ছিটমহলের বাসিন্দাদের জন্য পরিকাঠামো তৈরির টাকা নয়ছয়ের আশঙ্কা করে কেন্দ্রের কাছে রিপোর্ট পাঠাচ্ছে রাজ্য বিজেপি। সোমবার দুপুরে দলীয় বৈঠকে যোগ দিতে এসে রাজ্য বিজেপি’র সভাপতি দিলীপ ঘোষ শিলিগুড়িতে এ কথা জানিয়েছেন। গত ৬ অগস্ট দিলীপবাবুর নেতৃত্বে বিজেপির প্রতিনিধি দল কোচবিহার জেলার তিনটি ছিটমহল শিবিরগুলিতে গিয়েছিলেন। বাংলাদেশ থেকে আসার পর দিনহাটা, মেখলিগঞ্জ এবং হলদিবাড়িতে ২০১টি পরিবারের ৯২১ জনকে ছোট ছোট বাড়ি তৈরি করা রাখা হয়েছে। তবে ঘর থেকে শুরু করে জমি, শিক্ষা, রেশন-সহ নানা বিষয় নিয়েই ওই বাসিন্দাদের মধ্যে ইতিমধ্যে ক্ষোভ দেখা গিয়েছে।
দিলীপবাবু জানান, ছিট হস্তান্তরের পর আগত বাসিন্দাদের থাকার পরিকাঠামো তৈরির জন্য কেন্দ্র ১৭ কোটি টাকা দিয়েছে। কোচবিহারের জেলাশাসকের মাধ্যমে ওই টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু টিনের ঘর, দেওয়াল-সহ পরিকাঠামোর জন্য ২ বা আড়াই কোটি টাকার বেশি খরচ হওয়ার কথা নয়। তাহলে বাকি টাকা গেল কোথায়! বিজেপির রাজ্য সভাপতির কথায়, ‘‘আমাদের নয়ছয়ের আশঙ্কা তো হচ্ছেই। আমি বাড়ি বাড়ি গিয়ে কথা বলেছি। বিভিন্ন মহল থেকে বিস্তারিত খোঁজ নিয়েছি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক-সহ দিল্লিতে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে রিপোর্ট দিচ্ছি। সরকার নিশ্চয়ই তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেবে। কারণ এর পরে তো আরও কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ হয়ে আসছে।’’
প্রতিনিধি দলের বিজেপি নেতারা জানান, ছিটের বাসিন্দাদের জন্য যে টিন দিয়ে ঘর তৈরি হয়েছে, তা গরমে অগ্নিকুণ্ড হয়ে যাচ্ছে। শিশুরা, বৃদ্ধরা যে কোনও সময় অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। গাদাগাদি করে লোক থাকছেন। রাস্তঘাট ঠিক নেই। জমির অধিকার ঠিকঠাক তৈরি হয়নি। চাষবাস করা নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। অনেকের বাড়ির লোকজন কেউ কেউ বাংলাদেশের নাগরিক এখনও হয়ে আছেন। এখন না কি বলা হচ্ছে, আবাসন-ফ্ল্যাটবাড়ি তৈরি করে দেওয়া হবে। এটা অবাস্তব চিন্তাভাবনা। গ্রামের লোকজন ফ্ল্যাট বাড়িতে গরু, মোষ, হাঁস-মুরগি নিয়ে কী করে থাকবেন, স্পষ্ট নয়। আসলে আবার আবাসনের নামে টাকা নয়ছয় যে করা হবে না, তার নিশ্চয়তা কোথায়?
ভারত-বাংলাদেশে ছিটমহল বিনিময় চুক্তির পর ওই ২০১টি পরিবার এ পারে আসেন। তাঁদের থাকার পরিকাঠামোর জন্য কেন্দ্রের তরফে টাকা বরাদ্দ হয়। প্রথম থেকে পরিকাঠামো নিয়ে বাসিন্দারা বটেই বিভিন্ন দলের তরফেও প্রশ্ন তোলা শুরু হয়েছে। এই প্রসঙ্গে রাজ্যের উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ অবশ্য অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘কেন্দ্র বরাদ্দ করেছে রাজ্য সরকার প্রশাসনিক স্তরে কাজ করেছে। এতে গরমিল কোথায়! আসলে বিজেপি ছিটমহলের লোকজনকে নিয়ে রাজনীতি করছে চাইছে। তাই বারবার বিজেপি নেতারা এলাকায় যাচ্ছেন, আর ফিরে আসে নানা মনগড়া কথাবার্তা বলছেন।’’