পুরসভার সভাগৃহে চলছে আলোচনা। — নিজস্ব চিত্র।
বালুরঘাট-হিলিকে করিডর করে বাংলাদেশ হয়ে মেঘালয়ের মধ্যে সড়ক, রেল এবং আকাশপথে ফের যোগাযোগ তৈরির দাবিতে রবিবার দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটে তিন দেশের বিশিষ্ট নাগরিক এবং জন প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে সভা হল। বালুরঘাট পুরসভার সভাগৃহে আয়োজিত ওই আলোচনাচক্রে হিলি-বালুরঘাট, মেঘালয় এবং বাংলাদেশের নাগরিক এবং জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সর্বদলীয় ওই যৌথ আন্দোলন কমিটির তরফে ওই করিডর চালুর বিষয়ে ভারতের রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীকেও জানানো হয়েছে।
রবিবার ফের বালুরঘাটে কনভেনশন থেকে বিশিষ্ট নাগরিকেরা দিল্লিতে বিষয়টি সাংসদদের মাধ্যমে সংসদে তুলে ধরতে দরবারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বৈঠকে হিলির বিশিষ্ট নাগরিক থেকে বহির্বাণিজ্য ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধি এবং জেলার বিজেপির জেলা সভাপতি শুভেন্দু সরকার, তৃণমূল নেতা সুভাষ চাকী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পাশাপাশি বাংলাদেশের শাসক দল আওয়ামি লিগের দিনাজপুর জেলার উপদেষ্টা সৈয়দ মোস্তাফিজুর রহমান, ওপার হিলি উপজেলার আওয়ামি লিগের সাধারণ সম্পাদক শাহিনুর রেজা শাহিন, বহির্বাণিজ্য গ্রুপের ওপার হিলির সম্পাদক মহম্মদ হারুনুর রশিদ প্রমুখ এবং যৌথকমিটির মেঘালয়ের প্রতিনিধি বিপ্লব বসু উপস্থিত ছিলেন। দু’টি বঞ্চিত এলাকার অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে ওই যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ইতিমধ্যে যৌথ আন্দোলন কমিটির মাধ্যমে রাজ্যের প্রায় সমস্ত সাংসদের কাছে দাবি সনদ পাঠিয়ে বিষয়টি নিয়ে সরকারি স্তরে হস্তক্ষেপ দাবি
করা হয়েছে।
যৌথ কমিটির আহ্বায়ক নবকুমার দাস বলেন, দেশভাগের আগে হিলি সীমান্ত দিয়ে তৎকালীন দার্জিলিং মেলে চেপে বালুরঘাটের মানুষ মাত্র ৬ ঘন্টায় কলকাতা পৌঁছতেন। হিলি-সান্তাহার-দর্শনা-ঈশ্বরদি-হার্ডেনব্রিজ-ভেড়ামারা-রানাঘাট-শিয়ালদহ ধরে সাবেক ওই রেলপথটি এখনও চালু রয়েছে। দর্শনা ও গেদে পর্যন্ত ট্রেনও চলাচল করে। ওই রেলপথ দিয়েই এক সময় কোচবিহার, অসম থেকে মেঘালয়ের বাসিন্দাদের কলকাতা সহ অন্যত্র খুব অল্প সময়ে যাতায়াত চালু ছিল। কিন্তু দেশভাগের পর ওই রেলপথ বাংলাদেশের মধ্যে পড়ে যাওয়ায় এ অঞ্চলের মানুষ সহজ যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। সহজ পথ হারিয়ে উন্নতির রাস্তাও আটকে যায় বলে তাঁদের দাবি।
আলোচনা সভায় বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ হিমাংশু সরকার বলেন, মেঘালয়ের পশ্চিম হিলের জেলা সদর তুরা থেকে কলকাতার দূরত্ব প্রায় ১৬০০ কিলোমিটার। কিন্তু তুরা থেকে মহেন্দ্রগঞ্জ হয়ে ভায়া বাংলাদেশের হিলি রেলপথ দিয়ে দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলি-বালুরঘাট হয়ে কলকাতার দূরত্ব কমে দাঁড়াবে প্রায় ৯০০ কিলোমিটারে। একই ভাবে দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট-হিলির মানুষ বাংলাদেশের হিলি রেলপথ দিয়ে জয়পুরহাট—দর্শনা হয়ে শিয়ালদহ পৌঁছতে মাত্র প্রায় ৩১০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে মাত্র ৫ ঘন্টায় কলকাতা পৌঁছতে পারবেন। দেশভাগের পরে বাংলাদেশের দিকে বন্ধ হয়ে পড়া এই রুটটি চালুর দাবি জানিয়েছেন বাসিন্দারা। বর্তমানে বালুরঘাট-হিলির সঙ্গে কলকাতার দূরত্ব প্রায় ৪৬০ কিলোমিটার।
পশ্চিমবঙ্গ ও মেঘালয় রাজ্য সরকারের তরফে এ বিষয়ে কেন্দ্রের কাছে প্রেরিত অ্যাকশন প্ল্যানের উপর ভারত-বাংলাদেশ সরকার সম্মতি দিলে ওই পথ পুনরায় ব্যবহারের সুযোগ মিলবে বলে এ দিনের সভা থেকে নাগরিকেরা আশা প্রকাশ করেন। নবকুমারবাবু জানান, ২০১১ সালে দেশের জাতীয় যোগাযোগ উন্নয়ন নির্ধারণ কমিটির তরফে সংশ্লিষ্ট দফতরের চেয়ারম্যান বিবেক সহায় পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের মধ্যে ভায়া দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলি থেকে মেঘালয় পর্যন্ত করিডর চালুর জন্য পরিকাঠামো উন্নয়নের সিদ্ধান্তের বিষয়টি উল্লেখ করেছিলেন। পাশাপাশি কলকাতা-বসিরহাট থেকে বাংলাদেশের খুলনা পর্যন্ত করিডর চালুর বিষয়েও উন্নতির উল্লেখ করেন। কিন্তু হিলি-মেঘালয় করিডরের বিষয়টি কার্যকর হয়নি।