বেলাকোবায় প্রচারে তৃণমূল সাংসদ দেব। ছবি: সন্দীপ পাল
হাই-কলার ফুলস্লিভ সাদা টি শার্ট আর নীল রঙের প্যান্ট। চোখে কালো রোদ চশমা। মঞ্চে উঠে মাইকের সামনে এসে জোড় হাত করতেই মাঠ জুড়ে প্রবল হাততালি। মাইক হাতে নিলেও বলবেন কী! তুমুল চিৎকার তখন মাঠ জুড়ে।
মঞ্চের ওপরেও তখন প্রায় একই দশা। কিছু আগেই মঞ্চে গম্ভীর মুখে বসে থাকা নেতারাই তখন তাঁর সঙ্গে ছবি-সেলফি তুলতে হুড়োহুড়ি শুরু করে দিয়েছেন। এই উন্মাদনায় কিছুটা যেন বিব্রত হলেন তিনি। কিছু পরেই অবশ্য স্বভাবসিদ্ধভাবে দু হাত কোমরে ছুঁইয়ে দাঁড়ালেন। তা দেখে হাততালি আরও বাড়ল। বুধবার সকালে বেলাকোবা পাবলিক ক্লাবের মাঠে এমন ভাবেই দেবকে নিয়ে উন্মাদনা চলল সারাক্ষণ। রাজগঞ্জের তৃণমূল প্রার্থী, বিদায়ী বিধায়ক খগেশ্বর রায়ের সমর্থনে সভা করতে এসেছিলেন তৃণমূল সাংসদ দেব। সঙ্গে ছিলেন মুকুল রায়। কিন্তু উন্মাদনার জেরে কয়েক মিনিটেই বক্তৃতা শেষ করে দেব। এ দিন ময়নাগুড়ি এবং ধূপগুড়িতেও সভা ছিল দেবের। সব সভাতেই একই ছবি। যা দেখে জেলা তৃণমূলের এক নেতার কথায়, ‘‘সভায় কেউ বক্তব্য শুনতে এসেছে বলে তো মনে হল না, সকলেরই উদ্দেশ্য ছিল দেব-দর্শন।’’
বেলাকোবার সভায় মাইক হাতে দেব বললেন, “রাজনীতির বিষয়ে আপনারা ভাল বোঝেন। আমি দিদির সাথে থেকে দেখেছি উনি বাংলার প্রতিটা মানুষকে নিয়ে সবসময় ভাবেন। আগেও আমি উত্তরবঙ্গে এসেছি। তখন যা রাস্তার অবস্থা ছিল এখন তার চেয়ে অনেক ভাল হয়েছে।” এ দিন দেব মঞ্চে ওঠার পর জলপাইগুড়ি থেকে যাওয়া তৃণমূল ছাত্রপরিষদের নেতা অভিজিত সিংহ এবং আইনজীবী সেলের নেতা প্রতীকলাল ঝাঁর মধ্যে তার পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার জন্যে হুড়োহুড়ি চলতে থাকে। জলপাইগুড়ি পুরসভার তৃণমূল ভাইস চেয়ারম্যান পাপিয়া পাল দেবের চেয়ারের পেছনে গিয়ে দাঁড়ান ছবি তোলার জন্য। মোবাইলে দেব সমেত তাঁর ছবি তোলেন অভিজিত সিংহ।
বেলাকোবার সভা সেরে হেলিকপ্টারে চেপে ময়নাগুড়ির জল্পেশে পৌঁছন দেব। সেখানেও অভিনেতা দেবকে ছোঁয়ার জন্য এমন হুড়োহুড়ি হয় যে সভা বেশিক্ষণ চালানোর ঝুঁকি নিতে চাননি পুলিশ প্রশাসনের কর্তারা। বারবার তৃণমূল নেতাদের কাছে অনুরোধ যায়, দেব মঞ্চে থাকলেই, ভিড় হামলে পড়বে। ময়নাগুড়ির সভা সেরে দেবের গন্তব্য ছিল ফালাকাটা ও ধূপগুড়ি।
ফালাকাটায় দেব মঞ্চে বক্তব্য রাখার সময়ে এক যুবক চেঁচিয়ে বলেন, ‘‘দাদা এ সবে হবে না, চ্যালেঞ্জ নিবি না হয়ে যাক।’’ হিট সিনেমার সংলাপ বলার অনুরোধ উড়ে এসেছে ধূপগুড়িতেও। মোবাইলে ছবি তোলা ও অটোগ্রাফ নেওয়ার আগ্রহীরা ব্যারিকেডও ভেঙে ফেলেন। ফালাকাটায় দেবের সঙ্গে হাত মেলানোর জন্য এক যুবতী নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে মঞ্চেও উঠে পড়েন। দর্শকদের নানান দাবি দাওয়া সামলাতে না পেরে মাত্র সাত মিনিটেই বক্তব্য শেষ করে মঞ্চ থেকে নেমে পড়েন দেব। এরপর হেলিপ্যাডের দিকে যেতে গিয়েও ভিড় সামলাতে না পেরে ফের মঞ্চে উঠে পড়েন। পরে নিরাপত্তা রক্ষীরা ভিড় সরিয়ে অভিনেতা সাংসদকে হেলিপ্যাডে পৌঁছে দেন।
দেবের সঙ্গে সব সভাতেই উপস্থিত ছিলেন সাংসদ মুকুল রায়। সব সভাতেই মুকুলবাবু দেবের আগে বক্তব্য রাখেন। তবে দেব মঞ্চে থাকায় তুমুল উন্মাদনায় মুকুলবাবুও সংক্ষেপেই বক্তব্য শেষ করেন পরের পর সভায়।