treatment

Enclaved area: দু’দেশের সীমা মুছে রোগের ভরসা হাকিম

দেশভাগের ‘কাটা-ছেঁড়ায়’ নিজ ভূমে কার্যত পরবাসী হয়ে বাস করা হিলি সীমান্তের বাসিন্দারা চাইলেই হাতের কাছে ডাক্তার কিংবা ওষুধের দোকান পান না।

Advertisement

অনুপরতন মোহান্ত

হিলি শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০২১ ০৫:৩৮
Share:

কাঁটাতার পেরিয়ে এই গ্রামে চিকিৎসা নিয়ে এখনও দুর্ভোগ। নিজস্ব চিত্র।

দু’দেশের সীমারেখার গন্ডি ছাড়িয়ে আকাশে ভেসে চলেছে বর্ষার মেঘ। নিচে বিস্তীর্ণ সুবজ ধানের জমি। সেখানে জায়গায় জায়গায় পোঁতা রয়েছে ত্রিকোন আকৃতির প্রায় দু’ফুট উচ্চতার সীমান্ত পিলার। যা আলাদা করে দিয়েছে ভারতের হিলি সীমান্তের হাড়িপুকুর এবং বাংলাদেশের বাগমারা—দু’টি গ্রামকে।

Advertisement

বাংলাদেশের দিকে জমিতে মাথা তুলে দাঁড়ানো সবুজ ধানের পাশে সরু রাস্তা থেকে মোটর বাইকের শব্দ ভেসে এল। ঘড়িতে তখন দুপুর আড়াইটে। ওই শব্দ ক্রমশ স্পষ্ট হতেই ভারতের হিলি সীমান্তের হাড়িপুকুর গ্রামের বাসিন্দারা চঞ্চল হয়ে উঠলেন। বাইক এসে থামল লাগোয়া বাংলাদেশের বাগমারা গ্রামে। বাইক থেকে নামলেন ‘হাকিম’। বাগমারার সঙ্গে মিলে গেল হাড়িপুকুর। অনেকেই গেলেন ওই হাকিম দেখাতে। জ্বর, সর্দি, পেটের বেরাম (অসুখ) থেকে কাটা-ছেঁড়া, হাড় ভাঙার মতো যন্ত্রণা সারিয়ে তুলতে হিলি সীমান্তের কাঁটাতারে বন্দি গ্রামবাসীর চটজলদি চিকিৎসায় ভরসা বাংলাদেশের ওই হাতুড়ে চিকিৎসক। যিনি সকলের কাছে ‘হাকিম’ নামেই পরিচিত।

বাসিন্দাদের দেখে ওষুধপত্র দিয়ে হাকিম বাইক নিয়ে ফের রাস্তা ধরে মিলিয়ে যান। সীমান্তের শূন্য রেখা থেকে দেড়শো মিটার দূরে থাকা কাঁটাতারের বেড়ার গেটে পাহারায় থাকা জওয়ানেরা অবশ্য ভাবলেশহীন। নিয়ম অনুযায়ী বিএসএফের করার কিছু নেই বলে জানা গিয়েছে। কেন না, কাঁটাতারে ঘেরাও হয়ে বাংলাদেশের দিকে উন্মুক্ত হিলির ওই গ্রামের মানুষকে মূল ভারতীয় ভুখন্ড হিলি বাজারে প্রবেশের সময় কাঁটাতারের গেটে একবার এবং গ্রামে ঢোকার সময় আর একবার বিএসএফের তল্লাশি ও পরীক্ষার মুখে পড়তে হয়।

Advertisement

দেশভাগের ‘কাটা-ছেঁড়ায়’ নিজ ভূমে কার্যত পরবাসী হয়ে বাস করা হিলি সীমান্তের হাড়িপুকুরের মত ঘাসুরিয়া, উজাল, গোবিন্দপুর, ডুমরন, দক্ষিণপাড়া গ্রামের বাসিন্দারা চাইলেই হাতের কাছে ডাক্তার কিংবা ওষুধের দোকান পান না। গ্রাম থেকে দেড়শো মিটার উজিয়ে কাঁটাতারের বেড়ার গেটে এসে অনুমতি মেলার পর বিএসএফ গেট খোলে। তার পর চার কিমি রাস্তা ধরে হিলি ব্লক সদরে পৌঁছে তবে ডাক্তার দেখানো। সেখান থেকেও বেশির ভাগ সময় আরও দূরে বালুরঘাট হাসপাতালে রেফার করা হয় বলে অভিযোগ। ফলে বাংলাদেশের দিকে উন্মুক্ত ওই গ্রামের মানুষের দৈনন্দিন অসুখ বিসুখে ওপারের হাকিম ভরসা করেই বছরের পর বছর ধরে চলছে।

গ্রামের প্রবীণ আব্দুল মিঁয়ার কথায়, ‘‘করোনার ভয়াল সময়ে ওই হাকিমই ছিলেন ভরসা। উপসর্গ দেখে ওঁর দেওয়া দাওয়াই খেয়ে অনেকে সুস্থ হন। আজও এক-দু’দিন পরই হাকিম আসেন—তখন দু’দেশের সীমানা মুছে যায়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন