হাতির হামলায় জেরবার ডুয়ার্স

দমনপুরে মৃত এক, ক্যারন চা বাগানে ভাঙল বাড়ি

ধান পাহারা দেওয়ার সময় স্ত্রীর সামনেই স্বামীকে পিষে মারল দাঁতাল। বৃহস্পতিবার রাতে ঘটনাটি ঘটে দমনপুর রেঞ্জের বাংলা কলোনি এলাকায়। হাতির উপদ্রব থেকে প্রতি রাতেই এলাকার বাসিন্দারা ধান পাহারায় নামেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আলিপুরদুয়ার ও মালবাজার শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৬ ০২:৪০
Share:

হাতির হামলায় ক্যারন চা বাগানে ভেঙেছে বাড়ি। দীপঙ্কর ঘটকের তোলা ছবি।

ধান পাহারা দেওয়ার সময় স্ত্রীর সামনেই স্বামীকে পিষে মারল দাঁতাল। বৃহস্পতিবার রাতে ঘটনাটি ঘটে দমনপুর রেঞ্জের বাংলা কলোনি এলাকায়। হাতির উপদ্রব থেকে প্রতি রাতেই এলাকার বাসিন্দারা ধান পাহারায় নামেন। বৃহস্পতিবার রাত আটটা নাগাদ চেকো বিটের জঙ্গল থেকে মস্ত দাঁতাল বেড়িয়ে ফের তাণ্ডব চালায়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, তারপরে বারবার বন দফতরকে জানিয়েও কোনও ফল হয়নি। গত ১৫-২০ দিন ধরে লাগাতার একটি দাঁতাল এলাকায় তাণ্ডব চালালেও দেখা মেলে না বনকর্মীদের।

Advertisement

বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের ডিএফডি অপূর্ব সেন বলেন, “হাতির হামলায় হীরালাল ওরাঁও (৫০) নামে এক ব্যক্তি মারা গিয়েছেন। নিয়ম মেনে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। তা ছাড়া, এলাকায় পটকা ও সার্চ লাইট দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।”

বৃহস্পতিবার গভীর রাতে নাগরাকাটা ব্লকের ভুটানের সীমান্তবর্তী ক্যারন চা বাগানে একটি দাঁতালের হামলায় একটি দোকান-সহ ছ’টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাড়ি ও দোকান থেকে চাল, লবণ, ডালের বস্তাও বের করে নিয়ে আসে দাঁতালটি। হাতির হামলায় জখম হন দুই চা শ্রমিককেও। বাগানের গেট লাইন, মাতুলাইন ও হাসপাতাল লাইনে দাপিয়ে বেড়ায় দাঁতালটি। গেটলাইনে দু’টি, মাতু লাইনে তিনটি এবং হাসপাতাল লাইনে একটি দোকান তছনছ করে দাঁতালটি। বাগেনের ম্যানেজারের বাংলোর মূল গেট ভেঙে দেয় সেটি। সহকারি ম্যানেজারের বাংলোর উঠোনের গাছপালাও নষ্ট করেছে দাঁতালটি। বাগানের সহকারি ম্যানেজার প্রিয়ব্রত ভদ্র বলেন, ‘‘চলতি সপ্তাহে এই নিয়ে দু’বার ক্যারম বাগানে বুনো দাঁতাল ঢুকে পড়ল।’’ একটিই দাঁতাল পরপর হামলা চালাচ্ছে বলে জানান তিনি। কখনও ভুটান লাগোয়া জঙ্গল থেকে হাতি ঢুকছে আবার কখনও ডায়নার জঙ্গলের দিক থেকেও দাঁতাল চলে আসছে। রোজ রাতেই দাঁতালের ভয়ে সিটিয়ে থাকতে হচ্ছে বলে জানালেন বাগানের এক শ্রমিক। অন্যদিকে মেটেলির মূর্তি লাগোয়া ধূপঝোড়ায় দাঁতালের শুঁড়ের গুঁতোয় গুরুতর জখম হয়েছেন অভিরাম ওঁরাও নামে এক বৃদ্ধ। গত বৃহস্পতিবার রাত দশটায় মঙ্গলবাড়ির দিক থেকে হেঁটেই বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। প্রতিবেশীরা উদ্ধার করে তাঁকে চালসার মঙ্গলবাড়ি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে আসলে সেখান থেকে তাঁকে মালবাজার মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হয়।

Advertisement

চেকো বিটের জঙ্গল লাগোয়া উত্তর পানিয়াল গুড়ি এলাকায় বর্ষার মরসুমে ধান পাহারা দেওয়ার সময় গ্রামবাসীদের ভরসা টর্চ ও লাঠি। বাসিন্দাদের অভিযোগ, বনদফতর থেকে পটকা বা সার্চ লাইট মেলে না। হাতি ঢুকলে ফোন করলেও দেখা মেলে না বনকর্মীদের। এক বনাধিকারক জানান, অল্প সংখ্যক কর্মী রয়েছেন। সারা রাত ধরে বিভিন্ন এলাকায় হাতি তাড়াতে হয়। রেল লাইনের ধারে হাতি চলে আসে। তাদের খেদিয়ে জঙ্গলে ঢোকাতে হয়। ফল সব সময় সব জায়গায় যাওয়া সম্ভব হয় না।

মৃতের স্ত্রী সন্ধ্যা ওরাঁও জানান, মাত্র কয়েক বিঘা জমিতে চায়না বোর লাগিয়েছিলেন। এটাই সারা বছরের ভরসা। ওই ধান বিক্রি করে সংসার চলে। গত কয়েক দিন ধরে হাতি এসে ধান খেয়ে যাচ্ছিল। বৃহস্পতিবার রাত আটটা নাগাদ ফের হাতি গ্রামে ঢোকে। তিনি বলেন, ‘‘লোকজনের চিৎকার শুনে আমরা দু’জনে বার হই। বাড়ির কাছেই টিনের চালার নীচে আমার স্বামী আগুন জ্বালছিল। আমি সুপারি গাছের খোল নিয়ে সেখানে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ আমার স্বামীর পেছন থেকে হাতিটা এসে শুঁড় দিয়ে টেনে তোলে। তারপরে মাটিতে আছাড় মারে। তারপর পা দিয়ে পিষে দেয়। আমি দেখে চিৎকার করি। আশেপাশের লোকেরা ছুটে এলে হাতিটি জঙ্গলে ঢুকে পড়ে।’’

এলাকার বাসিন্দা দেবেন্দ্র বর্মন, ধীরেন বর্মন, খোকন বর্মনরা জানান, ধানের লোভে দাঁতাল হাতিটা রোজ সন্ধ্যা হলেই তাণ্ডব চালাচ্ছে। কয়েক বিঘা জমির ধান সাবাড় করেছে। বনদফতর বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। তাঁদের দাবি, বৃহস্পতিবার রাতে হাতি হীরালাল ওরাঁওকে পিষে মারার প্রায় দেড় ঘন্টা পর এলাকায় বনকর্মীরা আসেন। আলিপুরদুয়ার নেচার ক্লাবের চেয়ারম্যান অমল দত্ত বলেন, “ বনদফতর ও স্থানীয় বাসিন্দাদের উচিত জঙ্গলে হাতির খাদ্য শৃঙ্খলা বজায় রাখার। তাহলে মানুষ হাতির সংঘাত কমানো সম্ভব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন