বিকল ফোয়ারায় জমছে জল। (ইনসেটে) হাসপাতালের লিফ্টরুমে জমা জল — নিজস্ব চিত্র
ডেঙ্গির দাপট দ্রুত হারে বেড়েছে শিলিগুড়ি শহরে। ১৭ অগস্ট পর্যন্ত যেখানে শিলিগুড়ি পুর এলাকায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ন’জন, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে অন্তত পঞ্চাশে।
৮, ১৩, ১৭, ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডে ডেঙ্গির সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি। তার মধ্যে ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা খোদ পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রেই খবর, ওই ওয়ার্ডেই এখনও পর্যন্ত অন্তত ১০ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। যে ওয়ার্ড থেকে মেয়র নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন, সেই ৬ নম্বর ওয়ার্ডেও অন্তত ৫ জন আক্রান্ত। দার্জিলিং জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অসিত বিশ্বাস বলেন, ‘‘যাঁদের ডেঙ্গি ধরা পড়েছে, তাঁদের মধ্যে ২৩ জনের ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে কলকাতা বা অন্য জায়গা থেকে জ্বর নিয়ে ফিরেছেন। না হলে আক্রান্তের সংখ্যা আরও কিছুটা কম হতো। দু’এক দিনের মধ্যেই সচেতনতা প্রচারের জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে সমীক্ষা করবেন স্বাস্থ্যকর্মীরা।’’
ঠিক ছিল প্রতি শুক্রবার ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে পুরসভার সঙ্গে জেলা স্বাস্থ্য দফতর বৈঠক করবে। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। অথচ সেই বৈঠকও নিয়মিত হচ্ছে না বলে অভিযোগ। মেয়র অশোক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘গত শুক্রবার বৈঠক হয়নি। তবে পরিস্থিতি নিয়ে বৃহস্পতিবারই বৈঠক ডাকা হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর শেষ জানিয়েছিল শহরে ২৩ জনের দেহে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে বলে। তার পর থেকে এ নিয়ে আর কোনও তথ্য তাঁরা দেননি।’’
স্বাস্থ্য দফতরের হিসেবই বলছে, গত ২৭ দিনে অন্তত ৪০ জনের শরীরে নতুন করে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে শহরে। বিভিন্ন জায়গায় জল জমে মশার উপদ্রবও বেড়েছে বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। বিশেষ করে নির্মাণ কাজের জায়গাগুলিতে জল জমে থাকছে বলে তাঁরা জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে পুরসভা থেকে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানানো হলেও বাস্তবে পরিস্থিতি অন্য বলে অভিযোগ। শিলিগুড়ি হাসপাতালের লিফটের ঘরের প্রচুর জল জমে রয়েছে। সেখানে মশা জন্মাচ্ছে বলেও অভিযোগ। ওই জল পরিষ্কারের কাজ শুরু করেছেন কর্তৃপক্ষ। তাঁদের দাবি, লিফটের ঘর সংস্কারের কাজও করতে হবে। কেন না নির্মাণের সময় ত্রুটির জেরে বৃষ্টি হলে মাটির জল চুঁইয়ে লিফটের ঘরে জমছে। জন্মাচ্ছে মশা।
পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, ‘‘পুরসভার তরফে ডেঙ্গি পরিস্থিতি গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত। পুর কর্তৃপক্ষ করছেনটা কী? মেয়র অধিকাংশ সময় শহরে থাকেন না। আমি কলকাতায় রয়েছি। দু’দিন বাদে ফিরে স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলব।’’
ডেঙ্গি হচ্ছে পাহাড়েও। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, দার্জিলিং পুরসভা এলাকায় অন্তত চার জনের ডেঙ্গি ধরা পড়েছে। সেই সঙ্গে তাগদা, বিজনবাড়ি, সুকনা এলাকাতেও একাধিক জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন গত কয়েক সপ্তাহে। পাহাড়ে এখনও পর্যন্ত ১১ জনের শরীরে ডেঙ্গির জীবাণু পাওয়া গিয়েছে। জলপাইগুড়ি জেলার অধীনে থাকা শিলিগুড়ি পুর এলাকার ১৪টি সংযোজিত ওয়ার্ডে ডেঙ্গি আক্রান্ত অন্তত ১৭ জন। বাকি ৩৩টি ওয়ার্ডে ওই সংখ্যা ৩৩। পুর এলাকা বাদ দিয়ে শিলিগুড়ি মহকুমার তিনটি ব্লকে আক্রান্ত ১২ জন।