উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার এক বাস চালককে মারধরের অভিযোগ উঠেছে শিলিগুড়ি মহকুমাশাসকের দফতরের এক ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার সকাল সাতটা নাগাদ কোর্টমোড়ে পোস্ট অফিসের সামনে ঘটনাটি ঘটেছে। অভিযুক্ত ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের নাম প্রদীপ দাস। তিনি বতর্মানে শিলিগুড়ি পুর নিবার্চনে ওসি (ইলেকশন)-র দায়িত্বে রয়েছেন। ঘটনার পর জখম চালককে কন্ডাক্টর শিলিগুড়ি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে নিয়ে যায়। প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা বলেন, ‘‘দুই পক্ষের অভিযোগ মিলেছে। ঘটনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
অভিযোগ, এ দিন পানিট্যাঙ্কি রওনা হওয়ার আগে কাছারি রোডে পোস্ট অফিস তথা বয়েজ হাই স্কুলের গলির মুখে চালক সুখেন কুমার সরকার বাসটি ঘুরিয়ে সামনে দাঁড় করান। সে সময় আচমকা প্রদীপবাবু চালকের দরজার সামনে গিয়ে তাঁকে টেনে নামাতে চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ। চালক সুখেনবাবুর অভিযোগ, ‘‘কেন আমি এ ভাবে গাড়ি ঘুরিয়েছি, তাঁর গায়ে লাগতে পারত সেই প্রশ্ন তুলে প্রদীপবাবু নাকে, মুখে ঘুঁষি মারতে থাকেন। নাম জিজ্ঞেসা করলে ‘দেখে নেবেন’ বলে হুমকি দেন। অথচ প্রদীপবাবুর গায়ে ধাক্কা লাগেনি।’’ সে সময় প্রদীপবাবুর স্ত্রী এসে তাঁকে রাস্তার উল্টোদিকে সরকারি আবাসনে নিয়ে যান। ফের প্রদীপবাবু ফিরে এসে, তাঁকে চিনি কি না জিজ্ঞাসা করে ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিল করার এবং এনবিএসটিসি’তে অভিযোগ করে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার হুমকি দেন বলে অভিযোগ। ঘটনার পর চালক এবং কন্ডাক্টর থানায় ১০০ ডায়ালে ফোন করে খবর দিলে পুলিশ যায়। তখনও পুলিশ বা অভিযোগকারী চালক জানতেন না প্রদীপবাবুর পরিচয়।
প্রদীপবাবু বলেন, ‘‘ সকালে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে একটি জরুরি কাজের কথা ফোনে বলছিলাম। সে সময় গাড়িটি সেখানে ঘোরান চালক। গাড়িটি আমাকে ধাক্কা দেয়। আমি কোনও রকমে সামলে নিয়েছি। চালকের কাছে গিয়ে কেন কন্ডাক্টরকে না নামিয়ে এ ভাবে গাড়ি ঘোরাচ্ছিলেন জানতে চাই। আমাকে ধাক্কা দিয়েছে বলে জানাই। চালক তা মানতে চায়নি। তা নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। তবে চালকে কোনও রকম মারধর করা হয়নি।’’ ঘটনার পর পুলিশ চালককে নিয়ে সরকারি আবাসনে গিয়ে প্রদীপবাবুকে চিহ্নিত করেন। পরে সুখেনবাবু লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। প্রদীপবাবুর তরফেও অভিযোগ করা হয়েছে।
জওহরলাল নেহেরু আর্বান রিনিউয়াল মিশন প্রকল্পে শিলিগুড়ি-পানিট্যাঙ্কি রুটে গত ৩ মাস ধরে বাস চালাচ্ছেন সুখেনবাবু। নিয়ম অনুসারে বাঘা যতীন পার্ক থেকে গাড়িটি ঘোরানর কথা। গলি রাস্তার মুখে কেন তিনি গাড়ি ঘোরাচ্ছিলেন তাঁর জবাবে তিনি বলেন, ‘‘সকালে রাস্তা ফাঁকা থাকায় ওই মোড়েই বাস ঘোরানো হয়। পরের ট্রিপে বাঘাযতীন পার্ক থেকে গাড়ি ঘুরিয়ে আনা হয়। তা ছাডা বাসে ক্যামেরা, মনিটর ব্যবস্থা থাকায় বাস ঘোরানোর সময় কন্ডাক্টরকে নামার বা সহযোগিতা করার খুব একটা দরকার হয় না।’’
এ দিন ঘটনার পর চালককে মারধর করার প্রতিবাদে সংস্থার অন্যান্য কর্মীরা কাজ বন্ধ করে দেন। তাঁরা গাড়ি চালাতে চাইছিলেন না। পরে বুঝিয়ে তাদের শান্ত করা হয়। সংস্থার আধিকারিক গৌতম হালদার বলেন, ‘‘চালকের তরফে অভিযোগ জানানো হয়েছে। মহকুমাশাসকের দফতরে আমরা তা শীঘ্রই জানাব।’’ এনবিএসটিসি ড্রাইভার্স অ্যান্ড তৃণমূল শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমরা ঘটনার প্রতিবাদ করছি। যিনি আইনের রক্ষক তিনিই নিয়ম ভাঙছেন। চালকের দোষ থাকলে তিনি অভিযোগ করতে পারতেন। তা না করে তিনি গায়ে হাত তুলে ঠিক করেননি।’’