হেলমেট? থোড়াই কেয়ার মালদহের

কোথাও গোলাপ ফুল দিয়ে গাঁধীগিরি হচ্ছে. কোথাও আবার হেলমেটবিহীন মোটোরবাইক চালকদের নতুন ঝাঁ চকচকে হেলমেটই পরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কোনও কোনও জেলায় পেট্রোল পাম্পগুলি থেকে সচেতন করা হচ্ছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মালদহ শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৬ ০২:৫৯
Share:

নিজের মাথার খেয়াল তো নেই-ই। স্ত্রী-সন্তানেরও নয়। মঙ্গলবার রায়গঞ্জের বকুলতলায় তোলা ছবি।

কোথাও গোলাপ ফুল দিয়ে গাঁধীগিরি হচ্ছে. কোথাও আবার হেলমেটবিহীন মোটোরবাইক চালকদের নতুন ঝাঁ চকচকে হেলমেটই পরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কোনও কোনও জেলায় পেট্রোল পাম্পগুলি থেকে সচেতন করা হচ্ছে। কিন্তু এ সব কিছুর মধ্যে ব্যতিক্রম যেন মালদহ জেলা।

Advertisement

গোটা উত্তরবঙ্গেই পেট্রোল পাম্প এখন হেলমেটবিহীন মোটরবাইক আরোহীদের জন্য কার্যত বন্ধ। কয়েকটি পাম্পে পেট্রোল দিচ্ছে ঠিকই, তা-ও লুকিয়ে চুরিয়ে। অনেকেই পুলিশ এবং সংবাদমাধ্যমের ভয়ে সিঁটিয়ে রয়েছেন। মালদহ জেলা একমাত্র ব্যতিক্রম।

এই জেলায় পেট্রোল পাম্প তো অনেক দূর, রাস্তাতেই খোলা মাথায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন বাইক-আরোহীরা। বাইক যাচ্ছে, আসছে। চালক থেকে সব আরোহী, কারও মাথাতেই হেলমেট নেই। এবং সামনে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশও কিছু বলছে না। মালদহে এখনও চেনা ছবি এটাই। মঙ্গলবারও তার ব্যতিক্রম হল না।

Advertisement

এই ছবি মালদহ শহরে। এই ছবি ইংরেজবাজারে। এই ছবি জেলার অন্যত্রও। আর পাম্প মালিকরা তো স্পষ্টই বলে দিচ্ছেন, হেলমেট না পরলে তেল দেওয়া হবে না— এমন নির্দেশ আমরা পাইনি। পেলেও কতটা মেনে চলতে পারবেন, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে অনেকে মনে।

অথচ জেলা পুলিশ বলছে, জেলার সমস্ত পাম্পে গিয়েই হেলমেট ছাড়া পেট্রোল নয়, এই বিধি কার্যকর করার ব্যাপারে জানানো হয়েছে। পুলিশের আরও দাবি, হেলমেট ছাড়া বাইক আরোহীদের জরিমানা করার পাশাপাশি সচেতনতার কাজও জারি রয়েছে জেলা জুড়ে। জেলা সদর ট্রাফিক পুলিশের দাবি, চলতি মাসের পয়লা তারিখ থেকে এ পর্যন্ত, অর্থাৎ গত ১২ দিনে বিনা হেলমেটে বাইক চালানোর দায়ে ৩৬৯টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। জরিমানা আদায় করা হয়েছে ১ লক্ষ ৪ হাজার ১৫০ টাকা।

হেলমেট ছাড়া পেট্রোল নয়— মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণার পর থেকেই জেলায় জেলায় তৎপরতা বাড়তে শুরু করেছে। মুখ্যমন্ত্রী প্রথমে এই নিয়ম কলকাতায় চালু করতে বলেছিলেন। জেলার পুলিশ অবশ্য বিষয়টি নিয়ে প্রথম থেকেই চিন্তাভাবনা শুরু করে। এর বড় কারণ, হেলমেট নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর প্রচারে কান দেন না বেশির ভাগ মানুষ। বরং পেট্রোল চাইতে গিয়ে না শুনলে টনক নড়বে।

এর সঙ্গে শুরু হয় ধরপাকড়। জরিমানাও। জলপাইগুড়ি জেলায় তো পুলিশ সুপার মঙ্গলবার স্পষ্ট করে দিয়েছেন, হেলমেট না পরে বাইকে চাপলে পুলিশকেও ছাড় দেওয়া হবে না। জরিমানার সঙ্গে তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।

এর পাশাপাশি পথে নেমে সরাসরি সচেতনতার প্রচারও শুরু করেছেন অনেকে। কোচবিহারে খোদ শাসক দলের নেতা-কর্মীরাই গাঁধীগিরিতে সামিল হয়েছেন। সোমবার হেলমেটহীন আরোহীদের হাতে তাঁরা তুলে দিয়েছেন গোলাপ ফুল ও নতুন হেলমেট।

মালদহে কিন্তু এমন কোনও ছবির দেখা নেই। পুলিশ যতই বলুক, এখানে মঙ্গলবারই একই ছবি। পুলিশের সামনেই বিভিন্ন এলাকায় দাপিয়ে বেড়িয়েছেন বাইক-আরোহীরা।

এই ছবি যেমন জেলা সদর ইংরেজবাজার শহরের রবীন্দ্র অ্যাভিনউ, মকদমপুর রোড, বিএস রোড, নেতাজি রোড, মনস্কামনা রোড, স্টেশন রোডে দেখা গেল, তেমনই চোখে পড়ল ট্রাফিক পুলিশের সদর দফতর রথবাড়ি এলাকাতেও।

ওই বাইক চালকরা বিভিন্ন পাম্প থেকে বিনা হেলমেটে তেলও কিনেছেন। বিশেষ করে এই জেলায় যুব সমাজের মধ্যে হেলমেটে পড়ার কোনও অভ্যাসই গড়ে ওঠেনি।

গ্রামেগঞ্জে অবস্থা আরও মারাত্মক। সেখানে হেলমেটের বালাই থাকে না। গ্রাম থেকে কেউ এলে শহরে ঢোকার মুখে পুলিশের ভয়ে হেলমেট মাথায় দেয়।

জেলার বাসিন্দারাই বলেন, এখানে সচেতনতার ভীষণ অভাব রয়েছে। নিয়ম ভাঙাটাই এখানে যেন নিয়ম। আর কি বলছে পেট্রোল পাম্পগুলি? নর্থ বেঙ্গল পেট্রোল ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের মালদহ শাখার সম্পাদক উজ্জ্বল চৌধুরী বলেন, নো হেলমেট নো পেট্রল কার্যকর করা নিয়ে আমাদের কাছে কোনও লিখিত নির্দেশ আসেনি। তা ছাড়ে পেট্রোল দিতে না চাইলে কেউ যদি আমাদের উপরে চড়াও হয়, তা হলে নিরাপত্তা কে দেবে?

এই একই আশঙ্কা অন্য জেলাতেও আছে। কিন্তু কোথাও এমন যুক্তি শোনা যায়নি। পুলিশ সুপার অবশ্য বলেছেন, সব পাম্পকেই নির্দেশ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। জেলাশাসক শরদ দ্বিবেদী বলেন, আমরা সচেতনতায় জোর দিচ্ছি।

কিন্তু এ সবের ছাপ এ দিন অন্তত ছিল না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন