নোট বাতিলে দুঃখের হাট

সেলিমবাদ গ্রামের ছোট চাষি বাবলু পাহান রবিবার কামারপাড়া হাটে ২০ মণ ধান বেচতে এসেছিলেন। এ দিন হাটে ওই ধানের মণ প্রতি দর ছিল ৪০০ টাকা।

Advertisement

অনুপকুমার মোহান্ত

বালুরঘাট শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:৫০
Share:

বিক্রিবাটা নেই। তাই ভরা হাটেই ঘুম কামারপাড়ায়। — অমিত মোহান্ত

চিত্র-১: সেলিমবাদ গ্রামের ছোট চাষি বাবলু পাহান রবিবার কামারপাড়া হাটে ২০ মণ ধান বেচতে এসেছিলেন। এ দিন হাটে ওই ধানের মণ প্রতি দর ছিল ৪০০ টাকা। আড়তদার তাঁকে পুরনো ৫০০ টাকার নোটে ধানের দাম দিতে চাইলে বাবলু নিতে অস্বীকার করেন। নতুন নোট চাই তাঁর। শেষে দর কমের শর্তে মণ প্রতি ৩১০ টাকা দামে আড়তদারের কাছে ওই ধান বেচতে বাধ্য হলেন তিনি। বাবলুর কথায়, চাষের কাজে নেওয়া শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি মেটাতে নতুন টাকা দরকার। তারা তো পুরনো টাকা নেবে না। তাই নতুন টাকার জন্য বাধ্য হয়ে কম দামে ধান বেচতে হল।

Advertisement

চিত্র-২: কামারপাড়া হাটে পতিরামের চকবড়ম এলাকার ছোট বস্ত্র বিক্রেতা রিঙ্কু শীলের তৈরি পোশাকের দোকান। রবিবারের বড় হাট বলে বেশি করে নতুন জামা কাপড়ের পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন। বিকেল গড়িয়ে গেলেও বেচাকেনা প্রায় নেই। রিঙ্কুর কথায়, নোট বাতিলের আগে হাটে সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকার কাপড়-জামা বিক্রি হতো। এখন হাজার টাকার বিক্রিও হচ্ছে না।

নোটের ধাক্কায় এমনই অবস্থা দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটের কামারপাড়া রবিবারের হাটের। এটি এলাকার সব থেকে বড় হাট বলে পরিচিত। ব্যবসার পরিমাণ কোনও কোনও দিন কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। হাটে অন্তত ২০০০ টন ধান বিক্রি হয়। পাট বিক্রি হয় কয়েকশো কুইন্টাল। হাটের এক ধারের চাতালে শতাধিক গরু বেচাকেনা হয়। পাইকারি দরে কাপড়, সব্জি থেকে হাঁস-মুরগি-ছাগলও বেচাকেনা চলে।

Advertisement

এখন নোট অচলের ধাক্কায় ছবিটাই বদলে গিয়েছে। না বিকোচ্ছে গরু, না কাপড়। আর অন্যরা?

আলুর হাটে ৫০০ প্যাকেট (আড়াই কুইন্টাল) বীজ আলু নিয়ে ব্যাজার মুখে বসে ছিলেন বাদামাইল এলাকার ছোট ব্যবসায়ী গোকুল মোহান্ত। বিক্রিবাট্টার কথা উঠতে তিনি বলেন, ‘‘চাষিদের কাছে নতুন টাকা নেই। পুরনো ৫০০-র নোট নিয়েই তাদের কাছে বীজ বেচতে হচ্ছে। না হলে এক কেজিও বিক্রি হবে না।’’

হাটের মাঝে বটতলার নীচে এক চায়ের দোকানের পাশে পান-সুপুরি ও প্রসাধন সামগ্রীর পসরা নিয়ে বসেছিলেন সুকুমার দাস। তাঁর কথায়, নোট অচলের ধাক্কায় বিক্রি তলানিতে। ১০০-২০০ টাকার জিনিস নেওয়ার পর কিছু ক্রেতা নতুন দু’হাজারের নোট দিচ্ছেন। খুচরো হবে না বললেই তাঁরা বের করছেন পুরনো পাঁচশোর নোট! চরম সঙ্কটে পড়ে যাচ্ছি আমরা। অত খুচরো টাকা কই?

চায়ের দোকানে বসে মুখ ব্যাজার করে এলাকার মণিপুর গ্রামের বৃদ্ধ কৃষ্ণেন্দু প্রামাণিক বলেন, ‘‘৫০০ টাকার নোট নিয়ে হাট করতে এসে বিপাকে পড়েছি। ছোট ব্যবসায়ীরা কেউই ওই পুরনো টাকা নিতে চাইছেন না।’’ কামারপাড়া হাটের ম্যানেজার দুলাল মণ্ডলের কথায়, নোট অচলের ধাক্কা হাটেও লেগেছে। হাটে ছোটবড় মিলিয়ে প্রায় চার হাজার দোকান। কিছু ক্ষেত্রে ক্রেতা-বিক্রেতা পুরনো ৫০০-র নোট নিতে বাধ্য হচ্ছেন। তা না হলে হাটে পুরো বিক্রিবাট্টাই বন্ধ হয়ে পড়বে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন