রবিবারও খালি হাতেই

নোট ভোগান্তির মধ্যেই আরও এক রবিবার। ব্যাঙ্ক বন্ধ, এটিএমে টাকা নেই। শিলিগুড়ি থেকে কুমারগ্রাম উত্তরবঙ্গের এ মাথা থেকে ও মাথা টাকার জন্য হাহাকার করলেন বাসিন্দারা। কোথাও সারা দিনের অপেক্ষার পরে বিকেলে এটিএম থেকে টাকা মিলেছে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৬ ০১:৪৮
Share:

নোট ভোগান্তির মধ্যেই আরও এক রবিবার। ব্যাঙ্ক বন্ধ, এটিএমে টাকা নেই। শিলিগুড়ি থেকে কুমারগ্রাম উত্তরবঙ্গের এ মাথা থেকে ও মাথা টাকার জন্য হাহাকার করলেন বাসিন্দারা। কোথাও সারা দিনের অপেক্ষার পরে বিকেলে এটিএম থেকে টাকা মিলেছে। কোথাও আবার রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করে বন্ধ এটিএমের সামনে থেকেই ফিরতে হয়েছে গ্রাহকদের।

Advertisement

একটি এটিএম খোলা

রবিবার আলিপুরদুয়ার শহর ও সংলগ্ন প্রায় সমস্ত রাষ্ট্রায়াত্ত ও বেসরকারি ব্যাঙ্কের এটিএম বন্ধ থাকায় চরম অসুবিধায় পড়েন সাধারণ মানুষ। শুধু শহরের কলেজ হল্ট এলাকায় একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এটিএমে টাকা থাকায় সেখানে ভিড় জমান বহু মানুষ। অভিযোগ শনিবার রাত সাড়ে দশটার পর থেকে আচমকা ওই ব্যাঙ্কে লিঙ্ক চলে যাওয়ায় রবিবার সকালে টাকা তুলতে এসে দীর্ঘ ক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন বহু মানুষ। ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা সকাল আটার দিকে বেশ কিছু ক্ষণ পথ অবরোধ করেন। পাটকাপাড়ার বাসিন্দা সুলগ্না সেনগুপ্ত জানান, ‘‘প্রায় ২০ কিলোমিটার দূর পাটকাপাড়া থেকে টাকা তুলতে শহরে আসতে হচ্ছে। এ দিন সকালে এসে দেখলাম, এটিএমে লিঙ্ক নেই।’’ ভোর ছ’টা থেকে লাইনে দাঁড়ানো গ্রাহকরা বিক্ষোভ শুরু করেন এটিএমের সামনে। পরে বেলা সাড়ে দশটা নাগাদ লিঙ্ক এলে ফের টাকা তোলা শুরু হয়। জেলার লিড ডিস্ট্রিক ম্যানেজার তুষারকান্তি রায় জানান, রবিবার ছুটির কারণে এটিএমগুলিতে টাকা ভরতে পারেনি সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কগুলি। আলিপুরদুয়ার চেম্বার অফ কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাধারণ সম্পাদক প্রসেনজিৎ দে জানান, ‘‘ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়িয়ে দু’হাজার চার হাজারের বেশি পাচ্ছেন না গ্রাহকরা। এটিএমগুলিতেও টাকা নেই। মানুষের হাতে নগদের জোগান কম। মার খাচ্ছে ব্যবসা।’’

Advertisement

ফুরিয়ে গেল টাকা

কোচবিহার সাগরদিঘি পাড়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এটিএমের সামনে লম্বা লাইন পড়ল। গ্রাহকদের অভিযোগ, জেলার বেশিরভাগ এটিএম এদিন বন্ধ ছিল। যে সব এটিএম খোলা ছিল তার মধ্যে কয়েকটিতে মাত্র টাকা ছিল। তাও দ্রুত ফুরিয়ে যায়। পরিস্থিতির জেরে প্রত্যন্ত মহকুমা থেকেও গ্রাহকদের অনেককেই কোচবিহার শহরের সাগরদিঘি পাড়ের ওই এটিএমের সামনে লাইন দেন। তাঁদের এক জন রফিকুল ইসলাম বলেন, “তুফানগঞ্জের লাঙ্গলগ্রাম এলাকায় আমার বাড়ি। এলাকার কোন এটিএমে টাকা নেই। হাত একদম ফাঁকা। বাধ্য হয়ে কোচবিহার শহরে এসেছি। এখানেও বিশাল লাইন। শুনছি একটি করে দু’হাজার টাকার নোট দেওয়া হচ্ছে। সেটা পেলেও কী ভাবে খুচরো করে খরচ চালাব ভাবছি। কারণ সবার হাতেই ওই একই নোট।” ব্যাঙ্ক সূত্রের খবর, একে পর্যাপ্ত মজুত টাকা নেই। তার ওপর শনি ও রবিবার পরপর দু’দিন ছুটি পড়ে যাওয়ায় সমস্যা হয়েছে। সোমবার বামেদের ডাকা বন্‌ধ রয়েছে। নতুন টাকার জোগান না এলে ভোগান্তি মেটা নিয়ে চিন্তা থাকছেই।

