ব্যাঙ্কে তালা দিলেন গ্রাহকরা

নোট বাতিলের ঘোষণার পরে প্রথম মাস পয়লায় তালা-অবরোধ-লাইনের হয়রানির অভিযোগই চলল উত্তরবঙ্গ জুড়ে। গত কয়েক দিন ধরেই টাকা না পেয়ে ব্যাঙ্কে তালা অথবা সামনের রাস্তায় অবরোধ চলছে, বৃহস্পতিবার ডিসেম্বরের প্রথম দিনে কোচবিহারের ব্যাঙ্কের শাখায় তালা ঝুলিয়ে দেন গ্রাহকরা, কিছু ক্ষেত্রে আবার টাকা না থাকায় কর্তৃপক্ষই গেট বন্ধ করে দেন।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:১৬
Share:

নোট বাতিলের ঘোষণার পরে প্রথম মাস পয়লায় তালা-অবরোধ-লাইনের হয়রানির অভিযোগই চলল উত্তরবঙ্গ জুড়ে। গত কয়েক দিন ধরেই টাকা না পেয়ে ব্যাঙ্কে তালা অথবা সামনের রাস্তায় অবরোধ চলছে, বৃহস্পতিবার ডিসেম্বরের প্রথম দিনে কোচবিহারের ব্যাঙ্কের শাখায় তালা ঝুলিয়ে দেন গ্রাহকরা, কিছু ক্ষেত্রে আবার টাকা না থাকায় কর্তৃপক্ষই গেট বন্ধ করে দেন। টাকা না পেয়ে জাতীয় সড়কও অবরোধ হয় ফালাকাটায়। লাইন যত বেড়েছে দুর্ভোগ-হয়রানিও তত বেড়েছে।

Advertisement

ব্যাঙ্ক কর্তার পথরোধ

টানা আট দিন ধরে গ্রাহকরা ব্যাঙ্ক থেকে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে। ফালাকাটার ভুটানিরঘাট উত্তরবঙ্গ ক্ষেত্রীয় গ্রামীণ ব্যাঙ্কে টাকা না মেলায় এ দিন প্রায় দেড় ঘন্টা অবরোধ চলে জাতীয় সড়কে। গত সাত দিন ধরেও ব্যাঙ্কের সামনে ছোট-মাঝারি বিক্ষোভ চলেছে। মাস পয়লায় সেই বিক্ষোভ তুঙ্গে ওঠে। ক্ষোভের আঁচ বাড়়তে থাকে গত বুধবার থেকে। সে দিন দিনভর ওই শাখার কর্মীদের অফিসের ভিতরেই আটকে রাখেন গ্রাহকদের একাংশ। ব্যাঙ্কের তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, এ দিন থেকে টাকা মিলবে। সকাল থেকে কয়েক’শো গ্রাহক ব্যাঙ্কের সামনে লাইন দেন। ঘড়ির কাঁটা দশটা ছুঁতেই কর্মীরা জানিয়ে দেন, ‘‘আজও টাকা আসেনি।’’ তারপরেই শুরু হয় বিক্ষোভ। উত্তেজিত গ্রাহকরা কর্মীদের ভিতরে ঢুকতে না দিয়ে প্রথমে কিছু ক্ষণ বিক্ষোভ দেখায়। কিছু পরে শুরু হয় জাতীয় সড়ক অবরোধ। ব্যাঙ্ক ঢুকতে না পেরে লাগোয়া সড়কের যাত্রী বিশ্রামাগারে বসে ছিলেন গ্রামীন ব্যাঙ্কের সহকারি ম্যানেজার অধীর তালুকদার। তিনি বলেন, “গত আটদিন ধরে একটি টাকাও আসেনি ব্যাঙ্কে। পড়ে আছে মাত্র চল্লিশ হাজার টাকা। বুধবার গ্রাহক বিক্ষোভে ব্যাঙ্কে ঢুকতেই পারিনি। এ দিনও বসে বসে শুধু গ্রাহকদের গালিগালাজ শুনছি।’’

