Pollution during Kali Puja

আলোর ছলে দূষণ, কে ঘোচাবে এ আঁধার 

উৎসবের আনন্দে মাততে শুধু মাত্র সবুজ বাজি ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট, ২০১৭ সালের বাজি নিষিদ্ধকরণ সংক্রান্ত রায় শিথিল করে।

Advertisement

অরিন্দম ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২৩ ০৮:৩৬
Share:

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

বাংলায় ‘দীপাবলি’ বা হিন্দিতে ‘দিওয়ালি’, যার সংস্কৃত অর্থ ‘প্রদীপের সারি’। অন্ধকার থেকে আলোর পথে যাত্রা। অজ্ঞানতা থেকে জ্ঞানের পথে। সেই যাত্রাপথের একটাই লক্ষ্য, আলোর দীপ্তিতে মুছে যাক এ বিশ্বের সমস্ত আঁধার। দশমী নিশিতে মাতৃমূর্তি নিরঞ্জন বাঙালির মনের অবচেতনে যে বিয়োগ-বিধুর বেদনায় আবিষ্ট হয়, দীপাবলীর আলোক মুগ্ধতা আবার দেখায় তাকে আনন্দের স্বপ্ন। যেন বিচ্ছেদ যন্ত্রণার শেষে আশার আলোর দর্শন। কবির ভাষায়, ‘স্তব্ধ আঁধার নিশীথে/উড়িছে আলোর কণিকা’।

Advertisement

দীপাবলির সঙ্গে আলোর যোগাযোগ চিরন্তন হলেও বাজির সম্পর্ক কিন্তু কোনও ভাবেই প্রাচীন নয়। আলোর উৎস হিসাবেই হয়তো বাজির ব্যবহার। কিন্তু বাজির ব্যবহার সংক্রান্ত আমাদের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা ও পরিবেশবিমুখতা আমাদেরকেই ঠেলে দিয়েছে ভয়ঙ্কর এক দূষণের দিকে, একই সঙ্গে শব্দ ও বায়ুর দূষণ। স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যার মুখোমুখিও হয়েছি আমরা অনেকে। তাই বিচারব্যবস্থা কড়া হাতে নির্দেশ জারি করতে বাধ্য হয়েছে।

উৎসবের আনন্দে মাততে শুধু মাত্র সবুজ বাজি ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট, ২০১৭ সালের বাজি নিষিদ্ধকরণ সংক্রান্ত রায় শিথিল করে। মহামান্য কলকাতা হাই কোর্টের স্পষ্ট নির্দেশিকা, কিউআর কোড আছে এমন সবুজ বাজিই এক মাত্র ব্যবহার করা যাবে আনন্দ উদ্‌যাপনে।

Advertisement

তবে দিনের শেষে সব চাইতে জরুরি কথা হল আমাদের সতর্কতা ও সংবেদনশীলতা। পুলিশ ও প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে নিষিদ্ধ শব্দবাজি ব্যবহার তাৎক্ষণিক মজা দিতে পারে। কিন্তু, ক্ষণিকের এই আনন্দ‌টা হয়তো বয়ে আনবে আগামী দিনের ভয়ের সে দিন, দূষণগ্রস্ত পৃথিবীর। আমরা দেখি বিকারগ্রস্ত প্রবৃত্তি নিয়ে নিরীহ পথ-পশুদের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয় আগুনের গোলা, হয়তো খেলার ছলেই বা অসুস্থ মানসিকতা নিয়ে। দিনের শেষে কিন্তু এটা অপরাধ। আইনের চোখে, সমাজের চোখেও।

এ ব্যাপারে প্রশাসন বা পুলিশ সক্রিয় হলেও, সাধারণ মানুষকে আরও বেশি সচেতন হতে হবে। দীপাবলির রাতে যে সব বাজি পোড়ানো হচ্ছে, তার বর্জ্য, তার ধোঁয়া, তার বিষাক্ত পোড়া উপাদান পরদিন শহরের রাস্তায় পড়ে থাকবে। বাতাসে উড়বে সেই বিষ। এই দূষণ কে আটকাবে? আগামী কয়েক দিন এই বাজির ধোঁয়ার জেরে ভোরের বাতাস ভারী থাকবে। বারুদের গন্ধও থাকবে। সেই দূষণ-বিপন্নতা ও সর্বনাশ থেকে আমি-আপনি ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের, আমাদের পোষ্যেদর রক্ষা করব কী করে? প্রশ্নটা আমাদের নিজেদের দিকেই ছুড়ে দেওয়া উচিত।
(শিক্ষক, জলপাইগুড়ি)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন