ইন্ডোর স্টেডিয়ামে দেওয়াল চুঁইয়ে জল পড়ছে। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।
এখনকার ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খুবই চাপ। স্কুলের পাশাপাশি একাধিক বিষয়ে টিউশন পড়তে যেতে হয় তাদের। ফলে খেলাধুলা করার অবকাশ কোথায়? মাঠ মুখোই হয় না তারা।
আমি ক্রিকেট খেলার সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। ফুটবল খেলাতেও সমান ভাবে অংশগ্রহণ করতাম। দুইদলে ২২ করে খেলোয়ার থাকত। প্রস্তুতি নেওয়ার সময় মাঠে জায়গা পাওয়া যেত না। তাই খেলার জন্য মাঠে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হত। দশ মিনিটের বেশি খেলার জন্য সময় পাওয়া যেত না। আমাদের সময় মাঠের অভাব তো ছিলই, ছিল খেলার সামগ্রীর অভাবও। তবুও খেলাটি আমরা ভালোবেসে চালিয়ে গিয়েছি। তখনকার মতো এখনও খেলার পরিকাঠামোর উন্নয়ন হয়নি। তবে ছেলে মেয়েরা মাঠ মুখো না হওয়ায় মাঠ ফাঁকা পড়ে থাকছে।
আমি ইংরেজবাজার শহরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বালুচরের বাসিন্দা। আমার বাড়ি থেকে খেলার মাঠের দুরত্ব খুব বেশি না। তাই দৈনিক গিয়ে খেলাধুলা করতাম। ক্রিকেট খেলার প্রতি আমার আগ্রহ বরাবরই। আমি ১৯৬৮ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত খেলেছি। ইন্টার স্কুল টিমের অধিনায়কও ছিলাম। আন্তঃ জেলা স্কুল স্তরে খেলায় আমরা পরপর দু’বার সেরা হয়েছিলাম। আমি ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতাম। এই খেলাধুলার জন্য আমি চাকরি পেয়েছি। সেচ দফতরে চাকরি করতাম। ২০১০ সালে চাকরি থেকে অবসর নিয়েছি। চাকরির সঙ্গে সঙ্গে আমি ছেলেদের কোচিং করাই। আমার শহিদ মৈত্র নামে একটি কোচিং সেন্টার রয়েছে যেখানে ১০০ জন খেলোয়ার রয়েছে।
জেলার খেলার পরিবেশ বদলেছে ঠিকই। মাঠ সাজানো হয়েছে। তবে আগের মতো এখনও মাঠের সমস্যা রয়েছে। জেলায় ক্রিকেট খেলার উপযোগী মাঠ আজও গড়ে উঠেনি। শুধু তাই নয়, আমার জেলার ছেলেরা বাইরে ঠিক মতো সুযোগ পাচ্ছে না। জেলায় প্রতিভাবান বহু খেলোয়া়ড় রয়েছে। কলকাতায় তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। অধিকাংশ ছেলেদের আর্থিক অবস্থা খুব ভাল নয়। যাতে ছেলেরা সারা বছরই খেলতে পারে এবং সিনিয়রদের সঙ্গে জুনিয়ারদের কথাও ভাবতে হবে জেলা ক্রীড়া সংস্থাকে। তাদের জন্যেও নিয়মিত টুর্নামেন্ট করতে হবে।
সুব্রত কুণ্ডু, কোচ, মালদহ জেলা সিনিয়র ক্রিকেট দল
প্রয়োজন প্রশিক্ষণও
প্রাক্তনীদের কাছ থেকে জানতে পেরেছি, বিভিন্ন সময়ে জেলা থেকে নাম করা খেলোয়াড় উঠে এসেছেন। আমাদের সময়েও ভাল খেলোয়াড় রয়েছে। তবে তারা ঠিক মতো প্রশিক্ষণ পাচ্ছে না। খেলার আর্দশ পরিবেশ পাচ্ছে না। তাই তাঁদের প্রতিভা সবার সামনে তুলে ধরারও সুযোগ পাচ্ছে না। খেলার মাঠেরও সমস্যা রয়েছে। ফুটবল হোক বা ক্রিকেট কোন খেলারই নিজস্ব মাঠ নেই। শহরের মধ্যে মাত্র দু’টি মাঠে খেলাধুলো চলছে। একটি খেলা চললে, অপরটি বন্ধ থাকছে। ফুটবল এবং ক্রিকেট খেলার জন্য অবশ্যই পৃথক মাঠের প্রয়োজন। আর আমাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কোচেরও অভাব রয়েছে। আমাদের খেলার সুযোগ দিতে হবে।
ইংরেজবাজারের একটি ক্লাবের উদ্যোগে এসআরএমবি কাপ টুর্নামেন্ট হয়ে আসছে সাত আট বছর ধরে। এটাই শহর এবং জেলার মধ্যে বড় টুর্নামেন্ট। সেখানে বাংলাদেশ থেকেও টিম আসে। তবে জেলার টিমে আমরা দু’ একজন ছাড়া জেলার ছেলেরা সুযোগ পায় না। কিন্তু সবাই এই টুর্নামেন্টের দিকেই তাকিয়ে থাকে। আমাদের ভরসা শুধু লিগই। জেলাj লিগের পাশাপাশি জোন লিগ। জেলা লিগে বয়সের মাপকাঠি থাকে না। ফুটবল, ভলিবল, কাবাডির মতো সব খেলাতে বয়সের মাপকাঠি অনুযায়ী লিগকে ভাগ করতে হবে।
আমি মালদহ সিনিয়ার ক্রিকেট দলের অধিনায়ক। ২০০৪ সালে জোন লিগে আমরা সেরা হয়েছিলাম। বাইরে খেলতে গিয়ে দেখেছি বিভিন্ন জেলার এক জন করে প্রতিনিধি থাকে যারা সবার সঙ্গে পরিচয় করায়। খরচের ভারও নিজেদের বইতে হয় না। আমরা সেই সুযোগ পাই না। ফলে অনেকেই খেলা ছেড়ে চলে আসে।
নিজামুদ্দিন, ক্রিকেট অধিনায়ক, মালদহ জেলা সিনিয়র ক্রিকেট দল।