Advertisement

হুড়োহুড়ি, ধাক্কাধাক্কি

কে কার আগে লাইনে ছিলেন? সুযোগ বুঝে লাইনে কেউ ঢুকে পড়লেন, এমনই অভিযোগে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়ে গেল এসবিআইয়ের বালুরঘাট শাখায়। এ দিন সকাল থেকেই বালুরঘাটে স্টেট ব্যাঙ্ক থেকে বেতন তুলতে লাইনে দাঁড়াতে গিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। ধাক্কাধাক্কিতে বয়স্করা মাটিতে বসে পড়েন। শেষমেস পেনশনারদের জন্য আলাদা লাইন করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়। তবে বেতন ও পেনশন বাবদ ব্যাঙ্ক থেকে মাথা পিছু ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা ধরিয়ে দিয়ে দু’দিন পরে ফের টাকা তোলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তপন ব্লকের বালাপুর বঙ্গিয় গ্রামীণ বিকাশ ব্যাঙ্ক থেকে এদিন শুধু মাত্র শিক্ষক এবং সরকারি কর্মীদের বেতন দেওয়া হয়েছে। তপন পূর্বচক্রের ৫৬টি প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষকেরা মিড ডে মিলের টাকা তুলতে পারেনি।

এগিয়ে এলেন ব্যবসায়ী

নাকালের রোজনামচার মাঝেই বৃহস্পতিবার দক্ষিণ দিনাজপুরের বালাপুর এলাকায় ভিন্ন চিত্র। বৃহস্পতিবার বালাপুর এলাকার স্থানীয় পোলট্রি ব্যবসায়ী সুবোধ দাস তার কাছে জমে থাকা ১০০টাকার নোটে সাড়ে তিন লক্ষ টাকা ওই ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে জমা দিলেন। তা দিয়ে বার্ধক্য এবং বিধবা ভাতার প্রয়োজনীয় টাকার জোগান দিল ব্যাঙ্ক। ব্যাঙ্কের শাখা থেকে দুই ভাতা প্রাপক রয়েছেন ৬,৩০০ জন। সকলকে ভাতা দিতে প্রয়োজন হয় ৩ লক্ষ টাকার কিছু বেশি। শাখা ম্যানেজার সৈকত দাস বলেন, ‘‘যা টাকা আমরা পাচ্ছি সবই নতুন দু’হাজার টাকার নোটে। বার্ধক্য বা বিধবা ভাতার পরিমাণ তার কম বা বেশি। খুচরোর সঙ্কটে ভাতা দেওয়া সম্ভব ছিল না। টাকার জোগান কম থাকাতেও ভাতা দিতে সমস্যা হয়েছিল। এক ব্যবসায়ী এ দিন তিন লক্ষাধিক টাকা জমা রেখেছেন। সেই টাকা দিয়ে ভাতা মিটিয়েছি।’’ সুবোধবাবুর দাবি, ব্যাঙ্কে নিয়মিত যাতায়াতের সুবাদে টাকার সঙ্কট বৃদ্ধাদের ভাতা অমিল সবই তিনি জানতে পারেন। তিনি বলেন, ‘‘পরিস্থিতি দেখে ব্যবসার খাতিরে নগদ টাকা বেশি রাখছিলাম। কিন্তু বৃদ্ধ-বৃ্ধা সহ সাধারণ বাসিন্দাদের হয়রানির কথা ভেবে গোটা টাকাটাই ব্যাঙ্কে রেখে দেই।’’ বালাপুর এলাকায় ছোট একটি পোলট্রি মুরগির ফার্ম চালান তিনি। বিপুল পরিমাণ টাকা জমা দেওয়ায় অতিরিক্ত কর লাগবে তো। সুবোধবাবু তা নিয়ে ভাবছেন না। তাঁর উত্তর, ‘‘আরে মশাই, বছরে ৬০-৭০ হাজার টাকা আয়কর দেই। আমার সব টাকা, সাদা।’’

জানে না ব্যাঙ্কও

এ দিন জলপাইগুড়িতে শিক্ষকদের বিভিন্ন সংগঠনের তরফে প্রশাসনকে স্মারকলিপি দিয়ে সমস্যার কথা জানানো হয়। গ্রামীণ ব্যাঙ্কের সব শাখাতেই নগদ বাড়ন্ত বলে জানানো হয়েছে। শিক্ষক এবং পেনশন প্রাপকরা ব্যাঙ্কে দাঁড়িয়ে কেউ পেয়েছেন পাঁচশো, কেউ শুনেছেন, ‘‘কাল আসবেন, আজ টাকা নেই।’’ এদিনও অনেক এটিএম বন্ধ ছিল৷ হাতে গোনা যেকটি খোলা ছিল সেগুলিতে ভিড় উপচে পড়ে৷

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন