার-কলকাতা যাতায়াতে সময় লাগবে বড়জোর ছয় থেকে সাত ঘণ্টা।

দেশভাগের আগে রেলের আলিপুরদুয়ার বামনহাট সেকশনটি বাংলাদেশের ভুরুঙ্গামারি, পাটেশ্বরী ও সোনারহাট হয়ে অসমের ধুবড়ি পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। একই ভাবে গীতলদহ জংশন থেকে ধরলা নদী পেরিয়ে বাংলাদেশের মোগলহাট, লালমণিরহাট, তিস্তা, কাউনিয়া, পার্বতীপুর স্টেশন দিয়ে হিলি, সান্তাহার, দর্শনা, গেদে হয়ে রানাঘাটের উপর দিয়ে শিয়ালদহ পর্যন্ত যাওয়ার ব্যবস্থা ছিল।

Advertisement

মাত্র ৩-৪ কিলোমিটার এই রেলপথ জুড়ে দিয়ে, বন্ধ এই পুরনো রেলপথ নতুন করে খোলার দাবিতে বিভিন্ন সংগঠন সরব হয়েছে। দিনহাটা মহকুমা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক রানা গোস্বামী বলেন, ‘‘এই পথ খোলার জন্য সমিতির পক্ষ থেকে ইতিপূর্বে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছে গণস্বাক্ষর সম্বলিত দাবিপত্র পাঠানো হয়।’’ এই রেলপথ চালুর দাবিতে আবারও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে ভারত ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে আবেদন জানানো হবে বলে তিনি জানান। তিনি জানান, গত ফেব্রুয়ারি মাসে শিলিগুড়িতে চার দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে সভায় ভুটানের প্রতিনিধিরা গীতলদহ হয়ে, বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগের এই পথ খোলার পক্ষে সওয়াল করেন ।

দিনহাটা ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে একই দাবিতে আন্দোলনে নামার কথা জানানো হয়েছে। সংগঠনের সম্পাদক উৎপলেন্দু রায় জানান, তাঁরাও দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের কাছে এই পথ খোলার জন্য দাবি জানানোর পাশাপাশি আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। দিনহাটা নাগরিক মঞ্চের পক্ষ থেকে সম্পাদক জয়গোপাল ভৌমিক, দিনহাটা জনজাগরণ মঞ্চের সম্পাদক হিটলার দাস প্রমুখরাও এই রেলপথ খোলার জন্য সাংগঠনিকভাবে আন্দোলন গড়ে তোলার কথা বলেন ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন