(বাঁ দিকে) শিক্ষকদের ঘর ফাঁকা। (ডান দিকে) ক্লাস নিচ্ছে ছাত্রীরা। —নিজস্ব চিত্র
ক্লাস পরিচালনার ভার ছাত্রীদের হাতে ছেড়ে জেলা স্কুল পরিদর্শকের কাছে স্মারকলিপি দিতে গেলেন সমস্ত শিক্ষক- শিক্ষিকা। এই ঘটনায় বিতর্কের মুখে পড়েছেন দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটের চকভৃগু এলাকার নদীপাড় গার্লস স্কুলের ওই শিক্ষক শিক্ষিকারা।
শিক্ষকদের অভিযোগ, তাঁদের রিটার্ন সই করে প্রধান শিক্ষিকা ঠিক সময়ে জমা না দেওয়ায় সামনের মাসের বেতন পেতে সমস্যা হবে। এই আশঙ্কাতেই এ দিন একসঙ্গে স্কুল ছেড়ে ওই অভিযান বলে জানান তাঁরা।
ঘটনায় জেলা স্কুল পরিদর্শক(মাধ্যমিক) দীপঙ্কর রায় শিক্ষকদের তিরস্কার করে অফিসঘর থেকে বেরিয়ে যান বলে জানা গিয়েছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকাকে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দিয়ে ডিআই দীপঙ্করবাবু ওই স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতিকেও বিষয়টি জানিয়েছেন। প্রধান শিক্ষিকা অনুরাধা সেন ছুটিতে ছিলেন। ঘটনার খবর পেয়ে তিনি তড়িঘড়ি দুপুরের পর স্কুলে যান। তার বক্তব্য, ‘‘এ ধরণের কোনও ঘটনা হয়নি। রির্টানে সইও করা হয়েছে।’’ স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি বলেন, ‘‘অভিযোগ শুনেছি। খতিয়ে দেখা হবে।’’
নিয়ম মতো প্রতিমাসের ১০ তারিখের মধ্যে শিক্ষকদের হাজিরা সই, পড়ুয়াদের উপস্থিতি এবং স্কুলের সে মাসের তথ্য সম্বলিত রিপোর্ট বিদ্যালয় পরিদর্শকের দফতরে জমা দিতে হয়। না হলে ওই রির্টান পাশ হয় না। তাতে পরের মাসে বেতন পেতে শিক্ষকরা সমস্যায় পড়তে পারেন। স্কুল সূত্রের খবর, ওই গার্লস হাই্স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা অন্য জেলায় বদলি হবেন বলে প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। ফলে তিনি নিয়মিত স্কুলে আসছেন না।
শিক্ষক শিক্ষিকাদের অভিযোগ, চলতি মাসের ১৩ তারিখ পার হলেও প্রধান শিক্ষিকা রির্টান পাঠাননি। ফলে সামনের অগস্ট মাসের বেতন পেতে জটিলতা দেখা দেবে। তাই দলবেঁধে স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারা স্কুল ছেড়ে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে শহরের রঘুনাথপুর এলাকায় ডিআইয়ের অফিসে গিয়ে তাকে সমস্যার বিষয়ে অবহিত করতে যান ।
এদিন দ্বিতীয় পিরিয়ডের পর গিয়ে দেখা যায়, স্কুলের মোট ২৭ জন শিক্ষক ও শিক্ষিকার মধ্যে ৫ জন পার্শ্বশিক্ষক শিক্ষকরুমে বসে আছেন। বাকি ২২ জন স্থায়ী শিক্ষক শিক্ষিকা স্কুল ছেড়ে চলে গিয়েছেন ডিআই অফিসে। শ্রেণীকক্ষে তখন পঠনপাঠনের দায়িত্ব তুলে নিয়েছেন ছাত্রীরাই। তারা বলেন, ‘‘শিক্ষকেরা বলেছেন কিছুক্ষণ বাদে চলে আসবেন। আমরা যেন ততক্ষণ নিজেরা ক্লাস চালিয়ে নেই।’’ সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা স্কুলে উপস্থিত হয়েছেন সে খবর পৌঁছে যায় ওই শিক্ষকদের কাছে। এইভাবে বিনা অনুমতিতে তারা স্কুল ছাড়তে পারেন কিনা, জানতে চেয়ে ততক্ষণে ডিআই ওই শিক্ষকদের কাছে তুমুল ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ডিআইয়ের ভর্ৎসনা শুনে তড়িঘড়ি স্কুলে ছুটে এসে তারা মুখে কুলুপ আঁটেন।