‘অজানা জ্বর’
Dengue

চিকিৎসকেরা দায়সারা, স্ত্রীকে হারালাম তাই

অনেকের কাছ থেকেই শুনেছি শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা হয় না। সিঁড়ির ধারে পড়ে থাকছে রোগী। স্যালাইন লাগানোর লোক নেই।

Advertisement

সর্বজিৎ শাহ

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৭ ০২:০৫
Share:

শহরে জ্বর, ডেঙ্গির সংক্রমণ নিয়ে হইচই হচ্ছে। ৪ নম্বর ওয়ার্ডে আমাদের গোয়ালাপট্টি, মহারাজা কলোনি, নতুন পাড়া এলাকাতেও ঘরে ঘরে জ্বর। বাড়িতে স্ত্রী অসুস্থ হলে তাই আর দেরি করিনি। জ্বর, গায়ে ব্যথা, দেখেই ওঁকে নার্সিংহোমে ভর্তি করাই। কিন্তু নার্সিংহোমগুলোর অবস্থা যে কী ভয়ঙ্কর তা টের পেলাম বাড়ির লোককে নিয়ে গিয়ে। স্ত্রীকে হারালাম।

Advertisement

চিকিৎসকদের দায়সারা মনোভাবের জন্যই তাঁকে বাঁচাতে পারলাম না। চিকিৎসকরা সঠিক চিকিৎসা করতে না পারলেও রোগীকে ছাড়েন না। যখন রোগীর প্রাণ যায় যায় তখন তাঁরা হাত তুলে নেন। নিজেদের দায় ঝেড়ে ফেলতে চান। আর নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ টাকা ছাড়া কিছু বোঝেই না।

অনেকের কাছ থেকেই শুনেছি শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা হয় না। সিঁড়ির ধারে পড়ে থাকছে রোগী। স্যালাইন লাগানোর লোক নেই। তাই স্ত্রীকে বাড়ির কাছেই খালপাড়ায় একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করাই। ২৮ অগস্ট দুপুরে ভর্তি করানোর পর বিকেলে চিকিৎসক জানান এনএসওয়ান পরীক্ষায় শরীরে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে। প্লেটলেট কমে ২৫ হাজারে নেমে গিয়েছে। প্লেটলেট দিতে হবে। চিকিৎসক প্রথমে পাঁচ ইউনিট এবং পরে আরও পাঁচ ইউনিট প্লেটলেট চান। বেসরকারি ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে ১৪০০ টাকা করে প্রতি ইউনিট প্লেটলেট কিনেছি। ১৪ হাজার টাকার প্লেটলেট কিনে দিতে হয়েছে দু’দিনে।

Advertisement

কিন্তু পেটে কেন জল জমেছে তা নিয়ে চিকিৎসক কিছু বলছিলেন না। আলট্রাসাউন্ড পরীক্ষা করানো দরকার থাকলেও সংশ্লিষ্ট বিভাগের চিকিৎসক না-আসায় তা করানো যাবে না বলে জানানো হয়। আমরা বাইরে ওই পরীক্ষা করাতে চাইলে কর্তৃপক্ষ জানান, সে ক্ষেত্রে রোগীর কিছু হলে তাঁরা দায় নেবেন না। তাই ভয়ে আর সাহস দেখাইনি। ২৯ অগস্ট জানানো হয় রোগীর পরিস্থিতি ভাল নয়। অন্যত্র নিয়ে যান। এই সময় ২৫ হাজার টাকা বিল হয়েছে বলেও জানায় তারা। তা নিয়ে ওদের সঙ্গে আমাদের বচসাও হয়। শেষ পর্যন্ত লোকজন নিয়ে গিয়ে স্ত্রীকে বার করে আনি।

রাতেই আরেকটি নার্সিংহোমে ভর্তি করাই। সেখানে চিকিৎসক জানান, অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। শেষ সময় আনা হয়েছে। তবে তিনি চেষ্টা করবেন। তিনি কী চেষ্টা করছিলেন জানি না। রাতে আইসিইউতে রোগীকে ভর্তি করানো হয়। ৫ ইউনিট প্লেটলেট চাইলে আবার বেসরকারি ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে কিনে এনে দেই। ৩০ অগস্ট সকালে রোগীর পরিস্থিতি ভাল নয় বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। তখন তার নাক, কান দিয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমার স্ত্রী মারা যান। নার্সিংহোমে ৩৫ হাজার টাকা বিল দিতে হয়। এক রাত নার্সিংহোমে চিকিৎসার জন্য ওই বিপুল টাকা বিল হয়েছে দেখে অবাক হই।

প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ কেউই কিছু দেখছে না। আমার ফলের ব্যবসা। দুই মেয়ে স্কুলে পড়ে। দুই ছেলে। আমাদের মতো পরিবারের পক্ষে এত টাকা খরচ করে চিকিৎসা করানো কষ্টকর। তবু বাড়ির কেউ অসুস্থ হলে ধারদেনা করেও চিকিৎসা করাতে হয়।

শহরে ডেঙ্গি, জ্বরে এ ভাবে মানুষ মরছে অথচ সরকার কোনও ব্যবস্থাই নিচ্ছে না। মৃত্যুর শংসাপত্রে ডেঙ্গি বলে উল্লেখও করছেন না। ডেঙ্গি না হলে ঠিক কী হয়েছে সেটাও স্পষ্ট করে বলছে না। রোগ লুকানোর চেষ্টা করছে সবাই।

(মৃত দেবকুমারী শাহের স্বামী)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন