তখনও ঘাটে প্রতিমা এসে পৌঁছয়নি। তার আগেই হাজার হাজার মানুষ ভিড় করেছেন সেখানে। নদীতে সেই সময় হাঁকডাক চলছে শত নৌকার। কেউ পরিবার নিয়ে চেপে বসেছেন তাতে। কেউ বন্ধুদের সঙ্গী হয়ে সওয়ারি হয়েছেন নৌকায়। মঙ্গলবার বিসর্জনের মেলায় গিয়ে মাথাভাঙার সুটুঙ্গা নদীতে এ ভাবেই নৌকাবিহারে মেতে উঠলেন বাসিন্দারা। দুপুরের পর থেকেই ঘাটে আসতে শুরু করে প্রতিমা। তার মধ্যে কিছু প্রতিমা নৌকায় বসিয়ে নদীতে ঘুরিয়ে বিসর্জন দেওয়া হয়। রাজ্যের বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মনও সামিল হয়েছিলেন নৌকাবিহারে। তিনি বলেন, “এটা মাথাভাঙার ঐতিহ্য। ওই দিন নৌকা বিহারে অন্যরকম আনন্দ হয়। যারা সেটা উপভোগ করেন, তাঁরাই বুঝতে পারেন।”
মাথাভাঙা পুরসভার চেয়ারম্যান লক্ষপতি প্রামাণিক জানান, শতবর্ষ পুরনো ওই বিসর্জনের মেলা। তিনি বলেন, “নদীর দুই ধারে লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হয়। নদীর মধ্যে ঘুরে বেড়ায় শতাধিক নৌকা। এমনটা উত্তরবঙ্গের আর কোথাও আছে বলে আমার জানা নেই।” পুরসভার চেয়ারম্যান জানান, ওই মেলা আকারে অনেক বড় হয়েছে। মানুষের সমাগমও বাড়ছে। কিন্তু নৌকায় করে প্রতিমা বিসর্জনের রেওয়াজ অনেকটাই কমে গিয়েছে। তিনি বলেন, “আগে কুড়িটির বেশি প্রতিমা নৌকায় চাপিয়ে নদীতে ঘুরে বেড়ানোর পরে বিসর্জন দেওয়া হত। এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে পাঁচে। আর্থিক কারণ পাশাপাশি নৌকায় আয়োজকদের সব সদস্য উঠতে পারে না। সে কারণে এমনটা হতে পারে।”
প্রশাসন সূত্রের খবর, নৌকাবিহার করে বিসর্জনে মেতে ওঠা যেমন আনন্দের, পাশাপাশি সেখানে ঝুঁকি রয়েছে। ছোট ছোট ডিঙি নৌকায় যাত্রী বেশি চেপে গেলে যে কোনও সময়, তা দুর্ঘটনার শিকার হতে পারে তা। সে দিকে তাকিয়ে নিরাপত্তার কড়া ব্যবস্থা করা হয়। বড় নৌকা ও ডিঙি নৌকা দু’টিতেই সওয়ারি নেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক করে দেওয়া হয়। বারবার মাইকে তা প্রচার করা হয়। ওয়াচ টাওয়ার বানিয়ে সেখান থেকে নজরদারিও করা হয়। যাতে কোথাও কোনও অসুবিধে হলেই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়। পাশাপাশি মেলার দিন সেখানে ডুবুরি রাখা হয়। যাতে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলেই ঊদ্ধার কাজে তাঁরা ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে।
প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, “দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার সমস্ত প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়।” বাসিন্দারা জানান, ওই মেলায় সামিল হওয়ার জন্য সিতাই, শীতলখুচি থেকে নৌকা নিয়ে হাজির হন মাঝিরা। সকাল দশটার পর থেকেই লোক সমাগম শুরু হয়ে যায় সেখানে। মাথাভাঙা-১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আবু তালেব আজাদ বলেন, “নানা জায়গা থেকে মাঝিরা আসেন। তাঁদের বড় আয় হয় ওই দিন। পাশাপাশি আমরা সবাই মিলে নৌকা চেপে যে আনন্দ করি, সেটা বড় পাওনা।” এ দিন কোচবিহার ঘাটপাড়ে তোর্সা নদীতেও বিসর্জনের মেলা বসে। শহর এলাকার বেশ কিছু প্রতিমা এ দিন বিসর্জন দেওয়া হয়েছে ।