শুধু ২ হাজার টাকা

মালদহ শহরে এটিএম হাতো গোনা যে কয়েকটি খোলা রয়েছে, সে গুলিতে মিলছে দু’হাজার টাকার নোট। ফলে গ্রাম থেকে খুচরো টাকার জন্য শহরে এসে এটিএম থেকে না পেয়ে বিফল মনোরথে বাড়ি ফিরলেন অনেকেই। অনেকে আবার কোন এটিএম খোলা রয়েছে তা জানতে দিনভর চক্কর কাটলেন শহরে। মালদহ জেলায় ২০৫টি এটিএম রয়েছে. লিড ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সেগুলির মধ্যে মাত্র ৭-৮টি খোলা ছিল। কিন্তু সেগুলির বেশিরভাগেই মিলেছে দু’হাজার টাকার নোট। গ্রামে এটিএম না থাকায় পুরাতন মালদহের যাত্রাডাঙা থেকে বাইকে এ দিন মালদহ শহরে এসেছিলেন স্বপন মুর্মু ও রাজা এক্কা। তাঁরা ভিন রাজ্যে কাজ করেন। তাঁরা বলেন, ‘‘প্রথমে কোন এটিএম খোলা রয়েছে তা খুঁজতেই সময় গেল। শেষ পর্যন্ত বি এস রোডে স্টেট ব্যাঙ্কের একটি এটিএম খোলা পেলাম। সেখানে লাইন ছিল অনেক লম্বা। লাইনে দাঁড়িয়েওছিলাম। কিন্তু যখন জানলাম এটিএম থেকে শুধু দু’হাজার টাকার নোট দিচ্ছে তখন বেরিয়ে এলাম।’’ একই অভিজ্ঞতা মহদিপুরের সফিকুল ইসলাম বা পীরগঞ্জের নওসাদ আলিরও। মালদহের লিড ব্যাঙ্ক ম্যানেজার রবীন্দ্রনাথ শর্মা বলেন, খুচরো টাকা কম থাকাতেই এটিএমে দুহাজারের নোট রাখতে হচ্ছে।

দিনভর চক্কর

জলপাইগুড়িতে এটিএম দুর্ভোগ চলছেই৷ এ দিনও শহরের বেশির ভাগ এটিএম বন্ধ ছিল৷ ফলে প্রয়োজন সত্বেও টাকা তুলতে পারেননি অনেকেই৷ কোন এটিএম খোলা রয়েছে, খোঁজ করতেই শহরে কয়েকবার চক্কর কাটলাম। জলপাইগুড়ির বাসিন্দা শঙ্কর দাস বলেন, ‘‘সকাল থেকেই টাকার জন্য সর্বত্র ঘুরে বেড়াচ্ছি৷ কিন্তু দেখলাম বেশিরভাগ এটিএমেরই সাটার নামানো৷ যে সব এটিএমে সাটার তোলা সেখানেও টাকা পেলাম না৷’’

হাটে মুশকিল

বালুরঘাট শহরে হাতে গোনা দুটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এটিএম ছাড়া বাকি সব ব্যাঙ্কর এটিএমের ঝাঁপ বন্ধ ছিল। সকাল থেকে মানুষ টাকার জন্য হন্যে হয়ে ঘুরেও নিজের রোজগারের টাকা তুলতে পারেননি। এদিন এ জেলার বালুরঘাট, তপন, গঙ্গারামপুর এলাকায় ছিল একাধিক বড় হাট। বালুরঘাটের পতিরাম হাটের ছোট সবজি বিক্রেতা রাজেশ প্রসাদ বলেন, হাতে নগদ বাড়ন্ত। এটিএমও বন্ধ। হাটে মহাজনকে অন্তত হাজার দুয়েক টাকা ধরিয়ে দিতে পারলে সবজি পেঁয়াজ আদার সরবরাহ পেয়ে বেচাকেনা করতে পারতাম। কি হবে বুঝতে পারছিনা। এদিন জেলার প্রায় সর্বত্র টাকার অভাবে এটিএমের দরজা বন্ধ থাকায় হাট বাজারে নগদ টাকায় বেচাকেনা করা ছোট বৃত্তি ব্যবসায়ীরা আতান্তরে পড়েন। জেলায় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের চেষ্ট বা সিন্দুক ব্যাঙ্ক বালুরঘাটের এসবিআই-তে টাকা না থাকায় এটিএম ব্যবস্থাও মুখ থুবড়ে পড়েছে। এ দিন বিকেলে শিলিগুড়ির হিলকার্ট রোডে একটি বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কের এটিএমের সামনে লম্বা লাইন রাস্তায় চলে আসে। সকাল থেকেই শিলিগুড়িতে শুরু হয় এটিএম সঙ্কট। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এটিএমগুলির সিংহভাগের ঝাপ নামানো ছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন