ডিজিটাল রেশন কার্ড বিলির কাজ শেষ না হওয়ায় দক্ষিণ দিনাজপুরে গণবন্টন ব্যবস্থা ব্যাহত হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রেশন দোকান থেকে চাল-গমের সরবরাহ না পেয়ে গ্রাহকদের ক্ষোভের মুখে পড়ে বিপাকে পড়েছেন ডিলারেরাও। দু’সপ্তাহ ধরে এমনই অবস্থা চলায় ক্ষুব্ধ গ্রাহক তথা বাসিন্দারা।
তবে আগামী সপ্তাহ থেকে গ্রাহকেরা রেশনে চাল গমের সরবরাহ পাবেন বলে দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলাশাসক তাপস চৌধুরী আশ্বস্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘জেলায় খাদ্য সুরক্ষা আইন চালুর কার্যক্রমে উপভোক্তাদের মধ্যে ডিজিটাল রেশন কার্ড সম্পূর্ণ বিলি না হওয়া অবধি সাময়িকভাবে ওই সমস্যা হয়েছে। তবে আগামী সপ্তাহ থেকে গ্রাহকেরা বকেয়া দু’ সপ্তাহের প্রাপ্য চাল ও গম সমেত ওই সপ্তাহের বরাদ্দ খাদ্যসামগ্রী একসঙ্গে সরবরাহ পাবেন।’’ জেলার ব্লকগুলিতে প্রায় ৬০ শতাংশ উপভোক্তার মধ্যে ডিজিটাল কার্ড বিলি সম্পূর্ণ হয়েছে বলে জেলাশাসকের দাবি।
তবে একসঙ্গে তিন সপ্তাহের খাদ্য সামগ্রী মজুতের মতো পরিকাঠামো অধিকাংশ রেশন দোকান মালিকের নেই বলে অভিযোগ। দক্ষিণ দিনাজপুর রেশন ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের জেলা সম্পাদক ভূপেশচন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘‘ওই সমস্যার বিষয়ে জেলা খাদ্য দফতরের কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে ব্যবস্থা নিতে আর্জি জানানো হয়েছে।’’ তাঁর দাবি, একমাত্র কুশমণ্ডি ব্লকে ৮৫ শতাংশ উপভোক্তার মধ্যে ডিজিটাল রেশন কার্ড বিলি হয়েছে। বাকি সাতটি ব্লকে কার্ড বিলির হার মাত্র ৩৫ শতাংশ মতো। বালুরঘাট ব্লকে এখনও কার্ড বিলি শুরুই হয়নি বলে তাঁর অভিযোগ। এই অবস্থায় সম্পূর্ণ কার্ড বিলি কবে শেষ হবে তা স্পষ্ট না হওয়ায় রেশনে খাদ্যশস্য বিলি বন্টনে জটিলতার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। জেলা খাদ্য নিয়ামক অমরেন্দ্র রায়ের বক্তব্য, রেশনে গ্রাহকদের কেরোসিন তেল দেওয়া হয়েছে। চাল-গম মজুত রয়েছে। দ্রুত রেশন দোকান থেকে আগের মতোই গ্রাহকদের চালগম বিলি শুরু হবে। পাশাপাশি ডিজিটাল কার্ডও বিলির কাজ চলবে তিনি জানান।
বস্তুত, আগামী ১ এপ্রিল থেকে রাজ্যে প্রথম দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় খাদ্য সুরক্ষা আইন চালুর সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করে রাজ্য সরকার ডিজিটাল কার্ড বিলি শুরু করেছিল। কিন্তু পয়লা এপ্রিলে ওই কাজ সম্পূর্ণ করতে না পারায় নতুন বাংলা বছর অর্থাৎ ১ বৈশাখ থেকে পুরোদমে প্রকল্পটি চালু করা হবে বলে জেলা প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু শুরুতেই উপভোক্তাদের নামের ভুল এবং বদলে যাওয়া রেশন দোকানের ঠিকানাযুক্ত ডিজিটাল কার্ড বিলি করতে গিয়ে বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। পরবর্তীতে কার্ড সংশোধনের সুযোগ আছে বলে প্রশাসন থেকে দাবি করা হলেও কবে বা কী ভাবে তা হবে, স্পষ্ট নয় বলে অভিযোগ।
এ জেলার মোট ১০ লক্ষ ৬৬ হাজার ৬২৯ জন বাসিন্দা খাদ্য সুরক্ষা আইনের আওতায় এসেছেন। খাদ্য দফতর সূত্রের খবর, আগে থেকেই দক্ষিণ দিনাজপুরে বিপিএলভুক্ত ৩ লক্ষ ৮৬ হাজার ৫৮৯ জন এবং অন্ত্যোদয় যোজনার আওতাভুক্ত ১ লক্ষ ৫৪ হাজার ৫৪১ জন রেশন দোকান থেকে সস্তায় চাল ও গম পেতেন। খাদ্য সুরক্ষা আইনের ফলে এপিএল তালিকাভুক্ত ৫ লক্ষ ২৫ হাজার ৪৯৯ জন বাসিন্দা নতুন করে এই প্রকল্পের সুযোগ পাবেন। খাদ্য নিয়ামক অমরেন্দ্রবাবু জানান, খাদ্য সুরক্ষা আইনে অন্ত্যোদয় তালিকা থাকছে। বিপিএলের বদলে বাকি উপভোক্তারা ‘প্রায়োরিটি হাউসহোল্ড’ বলে চিহ্নিত হয়েছেন। অর্থাত অন্ত্যোদয়ভুক্ত ১ লক্ষ ৫৪ হাজার ৫৪১ জন। বাকি ৯ লক্ষ ১২ হাজার ৮৮ জন “প্রায়োরিটি হাউসহোল্ড” বলে তালিকাভু্ক্ত হয়েছেন। গণবন্টন ব্যবস্থা তারা নয়া প্রকল্পের সুবিধা এখনও পাননি। পুরনো রেশন ব্যবস্থাতেও দু’সপ্তাহ ধরে চাল গমের সরবরাহ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ।